পাটুরিয়ার তিনটি ঘাটের পন্টুন এলাকায় এখনই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এ নৌপথটির। একই অবস্থা আরিচা নৌবন্দরেও। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিলীন হয়ে যাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আরিচা নদীবন্দরের বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এরই মধ্যে নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং নদীতে পানি বাড়তে থাকায় আরিচার নিহালপুর থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন। যমুনা নদীর তীরের আরিচা ঘাট এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভেঙে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে অন্তত ১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আরিচা নদীবন্দরের বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য বাড়িঘর।
আরিচায় নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে হুমকিতে পড়বে ঐতিহ্যবাহী আরিচা নদীবন্দর, শিবালয় বন্দর হাট-বাজার, আবহাওয়া অফিস, পিসিপোল নির্মাণ প্ল্যান্ট, কাশাদহ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি, নদী পারের পানির হাউজ, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি অফিস কমপ্লেক্স, নির্মাণাধীন ড্রেজিং ইউনিট অফিস, শিবালয় থানা কমপ্লেক্স, মসজিদ ও মসজিদ মার্কেট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, জেলা পরিষদের সরকারি ডাকবাংলো এবং স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও এলাকার বহু বাড়িঘর। উজানে ভাঙন শুরু হলে ভাটিতে পাটুরিয়া ফেরিঘাটও নদী গর্ভে বিলীন হবার উপক্রম হবে।
আরিচা নৌবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, নিজ উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু ঠেকানো যাচ্ছে না। সরকারিভাবে ভাঙন রোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে পুরো নৌবন্দরই বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, শুকনা মৌসুমে আরিচা বন্দরের তীর সংলগ্ন নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা হয়। এতে বর্ষা শুরু হলেই ভাঙন শুরু হয়। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড শুকনা মৌসুমে ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিলে বর্ষায় এমন ভাঙন হত না।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘সাধারণত জুন মাসের শেষের দিকে নদীতে পানি বাড়ার কথা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে হঠাৎই পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে পানি কমে যাবে। এরই মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ৬০ লাখ টাকার জিও ব্যাগ ফেলার অনুমোদন হয়েছে। জিও ব্যাগে বালু ভরার কাজ চলছে। শিগগিরই নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে আপাতত ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে, যমুনার পাশেই পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়। এরই মধ্যে পাটুরিয়ার তিন, চার ও পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় তীব্র ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে ঘাটগুলো।
ভাঙন কবলিত ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদিক। ভাঙন রোধে প্রকৌশল বিভাগকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনার ফলে ঘাট এলাকায় কিছু বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্ষার পরপরই যমুনার পূর্ব তীর সংরক্ষণে স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মেগা প্রকল্প অনুমোদন হবে। সে ক্ষেত্রে পূর্ব তীরে জামালপুর থেকে শুরু করে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ হয়ে পদ্মা সেতু পর্যন্ত মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটও সংরক্ষণ হবে।’