চারদিকে থৈ থৈ পানি। তার মধ্যে ভাসছে হাসেম হাওলাদারের পরিবার। মেঘনার জোয়ারের পানির আঘাতে হাসেমের ঘরসহ মালামাল ভাসিয়ে নেয়। এর পর তার স্ত্রী রোসনা বিবিকে নিয়ে আশ্রয় নেয় ছেলে নিজাম হাওলাদারের ঘরে।
এ চিত্র দেখা যায় বৃহস্পতিবার ভোলার সর্বদক্ষিনে চরফ্যাসন উপজেলার বঙ্গপোসাগর মোহনায় দুর্গম চর কুকরী মুকরি ইউনিয়নের দক্ষিণ চর পাতিলা গ্রামে।
ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বুধবার নিজামের ঘরের ভিটিসহ একাংশ জোয়ারে ভেসে গেছে। কোন রকমে ঘরে মাঁচা করে থাকছেন তারা সবাই। প্রতিদিনি দুইবারে ১২ ঘন্টা বানের পানিতে তলিয়ে থাকে পুরো গ্রাম। নিজাম ছাড়াও রোসনা বিবির আরও ৫ ছেলে বারেক হাওলাদার, বাদশা, বশির, কাদের ও কাজল একই এলাকায় বসবসাস করেন। সবার ঘরের মাটি জোয়ারে ভেসে গেছে। পানিতে তলিয়ে আছে তিন দিন।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
খাল, বিল সব নোনা পানিতে তলিয়ে থাকায় খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নলকূপ থেকে বিশুদ্ধ পানি আনতে যান রোকসনাসহ তার ২ নাতনি। ফেরার সময় মেঘনার জোয়ারে সব তলিয়ে যায়। দুই নাতনিকে নিয়ে সাঁতার কেটে এক কলসি পানি নিয়ে আসেন বাড়িতে। পানিতে তলিয়ে থাকায় চুলো জ্বলে নি। চেয়ারম্যানের দেয়া বিস্কুট ও চিড়া খেয়ে সকাল কাটিয়েছেন।
হাসেম ও রোসনা দম্পতির চোখে মুখে শুধু অজানা আতংক। কিভাবে তারা মাথার ছাউনি দিবে। তাদের ভবিষ্যৎ কি।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
হাসেম হাওলাদার ও রোসনার মতো অসংখ্য পরিবারের এমন দুর্ভোগ চর পাতিলা গ্রামে। বেঁছে থাকার জন্য এক প্রকার চলছে যুদ্ধ। চর পাতিলার প্রায় ৫ হাজার মানুষ ২ বেলা জোয়ার ভাটায় ভাসছে। ওই এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির এখন তীব্র শঙ্কট। কুকরীর চেয়ে পাশ্ববর্তী ঢালচরের অবস্থা আরও খারাপ। ঝড়ের পরে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বেড়েছে সবর্স্বহারা মানুষগুলোর দুর্ভোগ।
চরফ্যাসনের কুকরী মুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেন মহাজান সাংবাদিকদের জানান, কুকরী মুকরীতে তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বেশি দুর্গতদের কিছু সহায়তা করেছেন। আর উপজেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার বিকালে দেড়শ পরিবারকে শুকনো খাবার দিয়েছে। দুর্গত মানুষদের পূর্ণবাসনে বড় সহায়তা দরকার। তা না হলে এসব মানুষের পক্ষে ঘুরে দাড়ানো সম্ভব না।
চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন সাংবাদিকদের জানান, চর পাতিলায় বৃহস্পতিবার বিকালে দেড়শ পরিবারকে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। তালিকা প্রণয়ন শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণের পাশাপাশি গৃহনির্মাণ সামগ্রী দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ভোলায় ইয়াসের প্রভাবে চরাঞ্চল প্লাবিত, ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
এদিকে ভোলা জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ি ঘরেরই আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অতি জোয়ারের পানির স্রোতে প্রায় ২ হাজার গরু মহিষ নিখোঁজ রয়েছে। মনপুরায় ৬৫৪টি পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে জোয়ারে।
এখনো নিম্নাঞ্চলের ২৩ টি চরে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হচ্ছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের দ্বায়িত্বে থাকা জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ভোলা জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ি ঘরেরই আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তাদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঝড়ে নিহত ১ জনের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।