এনবিআর
রপ্তানি তথ্যে অসঙ্গতির জন্য এনবিআর ও ইপিবিকে দায়ী করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দেশের রপ্তানি আয়ের হিসাব থেকে শত শত কোটি ডলারের তথ্য মুছে ফেলার ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, রপ্তানি তথ্যের হিসাবে অসঙ্গতির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দায়ী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেরিফিকেশন সিস্টেমে গত দুই অর্থবছরে ২০ মাসে আনুমানিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের গরমিল পাওয়া গেছে।
সরকারকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক চিঠিতে এ ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, এই বিশাল ঘাটতির সঙ্গে দেশের বিভিন্ন আর্থিক পরিসংখ্যান উল্টে গেছে।
আরও পড়ুন: সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ
রপ্তানি কমে যাওয়ায় চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত থেকে ঘাটতিতে চলে গেছে। আর রপ্তানির বিপরীতে রেমিট্যান্স আসার লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ায় রাজস্ব খাতে ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত হয়েছে।
ওই চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এক বৈঠকে এনবিআরের প্রতিনিধি ইতোমধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন। সেখানে তিনি জানান, একই পণ্য রপ্তানির জন্য একাধিক রপ্তানি হিসাব রয়েছে, যা সার্ভারে নতুন করে ইনপুট দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকের শাখা থেকে রপ্তানি আয়ের তথ্য সংগ্রহ করে। ফলে ডাটা ও প্রকৃত রপ্তানির মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংগ্রহ করা এবং ইপিবি প্রকাশিত রপ্তানি তথ্যের মধ্যে অসঙ্গতির কারণ চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, একই রপ্তানি তথ্য এবং পণ্যের এইচএস কোড একাধিকবার ইনপুট করা হয়েছে।
পণ্যের কাটিং, মেকিং ও ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু ম্যানুফ্যাকচারিং চার্জ দিতে হয়। তবে কাপড়সহ সব অংশের হিসাব রেখেছে ইপিবি। ইপিবি অনেক সময় নমুনা পণ্যের দামও ইনপুট করেছে, যা নমুনা পণ্যের মূল্য হিসেবে আসার কথা নয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নেট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর, স্ত্রী ও ছেলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য অপসারিত কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৪ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন) আমিনুল ইসলাম জানান, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মীর আহম্মদ আলী সালাম।
ঈদুল আজহার আগে ছেলের ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। এরই মধ্যে গতকাল রবিবার মতিউর রহমানকে এনবিআরের পদ থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক পিএলসির পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাকে।
মতিউর রহমানের ছেলের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে কথিত বিনিয়োগসহ বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে এরপর থেকেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মতিউর রহমান।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে রবিবার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দুদক।
আরও পড়ুন: ছাগল-কাণ্ডে মতিউরকে এনবিআরের পদ থেকে অপসারণ
অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন ট্র্যাক করতে এনবিআরকে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ
লাখ টাকা দামের অনিবন্ধিত মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি (টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টারস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ) আয়োজিত ‘দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ নির্দেশনা দেন।
দেশে ব্যবহৃত নিবন্ধিত মোবাইল ফোনের ডাটাবেইজ বিটিআরসিকে সংরক্ষণ এবং তা প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এনবিআর ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে তাৎক্ষণিক সরবরাহেরও নির্দেশ দেন পলক।
আরও পড়ুন: বিনিয়োগ ছাড়াই নগদের কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার: পলক
প্রতি বছর দেশে প্রায় ৫ কোটি মোবাইল ফোনের চাহিদা থাকে জানিয়ে পলক বলেন, ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩ কোটি মোবাইল ফোন বাংলাদেশে সংযোজন বা উৎপাদন করতে পেরেছিলাম। বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছিল, আবার কিছু অবৈধ পথে এসেছে। ২০২৩-২৪ সালে এসে উৎপাদনের সংখ্যাটা কমে গেছে। কিন্তু মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা কিন্তু কমছে না।
পলক আরও বলেন, আমাদের মোবাইলের রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম এবং কাস্টমস থেকে ট্যাক্স পেইড আমদানি করা মোবাইলে ফোনের ডেটাবেজ যেন বিটিআরসিতে সংরক্ষিত থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযানে গেলে যেন সঙ্গে সঙ্গে তথ্য পেয়ে যায় সেজন্য এই ব্যবস্থা।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন করছি। আমরা নিয়ন্ত্রণের থেকে সম্প্রসারণের দিকে নজর দিচ্ছি যাতে করে কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়, রপ্তানি আয় বাড়ানো যায়। আইনে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং মোবাইল ফোনের বিষয়টি অনুপস্থিত ছিল। আইনে সংযোজন করে অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীদের প্রতিরোধ করে নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এনইআইআর সিস্টেম আপডেট করা হবে জানিয়ে পলক করেন, এই সিস্টেমে যাতে সবাই রেজিস্ট্রেশন করেন তার জন্য সচেতনতামূলক বার্তার মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য সবাই রেজিস্ট্রেশন করবেন। বিদেশ থেকে কোনো ফোন নিয়ে এলে নিবন্ধন করতে বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিটিসিএলের সম্পদের লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে: পলক
