নাটোরে প্রাকৃতিকভাবে মাছের খাবার বা বায়ো ফিশ ফিডের পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সাফল্য মিলেছে। এর ফলে বাজারে প্রাপ্ত ফিশ ফিডের তুলনায় প্রায় অর্ধেক খরচে সম্ভব হবে মাছ চাষ। এ ছাড়া বয়ো ফিশ ফিড মানবদেহের জন্যও সম্পূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বলে দাবি উদ্ভাবকের।
দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে মানবদেহের জন্য নিরাপদ এই বায়ো ফিশ ফিড উদ্ভাবন করেছেন জীববিজ্ঞানী ড. জি এন এম ইলিয়াস। নাটোরে তার গবেষণা খামারে উৎপাদিত প্রোটিনসমৃদ্ধ ব্ল্যাক সোলজার লার্ভি বা বিশেষ ধরনের পোকা এবং ল্যাবে উৎপাদিত আরেক বিশেষ ছত্রাক ট্রাইকোডার্মার সঙ্গে চিনিকলের চিটা গুড় ও সরিষার খৈল মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে প্রাকৃতিক এই মাছের খাবার। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সফলতাও পেয়েছেন তিনি।
ড. ইলিয়াস জানান, এই ফিড পুকুরে ব্যবহারে মাছের প্রধান খাবার প্ল্যাংটনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। আবার নবায়নযোগ্য খাবার হওয়ায় পানির জৈব উপাদানও বাড়ায়। এর ফলে মাছের পাশাপাশি হাঁসেরও খাবার তৈরি হয়। বাজারে প্রচলিত খাবারের চেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ হওয়ায় বায়ো ফিশ ফিড মাছচাষিদের জন্য নতুন দুয়ার খুলে দেবে বলে মনে করেন এই জীববিজ্ঞানী।
তিনি বলেন, ‘পোকার খাদ্য হিসাবে বেগুনসহ নানা সবজি ব্যবহার করা হয়। এসব সবজি খেয়ে ব্ল্যাক সোলজার লার্ভি জাতীয় পোকা তার বংশ বিস্তার করে। পর্যাপ্ত ডিম দেওয়ার পর পোকাগুলো মরে যায়। প্রোটিনসমৃদ্ধ ওইসব মৃত পোকা কম্পোস্টে পরিণত হয়। এ ছাড়া পোকার ডিমও পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ হওয়ায় মাছের পছন্দের খাবার হিসাবে গণ্য হয়।’
তিনি আরও জানান, বায়ো ফিশ ফিডে ব্যবহৃত চিনিকলের চিটা গুড় ও সরিষার খৈল মাছের মূল খাবার প্ল্যাংটনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এর সঙ্গে ট্রাইডোর্মার মিশ্রণ খাবারগুলোকে আরও সমৃদ্ধ ও নবায়নযোগ্য করে তোলে। ফলে পানিতে ব্যবহৃত ফিড কয়েক দফায় খাদ্য উপাদান তৈরি করে থাকে। একইসঙ্গে পানির গুণগত মান ও পরিবেশগত সুরক্ষাও নিশ্চিত করে বলে জানান এই গবেষক।
মৎস্য খামারি শফিউল হক বলেন, নতুন উদ্ভাবিত বায়ো ফিশ ফিড সময়োপযোগী একটি আবিষ্কার। এটি জলজ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ-সহায়ক, মানবদেহের জন্য নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী। ফলে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন করা গেলে মাছ উৎপাদনে বিপ্লব সৃষ্টি হতে পারে বলে মত তার।
আরও পড়ুন: অবৈধ দখল-দূষণের কবলে ফেনীর ২৪৪ নদী ও খাল
স্থানীয় সৌখিন মৎস্যচাষি মেহেদী হাসান জানান, পরীক্ষামূলকভাবে পুকুরে বায়ো ফিশ ফিড ব্যবহার করে তিনি সফলতা পেয়েছেন। তিনিও এই সারের বানিজ্যিক উৎপাদনের ওপর জোর দেন।