কৃষি বিভাগ বলছে, বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ চাষে জেলার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বৃহত্তর যশোর, মাগুরাসহ ছয় জেলায় এ চাষ শুরু হয়েছে। চাষের জন্য জেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে তাদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। নতুন ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষ জেলায় এখনো জনপ্রিয় না হলেও ইতোমধ্যে অনেক চাষি এ চাষে আগ্রহ দেখিয়েছে।
গত বছর জেলায় সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল ২ হেক্টর জমিতে। তেল জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার প্রদর্শনীর ক্ষেত নির্ধারণ করে কাজ করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মাগুরা সদরের রাউতড়া ও সাচানি গ্রামে এ চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার ও মাঠকর্মীরা প্রদর্শনী ক্ষেত পর্যাবেক্ষণ করছেন নিয়মিত। তাছাড়া জেলার মাঠ পর্যায়ের চাষিদের যথাযথ পরামর্শ দিয়ে নানা ধরনের সহযোগিতা করছেন তারা।
আরও পড়ুন: সূর্যমুখীর হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন খুলনার কৃষকরা
মাগুরা সদরের রাউতড়া গ্রামে সূর্যমুখী চাষি মোমিন লস্কারের সাথে কথা হয় ইউএনবির এ প্রতিবেদকের। তার ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় অপরূপ দৃশ্য। ৬-৭ ফুট লম্বা এক একটি সূর্যমুখী গাছে হলুদ ফুলে ভরে গেছে। ফাল্গুনের হাওয়ায় বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুলগুলো। চোখে দেখলে মন ভরে যাবে অনেকের।
মোমিন লস্কার বলেন, ‘এ চাষে আমাকে জেলা কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান প্রথম উদ্বুদ্ধ করে। তার পরামর্শে আমি কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ শুরু করি। তারা আমাকে বীজ ও সার দেয়। আমি ৩৫ শতক জমি বর্গা নিয়ে সূর্যমুখী চাষ শুরু করি।’
তিনি বলেন, কার্তিক মাসে সূর্যমুখীর বীজ বপন করতে হয়। তারপর প্রয়োজনীয় সার ফসফেট, পটাস ও ইউরিয়া দিতে হয়। এ পর্যন্ত আমি এ চাষে ২-৩ বার সেচ দিয়েছি। নিয়েছি বাড়তি যত্ন। চারা গাছ বের হলে আগাছা পরিষ্কার করে জমিতে আরও যত্ন নিতে হয়। যেহেতু আমার জমিটি প্রদর্শনী ক্ষেত তাই জেলা কৃষিবিভাগের ব্লক সুপারভাইজারা তদারকি করত নিয়মিত। যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে আমি তাদের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি।
আরও পড়ুন: অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে কৃষক
মোমিন বলেন, ‘এ চাষে আমার ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। তাই আশা করছি ভালো অর্থ পাব।’
সূর্যমুখী চাষ ভালো হয়েছে বিধায় তার দেখাদেখি গ্রামের অনেক চাষি সূর্যমুখী চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে তিনি জানান।
সদরের সাচানি গ্রামের আরেক চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় সূর্যমুখী চাষ প্রথম শুরু করেছি। মোট ৩৩ শতক জমিতে আমি এ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি ভালো অর্থ আসবে।’
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সুশান্ত কুমার প্রামানিক জানান, জেলায় তেল জাতীয় নতুন ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়েছে। এবার জেলায় ৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১ হেক্টর, শালিখায় ১ হেক্টর, মহম্মদপুরে ১ হেক্টর ও শ্রীপুরে ১ হেক্টর জমিতে এ চাষ হয়েছে।
আরও পড়ুন: উপকূলের লবণাক্ত জমিতে সূর্যমুখী চাষে সফলতা
তিনি বলেন, ‘নতুন ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষ করতে আমরা জেলায় মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি। পাশাপাশি তাদের এ চাষে প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে বীজ ও সার বিতরণ করেছি। তেল জাতীয় ফসল হিসেবে সূর্যমুখীতে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। সূর্যমুখীর ভোজ্য তেল খেলে রোগ প্রতিরোধ হয়। বিশেষ করে এ ভোজ্য তেল খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ, হার্টের রোগের প্রতিরোধ, শরীরের ব্যথ্যা, হাড়ে ক্ষয়ের কার্যকারিতা হয়। তাছাড়া সূর্যমুখীর ভোজ্য তেলে রয়েছে ভিটামিন এ.ডি ও ই এবং কোলেষ্টরেলের মাত্রা অত্যন্ত কম থাকে। তাই জেলার কৃষকদের আমরা এ চাষে বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করছি।’
আরও পড়ুন: মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর হাসি