ঢাকা, ০৩ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রস্তাবিত ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)’ শুধুমাত্র চীনের উন্নয়নের জন্য নয়, বরং এটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব ও বৃহত্তর যোগাযোগের মাধ্যমে বেল্ট ও রোডের অধীনে সকল দেশের মানুষের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
চীনের বৃহত্তম শিনজিয়াং অঞ্চলের বৃহৎ উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে দেশটি বলেছে, তারা এই অঞ্চলে সামাজিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ‘বস্তুনিষ্ঠু দিক’ থেকে দেখা উচিৎ বলে মনে করে চীন।
শিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তথ্য কার্যালয়ের উপপরিচালক আইলিট শালিয়েফু ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছি। সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং উগ্র ধর্মবাদ শুধু চীনের সমস্যা নয়, এগুলো সারা বিশ্বের অভিন্ন সমস্যা।’
শিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তথ্য কার্যালয়ের উপপরিচালক আইলিট শালিয়েফু। ছবি: ইউএনবি
তিনি বলেন, চীন শিনজিয়াংয়ের ভৌগলিক সুবিধার সর্বোত্তম ব্যবহার করছে এবং মধ্য, দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি মুক্ত জানালা হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
শিনজিয়াং পরিবহন, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং শিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান এবং সিল্ক রোড অর্থনৈতিক বেল্টের মূল এলাকা হিসেবে কাজ করে।
চীনা প্রেসিডেন্ট শির ঐতিহাসিক সফরকালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে 'বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'–এ যোগ দেয় যা ইতিমধ্যে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে চীনের এই সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, বিচ্ছিন্নতাবাদী, ধর্মীয় চরমপন্থী এবং সন্ত্রাসবাদের মতো বৈশ্বিক সমস্যা একটি সাধারণ কাঠামোর অধীনে সমাধান করা যেতে পারে।
আইলিট বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে আমাদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে সকল সমস্যার সমাধান করা হবে এবং পরিস্থিতি আরো ভাল হবে।’
ইউএনবির প্রতিবেদককে তিনি বলেন, শিনজিয়াং সম্পর্কে চীনের বিদেশি বন্ধুরা কিছু ‘বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা, এমনকি পক্ষপাতমূলক তথ্য’ শুনেছে। ‘আপনি এখানে পরিদর্শন করেছেন। আপনি এখানে কি ঘটছে তা স্বচক্ষে দেখতে পারছেন। আপনাকে শিনজিয়াং সম্পর্কে বন্তুনিষ্ঠুভাবে বোঝা উচিৎ।’
চীনের প্রাকৃতিক সম্পদের বৃহত্তম অঞ্চল শিনজিয়াং। এটি আটটি দেশের সীমান্ত দিয়ে পরিবেষ্টিত। মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিস্তান, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতের সাথে এর ৫,৬০০ কিলোমিটারের বেশি সীমান্তরেখা রয়েছে।
ছবি: ই্উএনবি
এক প্রশ্নের জবাবে আইলিট বলেন, তাদের বিশ্বাস যে বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে সিল্ক রোড অর্থনৈতিক বেল্টের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য সাধারণ সমস্যা শুধু একটি দেশ নয়, বরং সকল দেশের দ্বারা সমাধান করা হবে।
তিনি আশা করছেন, এই বেল্ট এন্ড রোডের অধীনের দেশগুলো যোগাযোগের কারণে আন্তর্জাতিক শহর আরো উন্নতি লাভ করবে।
বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চীনের প্রস্তাবিত একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, পৃথিবীর প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ সরাসরি অর্থনৈতিকভাবে সংযুক্ত হবে। বিআরআইকে প্রাচীন সিল্ক রোডের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যার ফলে সংযুক্ত হবে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার ৬৮টি দেশের নৌ, বিমান বন্দর ও স্থল বন্দর।
চীনের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ চীনকে পৃথিবীর নয়া মোড়ালে পরিণত করবে। রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রিলংকাও এই বিআরআই প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইআইবির মত বিশ্বসেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বিআরআই আয়োজিত প্রোগ্রামে অংশ নেয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই প্রকল্পকে বুনো রাজহাঁসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই রাজহাঁস বিপদের মধ্যেও দলবদ্ধ থেকে অনেকদূর পর্যন্ত উড়ে যায় অর্থাৎ চুক্তিবদ্ধ সকল দেশ একসাথে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে।
এর মাধ্যমে আগামীর অর্থনীতির সকল চ্যালেঞ্জ, বাধা সবাই একসঙ্গে অতিক্রম করা যাবে। এশিয়াই হবে আগামী অর্থনীতির মূল কেন্দ্র। বিআরআই প্রকল্পে আরো রয়েছে যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ ভিত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগ। যার মধ্যে থাকবে আন্তর্জাতিক করিডর, বিমানবন্দর, উচ্চগতির রেলপথ। চীন সংশ্লিষ্ট দেশের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এর আর্থিক বিনিয়োগ করবে।