বেনাপোল স্থলবন্দরে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে ৫ কোটি টাকা মূল্যমানের স্ক্যানিং মেশিন। অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক থাকলেও স্ক্যানিং মেশিন নষ্ট থাকায় বন্দরের অভ্যন্তরে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এমনকি ঘটছে চুরির ঘটনাও। নিরাপত্তা সংস্থা আনসার, পিমা, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকলেও ঠেকানো যাচ্ছে না মাদক ব্যবসা।
গত শনিবার বিকালে বন্দরের ৫ নম্বর গেটে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া দিয়ে ৪৯ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেন বন্দরের নিরাপত্তাকর্মী আনসার সদস্যরা। তবে পালিয়ে যায় ওই পাচারকারী। পরে রাত ১১টার দিকে বেনাপোল পোর্ট থানায় মাদক পাচারের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে একটি মামলা হয়।
এর আগে গত ২ জুলাই বন্দরের কাঁচামাল ইয়ার্ডে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ট্রাক থেকে ৯৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২৩১৮৪০ ডিম আমদানি
মাদক জব্দ প্রসঙ্গে বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা সংস্থা আনসার পিসি হেলালুজ্জামান বলেন, বন্দরে টহল দেওয়ার সময় একটি ট্রাকের পাশে সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন নিরাপত্তাকর্মীরা। তাদের ধাওয়া করলে তারা একটি ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যাগ থেকে ৪৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।
বন্দর কর্মকর্তাদের নির্দেশে ফেনসিডিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান হেলালুজ্জামান।
বন্দরের একটি সূত্র জানায়, বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং পাচার রোধে ১৭৫টি অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কিন্তু তদারকির গাফিলতির কারণে মাদক পাচারের ঘটনা ঘটছে। অপরাধীকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
বেনাপোল আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আনোয়ার আলী আনু জানান, চোরাকারবারিরা কখনো ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকে আবার কখনো সীমান্ত পথে ফেনসিডিল নিয়ে বন্দর এলাকায় অবস্থান করে। পরে কৌশলে বিভিন্ন পণ্যবাহী বাংলাদেশি ট্রাকে ফেনসিডিল তুলে দেয়। আর হয়রানির শিকার হন চালক, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, বন্দরের নিরাপত্তায় ১৬৩ জন আনসার, ৪২ জন আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা পিমার ১২৯ জন কর্মী আছেন। পাশাপাশি সরকারের গোয়েন্দাও কাজ করছেন বন্দরে। সার্বক্ষণিক বন্দরের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে ৩৭৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। এরপরও ঘটছে চুরির ঘটনা।
চলতি সপ্তাহে বন্দরের ডিটিএম অফিসে বসানো দুটি ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন চুরি হয়। তবে এই অপরাধী এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। যদিও এ ঘটনায় নিরাপত্তা সংস্থা পিমার সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছে বন্দর প্রশাসন।
বেনাপোল কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ শামসুর রহমান জানান, নষ্ট স্ক্যানিং মেশিন দ্রুততম সময়ে চালু করা দরকার। এছাড়া বন্দরের সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়মিত তদারক করাসহ নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বশীল হলে বন্দর অভ্যন্তরে মাদকের কারবার বন্ধ সহজ হবে।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির জানান, বন্দরের নিরাপত্তায় আনসাররা কাজ করছেন। বন্দরের ৩টি স্ক্যানিং মেশিন নষ্টের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২ দিনে ভারতে ৯৯ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি