অতিবর্ষণ ও অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে বেহালদশায় পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙাচোরা সড়কে কমে যাচ্ছে যান চলাচল, প্রতিনিয়ত যানবাহন ভেঙে রাস্তায় পড়ে থাকছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পরিবহন মালিকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে প্রায় ১৫২ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সড়ক বিভাগের আওতায় ২৫ কিলোমিটার এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ১২৭ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এতে জেলার কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
ঝিনাইদহ জেলায় এলজিইডির আওতায় মোট কাঁচা সড়কের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ২৯৪ কিলোমিটার এবং পাকা সড়কের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৩৮৭ কিলোমিটার।
এ ছাড়া সড়ক বিভাগের আওতায় জেলায় ৪০৬ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়া এবং টানা বর্ষণের পানির চাপে বিভিন্ন সড়কের অংশ ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
এলজিইডির ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার, হরিণাকুন্ডুতে ১৮ কিলোমিটার, কালীগঞ্জে ১২ কিলোমিটার, কোটচাঁদপুরে ১২ কিলোমিটার, মহেশপুরে ২০ কিলোমিটার এবং শৈলকুপায় ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: রংপুরে বাঁশের মই বেয়ে সেতু পারাপার, চরম দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ
সড়ক বিভাগের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কের হাটগোপালপুর, ডাকবাংলা বাজার, আরাপপুর ইন্টারসেকশন থেকে আলহেরা, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কের ভাটই, শেখপাড়া ও গাড়াগঞ্জ সড়ক এবং আমেরচারা-তেলটুপি রাস্তা। এগুলো ভাঙাচোরা হয়ে একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন সড়কও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সময় নিয়ন্ত্রক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কগুলোর বেহালদশা তৈরি হয়েছে। বর্ষণে দুরবস্থা আরও তীব্র হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়কের ইট উঠে গিয়ে এখন কাদা-পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। ঢাকাগামী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগী ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। দূরপাল্লার গাড়িগুলোর বেশির ভাগ এখন গ্যারেজে মেরামত চলছে।’
যাত্রীসেবা কমিটির নেতা সাব্বির আহমদ জুয়েল জানান, সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ দ্রুত না নিলে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো প্রতিটি খাত স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঝিনাইদহ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন জানান, সড়ক মেরামতে অতিরিক্ত কোনো বরাদ্দ নেই। প্রতি বছর যেমন আসে, তেমনই এ বছর পাওয়া গেছে। বৃষ্টি কমলে ভাঙাচোরা সড়ক মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জিয়াউদ্দীন জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখনো কোনো আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। আগের বরাদ্দ দিয়ে ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে।