কৃষি
বন্যার পলিতে উর্বর উত্তরের চরাঞ্চল, চাষাবাদের ধুম
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের নদ-নদীগুলোর তীর এখন ধুঁ ধুঁ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। বালুময় জমিগুলোর ওপর বন্যার রেখে যাওয়া পলি জমে বেলে-দোআঁশে পরিণত হওয়ায় চাষাবাদের ধুম পড়েছে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে।
কৃষি বিভাগ বলছে, উত্তরের এসব নদীতে প্রায় ৭৮৬ টি চর রয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চরের মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এসব চরে এবার ৩৬ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, আর বিভিন্ন প্রকার ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার টন।
কৃষি বিভাগ মনে করে, চরের ফসলে ঘুরে দাঁড়াবে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। এক ফসলেই তাদের সারা বছর চলে যায়, বলেন এই কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরের লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার তিস্তা নদীর চরে কৃষিজমিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে আলু, বেগুন, মরিচ, ছিটা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, শিম, ধনেপাতা, গাজর, কপি, মুলা, লাউ, গম, তিল, তিশি, সরিষা, ভুট্টার আবাদ হয়েছে। সব ফসলেরই ভালো ফলন আশা করছেন চাষিরা।
রংপুরের গঙ্গাচরার ইচলির চরের হোসেন মিয়া বলেন, তিস্তার চরে ৩ বিঘা জমিতে আলু, তিন বিঘায় বেগুন ও ২০ শতক জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছি। ফলন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে এ মৌসুমে দেড় লাখ টাকা আয় হবে।
শুধু হোসেন নন ওই এলাকার কৃষক হাবিবুর, রহিম ও খায়রুল বলেন প্রায় একই কথা। তাদের দাবি, যেটুকু জমিতে আবাদ করেছি, ফলন ভালো হলে ৬০-৭০ হাজার টাকা করে লাভ হবে তো হবেই।
লক্ষ্মীটারি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষি জোনে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ফসল বাজারে উঠতে শুরু করেছে। অনেকে নতুন করে চাষাবাদ করছেন। চরের কৃষকের একটাই দুঃখ; উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ, বাজারে সরবরাহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন থেকে বঞ্চিত হন।
তিনি আরও বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে যেসব ফসল উৎপাদন হয়, তাতে অন্তত ২-৩টি হিমাগার প্রয়োজন। অথচ গংগাচড়ায় আছে মাত্র একটি হিমাগার। তাছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় চরাঞ্চল থেকে কৃষক উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারে নিতে পারেন না।
কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলের মাটিতে পলি জমায় তা অনেক উর্বর। রাসায়নিক সার ছাড়াই বিভিন্ন ফসলের ফলন ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে ভুট্টা, গম, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, তিল, তিশিসহ শাকসবজি চাষ বেশি হচ্ছে।
চর নিয়ে কাজ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, বন্যা চলে যাওয়ার পর চরের জমিতে যে পলি থাকে, তা অত্যন্ত উর্বর। এ কারণে প্রতি বছরই বন্যার পর কৃষিতে বাম্পার ফলনের দেখা পান চরের কৃষকরা। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ন্যায্য মূল্য পান না চাষিরা।
তিনি মনে করেন, তিস্তাসহ অন্যান্য নদী যদি খনন করা হয়, তাহলে চরের জমিগুলো জেগে উঠবে এবং উত্তরের মানুষের আর অভাব থাকবে না।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরের ৮ জেলার ৭৮৬টির বেশি চরে যে ফসল উৎপাদন হবে, তাতে ২০০ কোটি টাকা আয় হওয়া সম্ভব।
ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের প্রণোদনাসহ কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা। বন্যায় চরের যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ইতোমধ্যেই সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান রংপুর অঞ্চলের কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।
২ দিন আগে
কৃষিতে মধ্যভোগীদের নিয়ন্ত্রণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: কৃষি উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কৃষিতে মধ্যভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি পলিথিন ও প্লাস্টিকের পানির বোতল ব্যবহার বন্ধ করতে পারেন—তাহলে সবাই পাটজাত পণ্য ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। এই বিষয়ে ইতোমধ্যেই কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।’
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরে ধল্লার মেদুলিয়া গ্রামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেদুলিয়া সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘকে মিনি কোল্ড স্টোরেজের চাবি হস্তান্তর করার পর স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, মধ্যভোগীরা কৃষি সিন্ডিকেট করে বড় বড় বিল্ডিংয়ের মালিক হচ্ছেন। আমার কৃষকরা কুড়ে ঘরেই থাকতে হচ্ছে। ফারমারস মিনি কোল্ড স্টোরেজ কেবল ফসল সংরক্ষণ নয়, বরং কৃষি অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে এ প্রকল্পকে আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের হাতে প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে হবে। আপনাদের মানিকগঞ্জে গাজর, শীতকালীন সবজি বেশী উৎপাদন হয়। এই ব্যবস্থায় কৃষক, ভোক্তার সরাসরি উপকৃত হবেন। এ মিনি কোল্ড স্টোরেজ পরে আরও বাড়ানো হবে। প্রয়োজনে কৃষকরা নিজেরাও বাড়িতে তৈরি করে নিতে পারবেন অল্প খরচে। আমারা কৃষকদের কারিগরি সহায়তা দেবো।
পড়ুন: কৃষকরা এবছর দাম পায়নি, আলু কিনবে সরকার: কৃষি উপদেষ্টা
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে কৃষি মন্ত্রণালয় বাস্তবায়িত ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সাশ্রয়ী কোল্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি প্রকল্প’র আওতায় সারা দেশে ১০০টি ফারমারস মিনি কোল্ড স্টোরেজ বিতরণ করা হচ্ছে।
এর আগে তিনি কৃষকদের সরাসরি প্রশ্ন শোনেন। এতে খাল বে-দখল, বিদ্যুৎ সংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ শুনেন এবং তার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেন।
তিনি কৃষকদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আমাদের সময় সীমিত। এজন্য এর আগে একটি কৃষি আইন প্রণয়ন করা হবে—যাতে কৃষিজমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার না করা যায়। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে যখন কোনো রাস্তা তৈরি করতে জমির মালিককে তিনগুণ মূল্য দেয়, একইভাবে এলজিইডিকেও দিতে হবে। এছাড়া জমির টপ সয়েল ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করা অন্যায়। এটি নষ্ট হলে উৎপাদন কমে যায়।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন-কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক, মো. ছাইফুল আলম, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক, ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা, পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াছমিন খাতুন, মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালাক ড. রবীআহ নুর আহমেদসহ প্রায় তিন শতাধিক কৃষক।
৯৯ দিন আগে
মানুষের থালা থেকে পাখির ঠোঁটে: চরাঞ্চলে বিলুপ্তির পথে কাউন
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে একসময়ের পরিচিত ও পুষ্টিকর খাদ্যশস্য কাউন আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কৃষিজীবী মানুষের খাবারের অংশ হয়ে থাকা এই শস্য এখন আর চরাঞ্চলের মাঠে আগের মতো দেখা যায় না। জেলার প্রত্যন্ত চরের কৃষকরা কাউন চাষ ছেড়ে ঝুঁকছেন বেশি লাভজনক ও উচ্চ ফলনের ফসলের দিকে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে জেলায় কাউনের চাষ নেমে এসেছে মাত্র ৬০ হেক্টর জমিতে। অথচ গত বছরও ৪২০ হেক্টর জমিতে কাউন চাষ হয়েছিল। দুই দশক আগে অন্তত বিশ হাজার হেক্টর জমিতে এ শস্যের চাষ হতো।
একসময় যে চরভূমিতে সোনালি কাউনের ঢেউ উঠত, সেখানে এখন চাষ হচ্ছে ধান, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ফসল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুড়িগ্রামের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বর্তমান ধারায় পরিবর্তন না এলে এক দশকের মধ্যেই চরাঞ্চল থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে কাউন। এটি শুধু ফসলচক্রের পরিবর্তন নয়, বরং একটি গ্রামীণ খাদ্য ঐতিহ্যের অবক্ষয়।’
