এনবিআর সূত্র জানায় যে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ফাস্ট ফুডের দোকান, কনফেকশনারি, জুয়েলারি, বিউটি পারলার, তৈরি পোশাক বা বুটিকের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সাধারণ বা সুপারসপ, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বড় স্টোরসহ ২৪ ধরনের ব্যবসায় মূসক ফাঁকি ঠেকাতে ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ হাজার ইএফডি ক্রয়ের আদেশ দেয়া হয়েছে।
এভাবে ক্রমান্বয়ে এক লাখ ইএফডি ক্রয় করবে রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষ।
এনবিআরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরের শুরুতে সরকার ইএফডি কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল। সেই ঘোষণা অনুসারেই এখন ক্রয় আদেশ দেয়া হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, চীনা কোম্পানি এসজেডজেডটি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি লিমিটেড এসব ইএফডি সরবরাহ করবে এবং সেগুলো পাওয়ার পর বিভিন্ন ব্যবসায়ী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
আগামী এক মাসের মধ্যে ব্যবসায়ী কর্তৃপক্ষের কাছে ইএফডি পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মূসক পরিশোধে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ইএফডি সহায়তা করবে এবং কর ফাঁকি ঠেকাবে।’
এর আগে মূসক ফাঁকি ঠেকাতে সিটি করপোরেশন ও জেলা শহরগুলোতে ২৪ ধরনের ব্যবসায় ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার। এ ক্ষেত্রে এনবিআর একটি আদেশও জারি করে।
নতুন ইএফডিগুলো বিদ্যমান ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) এবং পয়েন্ট অব স্কেলের (পিওএস) জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে।
এনবিআরের আদেশ অনুসারে, যেসব আউটলেটে বছরে মূসকমুক্ত লেনদেনের চেয়ে বেশি লেনদেন হবে অর্থাৎ ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে, তাদের জন্য ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
এনবিআর বলছে, ইএফডি হলো ইসিআরের অত্যাধুনিক সংস্করণ, যা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার না করলে আইন অনুযায়ী ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। একই ধরনের অপরাধ পুনরায় করলে এনবিআর ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচিতি নাম্বান (বিআইএন) কেড়ে নেবে।
জানা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে থাকা ইএফডিগুলো অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্ভারের সাথে যুক্ত থাকবে। ওই সার্ভারে প্রবেশের জন্য অবশ্যই নিবন্ধন থাকতে হবে।
এনবিআর কর্মকর্তা জানান, ‘এটা একদিকে যেমন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, অপরদিকে কর ফাঁকি দূর করবে এবং রাজস্ব সংগ্রহে গতি বাড়বে।’
তিনি বলেন, নতুন ডিভাইসের মাধ্যমে ক্রেতারাও মূসক দেয়ার সাথে সাথে জানতে পারবেন যে সেটা জাতীয় কোষাগারে জমা হয়েছে কি না। মূসক দেয়ার পর তাদের কাছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে দেয়া একটি কোড নাম্বার চলে যাবে।
২০০৮ সাল থেকে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কনফেকশনারি, জুয়েলারি, বিউটি সেলুন, পাইকারি বিক্রেতা ও বড় আকারের খুচরা বিক্রেতাসহ ১১ ধরনের ব্যবসায় ই-ক্যাশ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করেছিল এনবিআর। কিন্তু সে উদ্যোগ প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল হয়নি।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের নির্ধারিত মাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়, লাভ ও মূলধনের ওপর কর থেকে আসবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা এবং মূসক থেকে আসবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা।
এছাড়া, সম্পূরক কর থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি, আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি এবং অন্যান্য কর থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে।