কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে সরিষার ফুল থেকে মধু উৎপাদনে অর্থনৈতিক বড় উন্নয়ন হবে।
কৃষি অফিস জানায়, মানিকগঞ্জে এবার বোরো মৌসুমে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে সরিষা ফুলের মাঠ আর একারণেই সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে এসেছেন অর্ধশত মৌচাষী। সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌবাক্স বসিয়ে সংগ্রহ করছেন মধু।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এবছর জেলায় সরিষার চাষ বেড়েছে। বেড়েছে মৌচাষীর সংখ্যাও। চলতি মৌসুমে ৮৩ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে যা আড়াই কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
সরেজমিন দেখা গেছে, মানিকগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষীরা।
মৌচাষীরা জানান, ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া মধু সংগ্রহের এই কাজ চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জেলার সাত উপজেলায় অর্ধশত মৌচাষী খামারে সাড়ে আট হাজার মৌবাক্স বসিয়েছেন। প্রতি বাক্সে কয়েক হাজার পোষা মৌমাছি রয়েছে। মৌমাছিরা সকাল হতেই বাক্স থেকে বেরিয়ে পড়ে। সারাদিন আশপাশের সরিষার ক্ষেতের ফুল থেকে মধু আহরণ করে বাক্সে ফিরে নির্দিষ্ট প্লেটে মধু জমাট করে। প্রতিটি খামারে লাখ লাখ মৌমাছি এভাবে মৌবাক্সে মধু জমাতে থাকে।
মৌচাষীরা জানান, সপ্তাহে একবার করে বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন তারা। সপ্তাহে প্রতি বাক্স থেকে ৪ থেকে ৫ কেজি মধু পাওয়া যায়। এভাবে শতাধিক বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ১২ মন মধু সংগ্রহ হয়। এবছর শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশার প্রকোপ কম থাকায় মৌমাছিরা স্বাভাবিকভাবে মধু আহরণ করতে পারছে। এতে মধুও সংগ্রহ হচ্ছে বেশি। গতবছরের তুলনায় এবার অধিক পরিমাণ মধু সংগ্রহ করা যাবে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মুলজান এলাকায় মৌ খামারের মালিক সেলিম মোল্লা জানান, গত কয়েক বছর ধরে শীতের সময়ে তিনি মানিকগঞ্জে আসছেন সরিষার মধু সংগ্রহ করতে। গত বছর তিনি দেড়শ মৌবাক্স বসিয়েছিলেন। এতে তিন মাসে তিনি প্রায় দেড়টন মধু সংগ্রহ করেছিলেন। এবারও সমপরিমান মৌবাক্স বসিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় এক টন মধু সংগ্রহ করে বিক্রিও করেছেন। সামনের দিনগুলোতে আরও আধা টন মধু সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
একই উপজেলার নওখন্ডা গ্রামে ১০০ মৌবাক্স নিয়ে খামার করেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও মৌ খামার। ওই খামারের মৌচাষী মজিবর রহমান জানান, এপর্যন্ত দেড় টন মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে ৪০০ টাকা কেজি দরে বেশিরভাগ মধু বিক্রি করেছেন। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মধু বেশি সংগ্রহ করা যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
বিভিন্ন এলাকা থেকে মধু কিনতে এসে ক্রেতারা জানান, শীতের এই সময়টাতে মধুর চাহিদা বেশি থাকে। খাঁটিমানের মধু পাওয়ায় এবং দামে সস্তা পাওয়ায় তারা খামার থেকে সরিষা ফুলের মধু কিনেন। এছাড়া ডাবর, এপি, হামদর্দসহ আয়ুর্বেদিক ও দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানও এসব খামার থেকে কয়েক মন মধু কিনে নেন। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বর্তমানে প্রতি কেজি মধু বিক্রি করছেন ৩০০ টাকায়। আর পাইকারী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয় প্রতি কেজি মধু।