ঝাড়খন্ড প্রদেশের ভারপুর জেলার বাসিন্দা বৃহস্পতি পন্ডিত। বাবরি চুলে কৃষ্ণকায় পেটা শরীরের মানুষটির নেই কোনো পাসপোর্ট। ধার ধারেনি সরকারি ভিসার। রাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে ঢুকে পড়ে এই দেশে। ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে যায় মাগুরাতে। কিন্তু কেউ বোঝে না তার ভাষা। তাই রোহিঙ্গা সন্দেহে উৎসাহী এলাকাবাসী পুলিশে তুলে দেয় তাকে। ঘটনাটি ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বরের।
এরই মধ্যে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। স্থানীয় আদালত বাংলাদেশ কন্ট্রোল অ্যাক্ট আইনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ২০১৮ সালের ২৮ মে তাকে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু তার আগেই সাড়ে ৬ মাসের কারাবাস শেষ হয়েছে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাট সীমান্তে চার ভারতীয় নাগরিকসহ আটক ৫
যশোর কারাগারে ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু
এদিকে আদালতের রায় প্রদানের পর আরও ৩০ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বৃহস্পতি পন্ডিত ফিরতে পারেননি তার গ্রামে।
মাগুরা জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতি ঝাড়খণ্ডের ভারপুর জেলার কাচুয়া থানার ধানরে গ্রামের পুটি পন্ডিতের ছেলে বলে পুলিশের কাছে তার পরিচয় দেয়। সাজার মেয়াদ শেষ হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার বিষয়টি ভারতীয় দূতাবাসকে জানানো হয়েছিল। এরপর গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থাঙসিং মাং নামে একজন ডিপ্লোম্যাট এবং দীপক দেবনাথ নামে একজন সহকারী কনস্যুলার মাগুরা কারাগারে বৃহস্পতি পন্ডিতের সাথে দেখা করে ফিরে যায়। এরপর চলে গেছে প্রায় আরও এক বছর। বৃহস্পতির কারাবাস ক্রমেই দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।
মাগুরা কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কারা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত তিন বছরের মধ্যে একবারই তার জ্বর হয়েছিল। তখন তিনি স্বাভাবিক খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু জেলা কারা কর্মকর্তা তায়েফ উদ্দিন তার জন্য অতিরিক্ত খাবার বরাদ্দ করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও ভিনদেশি হওয়ায় তার সাথে সকলেই ভালো আচরণ করে থাকে। সুঠামদেহি বৃহস্পতি বেশ নরম ও হাসিখুশি মনের মানুষ। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই একা একা থাকতে পছন্দ করেন।
আরও পড়ুন: কানাইঘাট সীমান্তে মাদকসহ ভারতীয় নাগরিক আটক
পিয়াইন নদীতে মিলল ভারতীয় নাগরিকের লাশ
লালমনিরহাটে নদী থেকে ভারতীয় নাগরিকের লাশ উদ্ধার
তবে বৃহস্পতি মুখে কিছু শব্দ উচ্চারণ করলেও তার সবই দুর্বোধ্য। প্রচলিত হিন্দি নয়। যে কারণে কারও সাথেই তার ভালো ভাব গড়ে ওঠেনি বলেও তিনি জানান।
কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মাগুরা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সাদ্দাম হোসেন জানান, ভারতীয় দূতাবাসকে বিষয়টি অবহিত করার পরও তারা এই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে নেয়নি। তাকে কারাগার থেকে বের করেও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা প্রয়োজন।