শুধু প্রশাসনই নয়, এলাকাবাসীর উদ্যোগেও শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমী লকডাউন। ফরিদপুরে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা শহরের বিভিন্ন মহল্লা ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন গ্রামে মূল সড়কের সাথে সংযোগকারী সড়কগুলোর মুখে বাঁশের খুঁটি কিংবা গাছের গুড়ি দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন এলাকাকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় শহরের ওয়ারলেসপাড়া মহল্লার বাসিন্দা পৌর কমিশনার সাবুল চৌধুরীর সাথে।
তিনি বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তত বাড়ছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ হতে অনেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এসেছেন বলে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। আমরা কোনোরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নই। এ জন্য আমাদের মহল্লায় কেউ যাতে যানবাহনে চড়ে প্রবেশ করতে না পারেন সে জন্যই এ ব্যবস্থা। এছাড়া অপরিচিতদেরও তাদের গন্তব্যস্থল নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
বাইরে থেকে আগতদের নিয়ে উদ্বিগ্নতার কথা জানিয়ে শহরের হরিসভা মহল্লার স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মামুনুর রহমান মামুন বলেন, ‘করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ওয়ার্ড ও ইউনিয়নভিত্তিক কমিটি করা হয়েছে। যেহেতু এলাকায় কেউ সংক্রমিত হয়নি তাই সতর্কতা হিসেবেই স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে এলাকাভিত্তিক গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লকডাউনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
সদর উপজেলার সিএন্ডবি ঘাটের বিহারী কলোনির বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘এখানাকার অনেকে ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে চাকরি করেন। অনেকের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে সেখানে। এ সময়ে তাদের কেউ যাতে আত্মীয়দের বাড়ি বা নিজ বাড়িতেও না আসেন সে জন্য আমাদের এ ব্যবস্থা।’
শহরের গোয়ালচামট মোল্যা বাড়ি সড়কের মিজানুর রহমান মিঠু বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার বিনা প্রয়োজনে কাউকে রাস্তায় নামতে নিষেধ করেছে। এমনকি এক এলাকা হতে আরেক এলাকায় চলাচলেও বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় অন্য এলাকার মানুষ যেন সহজেই এখানে ঢুকে পড়তে না পরেন সে জন্যই এলাকার সড়কের প্রবেশপথ এভাবে আটকে দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুর শহর ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামেও এখন এভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা পুলিশের টহল ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে এসব তুলে নিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা রাখা আছে, যোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি শহর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি করা হয়েছে। মানুষকে ঘরে রাখার জন্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটিকে সাথে নিয়ে যদি এমন উদ্যোগ নেয়া হয়, তবে সেটিকে সাধুবাদ জানাই। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মনীতি ও সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।