ঢাকা, ০৮ আগস্ট (ইউএনবি)- পেঁপে পাতার জুস ডেঙ্গু প্রতিষেধক নয় উল্লেখ করে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ পরামর্শ দিয়েছেন যে ডেঙ্গু রোগী প্রচুর পরিমানে পানি ও যেকোনো ফলের জুস খেলে ভালো উপকার পাবেন।
ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছরে আমরা বিভিন্ন জার্নাল প্রকাশ করেছি এবং বিদেশে অনেক প্রেজেন্টেশনে অংশ নিয়েছি; কিন্তু পেঁপে পাতার জুস খাওয়ার কথা (রক্তের প্লাটিলেট বাড়ানোর জন্য) কখনো শুনিনি।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আজাদ মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে কেউ আক্রান্ত হলে কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করার কথা বলেন।
তার পরামর্শ হলো- ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার প্রথমদিন থেকেই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শুধু প্যারাসিটামল খেতে হবে এবং মশারির ভেতরে থাকতে হবে।
এই চিকিৎসক রোগীদের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতে বলেন।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস এবং বাসা-বাড়ি পরিষ্কার রাখার কথা বলেন তিনি।
এদিকে ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিনের মতে ডেঙ্গু এখনো মহামারি আকার ধারণ করেনি। দেশের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য প্রকৃতি, পরিবেশ, আবহওয়া এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থার ঘাটতিসহ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন তিনি।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ডেঙ্গু রোগকে মহামারি ঘোষণা করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি নির্দিষ্ট সূচক রয়েছে। একটি দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় সংক্রমণের সংখ্যা গণনা করা হয়।
‘ডেঙ্গু সংক্রমণ এখনও দেশে মহামারি হয়ে ওঠেনি,’ বলেন তিনি।
ঢামেকের পরিচালক বলেন, হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যাও তাৎপর্যপূর্ণ। ‘অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা অনেক রোগীকে ছাড়পত্র দিতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি বলেন, চিকিৎসকরা ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে জাতীয় এবং মানবিক দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেন।
ঢামেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক মেয়ের মাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, তার মেয়ে মারাত্মক ব্যথার কথা জানায়। ‘তিন দিন পর সে স্কুলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শিক্ষকরা তাকে একটি স্থানীয় হাসপাতালে নেয় এবং পরে আমি তাকে ঢামেকে ভর্তি করি।’
তিনি আরও বলেন, তার মেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে এবং হাসপাতালে সবসময় চিকিৎসক ছিলেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি
আগস্ট মাসের প্রথম সাত দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৭৯ জন।
আর মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৪২৮।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য জানিয়েছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, পুরো জুলাই মাসে সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ হাজার ৬৫০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। প্রাণ হারান ১৫ জন। আর, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সাত দিন হাসপাতালে ভর্তি হন ১৫ হাজার ৮৭৯ জন এবং মারা গেছেন তিনজন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে সরকার। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।