কাউন বা ফক্সটেল মিলেট শুষ্ক সহনশীল ও কম খরচের একটি শস্য। বন্যা বা দুর্ভিক্ষের সময়গুলোতে চরবাসীর ভরসা ছিল এই কাউন। ধানের চেয়ে অনেক কম পানি ও সার লাগে বলে দরিদ্র কৃষকরা সহজে এটি চাষ করতেন এবং ভাতের বিকল্প খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতেন। তবে সময় বদলেছে। এখনকার কৃষকেরা ভাবেন লাভের কথা।
‘কাউনে লাভ নেই’, বলছিলেন নাগেশ্বরীর চর বামনডাঙ্গার কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৫), ‘গত বছর পাঁচ বিঘায় (চাষ) করেছিলাম, এবার করেছি এক বিঘায়। প্রতি বিঘা থেকে চার থেকে ছয় মণ কাউন পাওয়া যায়। প্রতি মণ বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়; কিন্তু খরচ পড়ে আড়াই হাজার টাকা। হিসাব মেলে না।’
১৭২ দিন আগে
কৃষি, প্রাণ-প্রকৃতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় সমন্বয় জরুরি: পরিবেশ উপদেষ্টা
খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি ও প্রাণ-প্রকৃতি—এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ব্যতিরেকে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করা গ্রহণযোগ্য নয়।’
সোমবার (৫ মে) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। ‘উন্নয়ন করলে পরিবেশের ক্ষতি হবেই’—এমন মানসিকতা বদলাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিল্প দূষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে গেলে বলা হয়, হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকিতে পড়বে। কিন্তু নদীর উপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ও সুপেয় পানির নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়।
উপদেষ্টা বলেন, কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে, যা কার্যত দস্যুতা। কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের পাস করতে কাজ করছে সরকার। না হলে বাংলাদেশে কৃষিজমি থাকবেই না।
আরো পড়ুন: মাগুরায় নিম্নমানের সরকারি পাটবীজ বিতরণ, অনাগ্রহ কৃষকদের
জৈব কৃষির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মাটি দূষিত হচ্ছে। আমাদের এখনই জৈব সার উৎপাদন ও বিতরণে উদ্যোগ নিতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানির চাপ উপেক্ষা করে আমাদের নিজস্ব কৃষি মডেল গড়ে তুলতে হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আমরা একদিকে বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে অভিযোগ করি, অন্যদিকে অহেতুক এসি-লাইট ব্যবহার করি। কনজাম্পশন প্যাটার্ন এবং পরিবেশ—এই দুইকে একসঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে। টেকসই ভবিষ্যতের জন্য নীতি, আইন ও আচরণে দ্রুত পরিবর্তন আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মাল্টিমোড গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম এবং বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি খুশি কবীর প্রমুখ।
সম্মেলনে কৃষি বিশেষজ্ঞ, গবেষক, পরিবেশবিদ ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
২১৩ দিন আগে
কৃষি সুরক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে বাকৃবি-মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণা
কৃষি সুরক্ষা পদ্ধতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে যৌথভাবে গবেষণা চালাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও অস্ট্রেলিয়ার মারডক বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণায় বাংলাদেশের মাটি ও পানি সম্পদের ওপর সংরক্ষণমূলক কৃষির প্রভাব, সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হবে।
গবেষণা দলের প্রধান বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর ইউএনবিকে বলেন, ‘মাটি ও পানি সম্পদের ওপর কৃষি সুরক্ষা পদ্ধতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং এই পদ্ধতির সম্প্রসারণের উপযুক্ত কৌশল নির্ধারণ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
কৃষি সুরক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, সংরক্ষণমূলক কৃষি বা কৃষি সুরক্ষা পদ্ধতি টেকসই চাষাবাদের একটি আধুনিক পদ্ধতি যা মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, উৎপাদন বৃদ্ধি ও পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক। এতে তিনটি মূলনীতি অনুসরণ করা হয়— ন্যূনতম চাষ, ফসলের আচ্ছাদন বজায় রাখা ও ফসলের বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা।
গবেষণায় মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. রিচার্ড ডব্লিউ বেল ও ড. ডাভিনা বয়েড প্রজেক্ট লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কৃষি অর্থনীতি বিষয়ের প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করছেন বাকৃবির কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসনীন জাহান।
ড. রিচার্ড ডব্লিউ বেল বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর হলেও এর উর্বরতা দ্রুত কমছে। ২০১২ সাল থেকে মারডক বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। বর্তমানে আমরা কৃষি সুরক্ষা পদ্ধতি গ্রহণে সহায়তা এবং মাটি ও পানির গুণগত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছি।’
আরও পড়ুন: বৃত্তি পেল বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ৩৬ শিক্ষার্থী
গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ৮টি পিএইচডি ও ৪টি মাস্টার্স ফেলোশিপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীরা গবেষণার সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক জাহাঙ্গীর।
এটি দেশের বিজ্ঞানীদের দক্ষতা, শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক জাহাঙ্গীর।
‘বাংলাদেশে সংরক্ষণমূলক কৃষি গ্রহণে সহায়তা এবং মাটি ও পানির গতিশীলতার পরিবর্তন (সাকা)’ শীর্ষক চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে। এটি অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (এসিআইএআর) ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।
এই প্রকল্পে আরও অংশ নিয়েছে— বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), সংরক্ষণমূলক কৃষি সেবা প্রদানকারী সংস্থা (ক্যাসপা) ও পিআইও কনসাল্টিং লিমিটেড।
গবেষকরা আশা করছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় টেকসই পরিবর্তন আসার পাশাপাশি কৃষকদের উৎপাদনশীলতা ও আয় বাড়বে।
৩০৩ দিন আগে
দেশের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা ‘রঙিন চাল’, কমাবে ডায়াবেটিস ও স্থূলতা
দেশের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার আলো নিয়ে এসেছে রঙিন চাল। এই চালের ব্রানে প্রোটিন ও আঁশের পরিমাণ সাদা চালের চেয়ে বেশি হওয়ায় ডায়াবেটিস ও স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী ফকির ও তার গবেষকদল বিশেষ এই চাল নিয়ে গবেষণা করে এর পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা, চাষাবাদ, ফলন ও এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য ইউএনবির কাছে তুলে ধরেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত ওই গবেষণা দলে আরও যুক্ত ছিলেন কো-পিআই অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাগরিকা খাতুন।
রঙিন চালের পুষ্টিগুণের কারণেই এটি স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বর্তমানে জনপ্রিয় হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, বর্তমানে পাহাড়ি এলাকায় ও প্রগতিশীল কৃষকরা রঙিন চালের চাষ করছেন। সাধারণ সাদা চালের তুলনায় এই চাল অধিক প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আঁশ-সমৃদ্ধ। রঙিন চালের ধানের রং সোনালি, লাল, কালো কিংবা বেগুনি বর্ণের হতে পারে, তবে চালের রং লাল, বেগুনি, বাদামি বা কালো রঙের হয়।
তিনি জানান, খোসা ছাড়ানোর পর এই চালের দানা বাইরে থেকে কালো বা লাল রঙের বহিরাবরণ দিয়ে আবৃত থাকে যাকে ব্রান বলা হয় এবং ব্রানের ভেতরে দানা ও ভ্রুণ থাকে। দানা প্রধানত স্টার্চ ও জার্ম প্রোটিন, আঁশ, ফাইটোক্যামিকেলস ও এন্থোসায়ানিন নামক লাল পদার্থ দ্বারা গঠিত। ব্রানের লাল রং সাধারণত এন্থোসায়ানিনের উপস্থিতির কারণে হয়ে থাকে। এন্থোসায়ানিনসহ অন্যান্য ফাইটোক্যামিকেলসের প্রচুর স্বাস্থ্য গুণাগুণ বিদ্যমান। গবেষণায় জানা গেছে, এন্থোসায়ানিন ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও হৃদরোগ প্রশমিত করে।
আরও পড়ুন: গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করলেন বাকৃবির অধ্যাপক
