দেশের ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (১ম পর্যায়) শীর্ষক একটি কর্মসূচির আওতায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
সরকারি সূত্র মতে, ৩৭৫ উপজেলা ও দুটি সিটি করপোরেশনে ৫৬১টি প্যাকেজের আওতায় প্রায় ৪০৮৬ দশমিক ৬২২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৮৮টি ছোট নদী, ৩৫২টি খাল এবং আটটি জলাভূমি পুনরায় খনন করা হবে। খনন করা মাটির পরিমাণ হবে ১৫ দশমিক ১৫ কোটি ঘনমিটার।
এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলো, ৫ দশমিক ২০ হেক্টর এলাকার জলাবদ্ধতা সরিয়ে বন্যা ও জলবায়ু-পরিবর্তন থেকে রক্ষা করা, ১ দশমিক ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে ৩ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, ১৫ হাজার জেলের মাছ চাষ, ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ৩ দশমিক ৬৫ লাখ হেক্টর জমির বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার নৌপথ দিয়ে নদী যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করা।
এদিকে, সরকার গত বছরের ১২ ডিসেম্বর থেকে ছোট নদী, খাল এবং জলাভূমির তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৭৪টি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ এবং অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে ৫৯৩ দশমিক ১২ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি ছোট নদী ও খালগুলোতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বজায় রাখা সম্ভব হবে,’ নথিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (২য় পর্যায়) শীর্ষক আরও একটি প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে।
নথির তথ্য অনুসারে, এ প্রকল্পের আওতায় সরকার প্রতিটি উপজেলায় পাঁচটি নদী, খাল ও জলাভূমি পুনঃখনন করবে। প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩৮৮৫ দশমিক ৩৬৩ কিলোমিটার নদী, খাল এবং জলাভূমি পুনঃখনন সম্ভব হবে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ দখল থেকে নদী উদ্ধারে সরকার খুব গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
সরকার যেহেতু নৌপথের মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ওপর জোর দিচ্ছে, তাই দেশজুড়ে ছোট এবং বড় নদীগুলোর নাব্যতা বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, ‘সরকার ইতোমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ৬৪টি জেলার (১ম এবং ২য় ধাপের) প্রকল্পের মধ্যে নদী, খাল ও জলাভূমির পুনঃখনন শুকনো মৌসুমে বর্ষার পানি সংরক্ষণে খুব সহায়ক হবে।
‘এর মাধ্যমে আমরা ভূগর্ভে পানি জমা করতেও পারব যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ যেখানে অধিকাংশ এলাকা পানি দ্বারা বিস্তৃত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ বিশেষ করে বর্ষার সময় নদীপথে চলাচলের ওপর নির্ভর করায় নদী ও খালগুলো পুনরায় খনন খুব গুরুত্বপূর্ণ।