বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে পরিচিতি অর্জন করেছে রাজশাহী শহর। এর ফলে নগরবাসী দুর্গন্ধমুক্ত নির্মল বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন।
রাজশাহীকে নানা নামে ডাকা হয়, সবুজ নগরী, শিক্ষা নগরী, শান্তির নগরী, রেশম নগরী বা সিল্ক সিটি।
রাজশাহীর পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রিনা পি সোয়েমারনো তার রাজশাহীতে প্রথম সফরে এসে বলেন, ‘এখানকার চমৎকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ। এখানকার মানুষদের ভালো লেগেছে। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।’
সম্প্রতি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে নগর ভবনে বৈঠকে তিনি এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।
স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে দেশের সব শহরের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী শহর। নগর উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও জিরো সয়েল প্রকল্প গ্রহণের কারণেই এ সাফল্য বলে জানায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
রাজশাহী নগরীর সিটি বাইপাস এলাকা। ছবি: ইউএনবি
রাসিক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী শহর। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এ মানের ধারাবাহিকতা এখনো রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মান নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশন করে না। জিরো সয়েল প্রকল্পের কারণে এ মান অর্জন সম্ভব হয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব ঠেকাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাসিক। বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষুদ্র ধুলিকণামুক্ত হয়েছে নগরী। এর পাশাপাশি পুরো নগরীর সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরো নগরীর সড়ক বিভাজক সবুজায়নের আওতায় নেয়া হয়েছে। নগররের বেশিরভাগ অংশের সড়ক সুবজায়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের আওতায় রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, নগরীর প্রধান সড়ক বিভাজক ও সড়ক দ্বীপে ৩৫০টি পামগাছ লাগানো হয়েছে। ২০ ফুট অন্তর লাগানো হয়েছে এসব গাছ। এর ভেতর লাগানো হয়েছে রঙ্গন, কাঠ করবি, চেরি ও এ্যালামুন্ডা। সব নিচে লাগানো হয়েছে সবুজ হেজ। এরপর কাঠ ও বাঁশের আদলে তৈরি করা হয়েছে কনক্রিটের বেড়া। সব মিলিয়ে এখন দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে পুরো নগরী।
তিনি জানান, পুরো বিষয়টি দেখভাল করছে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। নগরীর সবুজ ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মীরা। শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে অবৈধ পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে নগরীর ফুটপাথের ওপর সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ করেছে রাসিক।
রাজশাহী নগরীর পদ্মা গার্ডেন
নগরীর দরগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজশাহী নগরের পদ্মা নদীর পরিত্যক্ত পাড়ে বর্তমানে পরিকল্পিত পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। টাইলস দিয়ে হাঁটার পথ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এটি এখন পদ্মার নির্মল বাতাসের একটি উৎস। নগরীর যেকোনো জায়গায় প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়া যায়। এছাড়া রাজশাহী নগরের চারদিকে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর মধ্যে ডিজেলচালিত অটোরিকশার বদলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এতে সবুজে গাছপালার ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না।
পরিচ্ছন্ন নগরীর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ করা হয়। এর মধ্যে পরিচ্ছন্ন-সবুজ ক্যাম্পাস প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন সময় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের শপথ পড়ান মেয়র।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বাংলাদেশের সব শহরগুলোর মধ্যে যদি পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতা হয়, তবে সেই প্রতিযোগিতায় রাজশাহী হবে এক নম্বর শহর। আমরা এতেই সন্তুষ্ট থাকতে চাই না। আমরা চাই রাজশাহীকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা শহরে পরিণত করতে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।