রঙিন চালের পুষ্টি ও ঔষধি গুণ সম্পর্কে এই অধ্যাপক জানান, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়দের খাবারে প্রোটিন, ভিটামিন, আঁশ, খনিজ পদার্থ ইত্যাদির প্রায়শই ঘাটতি থাকে। সাদা চালের চেয়ে কালো চালের ব্রানে দুই থেকে তিনগুণ খনিজ পদার্থ, বিশেষ করে আয়রন ও জিঙ্ক বিদ্যমান। অধিকন্তু আমাদের দেশে অটোরাইসমিল থেকে প্রাপ্ত ব্রান/ভূষি পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এই ভূষিতে মূল্যবান পুষ্টিগুলো চলে যায়। রঙিন চালের ব্রানে প্রোটিন ও আঁশের পরিমাণ সাদা চালের চেয়ে বেশি। এই আঁশ ডায়াবেটিস ও স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে।
তার দেওয়া তথ্য অনুসারে, রঙিন চালের ব্রানে প্রোটিন, ফ্লাভোনয়েড, ফেনল ও ভিটামিন রয়েছে যা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে খুবই উপকারী। রঙিন চালে বিদ্যমান এন্থোসায়ানিন একটি শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট যা দেহের ক্ষতিকারক রেডিক্যালসকে বিশোধন করে।
তাছাড়া এই চাল দিয়ে ভাত, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, চিড়া, মুড়ি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও কেক প্রস্তুত করা যায়। তাই সহজেই এটি দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ছোলায়মান আলী ফকির।
৩১৩ দিন আগে
কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ৬৯%
কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সারাদেশে একযোগে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ৬৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ইউএনবিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের সিনিয়র উপপরিচালক খলিলুর রহমান।
আরও পড়ুন: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা-গবেষণা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি নসরুল্লাহ
সিভাসুর তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১১টি কেন্দ্রে শুক্রবার বেলা ১১টায় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশ থেকে ৭৫ হাজার ১৭ জন ভর্তিচ্ছু আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৫১ হাজার ৮১১ জন। অর্থাৎ অনুপস্থিত ছিলেন ২৩ হাজার ২০৬ জন পরীক্ষার্থী।
এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সূত্রে জানা যায়, বাকৃবিতে উপস্থিতির হার ৭৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। মোট ১২ হাজার ৬৩৪ জন ভর্তিচ্ছুর বাকৃবি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন ৯ হাজার ৮৭৫ জন এবং অনুপস্থিতির সংখ্যা ২ হাজার ৭৫৯ জন।
উল্লেখ্য কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বমোট আসন রয়েছে ৩,৭১৮ টি। ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আগামী ৩০ অক্টোবর এবং সশরীরে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে ৯-১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে কৃষকের স্বার্থে কাজ করতে আহ্বান কৃষি উপদেষ্টার
৪০৫ দিন আগে
বন্যায় সব হারিয়ে বিপর্যস্ত শেরপুরবাসী, কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৬০০ কোটি টাকারও বেশি
শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যার পানি নামতে থাকায় দৃশ্যমান হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। বন্যায় ভেঙেছে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট ও ডুবে গেছে ফসলি জমি। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে বন্যাকবলিতরা।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ তৎপরতা থাকলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার-বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে- ডায়রিয়া, আমাশয়, চুলকানিসহ পানিবাহিত রোগ।
সরেজমিনে নকলা উপজেলার পিছলাকুড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভোগাই নদীর তীরে জেলেপল্লীতে প্রায় ১৫০ পরিবারের বসবাস। নদীর বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢলে ওই এলাকার অনেকের বাড়ি-ঘর, জিনিসপত্র, ফসলি জমি সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ৫০ বছরের মধ্যে সাহারা মরুভূমিতে প্রথম বন্যার বিরল দৃশ্য
ছয় দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় গ্রামের ভেতর দিয়ে চলাচলের জন্য পিছলাকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তাড়াকান্দা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি ঢলের পানিতে জায়গায় জায়গায় ভেঙে গর্ত হয়ে গিয়েছে।
ওই গ্রামের অহল্লা রানী বর্মণ বলেন, ‘বাড়িঘরে বন্যার পানি। ৫ থেকে ৬ দিন পর পানি নামছে। পানি থাকার সময় একদিন সেনাবাহিনীরা এক প্যাকেট খিচুরি, আরেকদিন আধাকেজি মুড়ি দিয়েছিল। তিনদিন ওইগুলাই খাইয়া, না খাইয়া থাকছি। পানি থাকায় একরকম কষ্ট আর এখন পানি নামার পরে আরেক রকম কষ্ট।’
বাদল চন্দ্র বর্মণ বলেন, ঋণ নিয়ে ১০ শতাংশ জমিতে শসা খেত করেছিলেন। তিন দিন পরই শসা তোলা শুরু হতো। প্রায় এক লাখ টাকার মতো আয়ের আশা ছিল। ঢলের পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, শসা খেত ছাড়াও ৫ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ, ৩ কাঠা (২১ শতাংশ) জমিতে লাল শাক ও ১৮ কাঠা (১২৬ শতাংশ) জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছিলেন। পাহাড়ি ঢলে সব ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি দেখিয়ে বাদল বলেন, ‘বাড়িও গেছে, ফসলও গেছে। আমি এখন সর্বহারা। ফসল তুইল্লা ঋণধার শোধতো দূরের কথা, এখন নতুন কইরা ঋণের জালে পড়লাম। সরকার যদি এহন সহায়তা না করে, তাহলে আমি এক্কেবারে শেষ। কিন্তু সরকারের কোনো লোকতো দেখতেও আসলো না, আমরা বাঁইচ্চা আছি, নাকি মইরা গেছি।’
ঢলে ভেঙে পড়েছে বিধবা বানেছা বেগমের একমাত্র থাকার ঘরটি। ভেসে গেছে সব জিনিসপত্র। সব হারিয়ে শূন্য ভিটায় বসে থাকা বানেছা বেগম বলেন, ‘আমারতো আর কিছু নাই। আমি এখন এই ভাঙা ঘর কীভাবে করব কিছুই জানি না। আমারতো কোনো উপায় নাই। যদি কেউ আমারে সাহায্য না করে, আমারতো কোনো গতি নাই।’
গৃহবধূ কিরণ মালা বর্মণ বলেন, আমার বয়সে এত পানি দেখি নাই। বন্যার পানি আমাদের যে ক্ষতিটা করেছে, এখন আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমরা এখন খুব কষ্টে আছি, চিন্তায় আছি। সরকার থেকে আমাদের কিছু না করলে আমরা দাঁড়াতেই পারব না।
জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব মতে, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এবার এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৬ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও আমন, সবজি চাষ এবং আদা ও কৃষি ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে প্রায় ৫২৪ কোটি টাকার মতো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকার।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এজিইডি) রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১৩ কোটি টাকার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী তীর রক্ষা বাঁধ ও বেড়িবাঁধ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক/ব্রিজ, কালভার্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকার।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বন্যাকবলিতদের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কেউ অভুক্ত থাকবে না। উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগ, সংস্থা, সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ত্রাণ তৎপরতা চলছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিক একটি তালিকা তৈরি করে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই পুনর্বাসন কাজ শুরু হবে।
সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী, মেডিকেল স্টুডেন্ট, চিকিৎসকসহ ৪টি মেডিকেল টিম ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তায় কাজ করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি, এখন ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি পুনর্বাসন সহায়তা খুবই প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে তাদের জন্য কিছু করা উচিত।
আরও পড়ুন: শেরপুরে বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
৪১৭ দিন আগে
কৃষির উন্নতি নিয়ে সরকার কাজ করছে: কৃষি উপদেষ্টা
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কৃষির উন্নতি নিয়ে সরকার কাজ করছে।
তিনি বলেন, কৃষকের উন্নতি না হলে কৃষির উন্নতি হবে না। আর কৃষির উন্নতি না হলে দেশের উন্নতি হবে না।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) উপদেষ্টা গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ইতালির ভিসা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে, আশা উপদেষ্টা তৌহিদের
উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আমাদের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি। এখন জনসংখ্যা বেড়েছে কিন্তু আবাদযোগ্য ভূমি বাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, এই জমিতে দেশের ১৭ কোটিরও বেশি লোকের খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এই কৃষিখাত। এ খাতের যথাযথ মূল্যায়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি বন্যাকবলিত এলাকায় কৃষকদের বীজ, চারা ও নগদ অর্থ পাঠানো হয়েছে। যেসব জায়গায় ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেখানে অন্য জায়গা থেকে আমনের চারা উৎপাদন করে দেওয়া হয়েছে। ২২ তারিখের পর আমন ধান আর রোপন করা যাবে না। সেসব জাগায় সরিষাসহ অন্যান্য ফসল কীভাবে চাষাবাদ করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
বাজার সিন্ডিকেটের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার মনে হয় খুব শিগগিরই বাজার সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। যদি কোনো সিন্ডিকেট থাকে সেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভেঙে দেবে।
আসন্ন দুর্গাপূজা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দুর্গাপূজা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। এবারের পূজা খুব ভালোভাবে হবে। কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না। এজন্য আপনাদেরও সহযোগিতা চাই।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবার পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকে। এবার র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও এয়ারফোর্সও মোতায়েন করা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আব্দুল্লাহ ইউছুব আকন্দ, জেলা প্রাশাসক নাফিসা আরিফীন, পুলিশ সুপার আবুল কালাম।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার অবস্থান জানে না সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
৪২২ দিন আগে
কৃষিকে কৃষকবান্ধব করতে হবে: কৃষি উপদেষ্টা
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কৃষিকে কৃষকবান্ধব করতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষকবান্ধব সরকার তখনই হবে যখন কৃষকরা সঠিকভাবে বীজ ও সার পাবে এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন কৃষি উপদেষ্টা।
আরও পড়ন: স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সমস্যাগুলো বুঝতে হলে দায়িত্বশীলতা বুঝতে হবে: উপদেষ্টা
উপদেষ্টা বলেন, সার নিয়ে যাতে কোনো সংকট না হয় তার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কৃষকদের অবহিত করবেন, তারা যেন আতঙ্কিত না হয়।
দেশের বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য কাজ করতে উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
এছাড়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি খাতের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা তা অব্যাহত রাখতে সবাইকে সচেষ্ট থাকার নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কৃষি খাতের অগ্রগতির মূল কৃতিত্ব কৃষকদের। কৃষকরা উৎপাদন করে ভোগান্তিতে পরে, তারা ন্যায্য দাম পায় না। এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া কৃষিখাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
মত বিনিময়কালে উপদেষ্টা সার ও বীজ সরবরাহ, পতিত জমি আবাদের আওতায় আনা, শস্য বহুমুখীকরণ, ফল-ফলাদির চাষ বৃদ্ধি ও মৌসুমি ফল রপ্তানি বাড়ানো, ইউরিয়া সারের ব্যবহার হ্রাস, বন্যা পরবর্তী জমির উপযোগী ফসল চাষ, শুষ্ক এলাকাকে সেচ ব্যবস্থার আওতায় আনাসহ কৃষি খাতকে আরও কার্যকর ও কৃষকবান্ধব হওয়ার বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং এসব বিষয়ে অবগত হন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী।
আরও পড়ন: সরকারের উদ্দেশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা: উপদেষ্টা
৪৩৫ দিন আগে