পলক বলেন, ‘আর তা না হলে আমরা এনবিআরকে অনুরোধ করব, ডেটাবেজ দেখে যে ফোনের দাম দুই লাখ, এক লাখ, ৫০ হাজার; তারা নিশ্চয়ই ট্যাক্স দেওয়ার যোগ্যতা রাখে। তাহলে এনবিআর সেই ডেটাবেজে ঢুকে অনিবন্ধিত ফোন ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা ব্লক করব না, কিন্তু এনবিআরকে ডাটাবেইজ ব্যবহারের সুবিধা দেব।’
রেগুলোর মার্কেট মনিটরিং করার ইচ্ছা জানিয়ে পলক বলেন, ডিবি প্রধানকে অনুরোধ করব, অবৈধ হ্যান্ডসেট যেগুলো চোরা পথে বা গ্রে চ্যানেলে এসেছে সেগুলোর বিরুদ্ধে যেন একটা অভিযান শুরু করেন।
রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলেও জানান পলক।
টুজি এবং ফোরজি ফোনের ইন্টিগ্রেশনের দাবির বিষয়ে পলক বলেন, ‘সেটা আমরা বিবেচনা করব। তবে আমরা চাই স্মার্টফোন পেনিট্রেশন বাড়াতে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা থাকবে।’
সেমিনারে আরও ছিলেন- বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, বিটিআরসির মহাপরিচালক মনিরুজ্জামান জুয়েল, রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংক ডিজিটালের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, মটব মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার, মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শাহিদ।
টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
আরও পড়ুন: বুয়েটে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক ন্যানো ল্যাব স্থাপনের ঘোষণা প্রতিমন্ত্রী পলকের
আগামী দুই অর্থবছরে রাজস্ব সংগ্রহের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা সরকারের
২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে উচ্চাভিলাষী রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য এ লক্ষামাত্রা ৫ হাজার ৮৭২ বিলিয়ন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ হাজার ৯৭ বিলিয়ন টাকা। তবে ডিজিটালাইজেশনের পরিধি বাড়ানো এবং ব্যক্তি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে কর পদ্ধতি সহজ করার ওপর এ বিষয়টি নির্ভর করছে।
এছাড়াও রাজস্ব বাড়াতে প্রত্যক্ষ কর ও মূল্য সংযোজন করের ওপর নজর দিচ্ছে সরকার। কর নেট সম্প্রসারণ ও কর কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর অব্যাহতির যে ব্যাপক সুযোগ রয়েছে সে বিষয়টি যৌক্তিকতা যাচাই করতে এবং বাজেট বক্তৃতায় আরও স্বচ্ছতা আনতে সরকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৪-২৫ থেকে ২০২৫-২৬) অনুযায়ী, কর রাজস্ব খাত থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার ৩৪৩ বিলিয়ন টাকা এবং ২০২৫-২৬ সালে ৬ হাজার ৪৬৩ বিলিয়ন টাকা আসবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী দুই অর্থবছরে যথাক্রমে ৫০ হাজার ৯৫ কোটি টাকা এবং ৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা দেবে।
আরও পড়ুন: চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.০৭%
আয়কর শাখা থেকে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত সংগ্রহ হবে ১ হাজার ৭৫৩ বিলিয়ন টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১২৩ বিলিয়ন টাকা। আমদানি শুল্ক থেকে আদায় হবে যথাক্রমে ১ হাজার ৫১১ বিলিয়ন টাকা এবং ১ হাজার ৮৩০ বিলিয়ন টাকা।
আর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে রাজস্ব আদায় হবে যথাক্রমে ১ হাজার ৮৩১ বিলিয়ন টাকা এবং ২ হাজার ২১৮ বিলিয়ন টাকা।
২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এনবিআর বহির্ভূত কর হবে যথাক্রমে ২৪৮ বিলিয়ন টাকা এবং ২৯২ বিলিয়ন টাকা।
কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায় হবে যথাক্রমে ৫২৯ বিলিয়ন টাকা এবং ৬৩৪ বিলিয়ন টাকা।
চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৫০০ বিলিয়ন টাকা রাজস্ব করসহ মোট ৫ হাজার বিলিয়ন টাকা। মোট রাজস্বের মধ্যে এনবিআর থেকে আসবে ৪ হাজার ৩০০ বিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে আয়কর থেকে ১ হাজার ৪৮০ বিলিয়ন টাকা, আমদানি শুল্ক থেকে ১ হাজার ২৭৫ বিলিয়ন টাকা, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪৫ বিলিয়ন টাকা।
অন্যদিকে এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে প্রায় ২০০ বিলিয়ন টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব খাত থেকে ৫০০ বিলিয়ন টাকা আদায় করা হবে।
আরও পড়ুন: চলতি অর্থবছর ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ ২১৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে
মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত রাজস্ব আয় এবং পরবর্তী দুই বছরের আনুমানিক রাজস্ব আয়ে যে উচ্চ স্থিতিস্থাপকতা এবং ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি দেখা যায়, তাতে রাজস্ব সংগ্রহের জোরালো আভাস পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজস্ব সংগ্রহে কর ও কর-বহির্ভূত অংশগুলোর মধ্যে, কর-বহির্ভূত অংশের তুলনায় কর রাজস্ব আরও ক্রিয়াশীল ও স্থিতিস্থাপক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও এই তথ্যউপাত্তে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ন্যূনতম জিডিপি থেকে সামগ্রিক রাজস্ব ১ দশমিক ৬৫ গুণ বেশি বাড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে।
বিবৃতি অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য জিডিপির রাজস্ব স্থিতিস্থাপকতা গত অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ২৮ গুণ বেশি এবং পরবর্তী অর্থবছরে এটি ১ দশমিক ৪০ গুণ বেশি হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে জিডিপির কর রাজস্ব স্থিতিস্থাপকতা ১ দশমিক ৩৩ গুণ বেশি হবে, যা পরবর্তী অর্থবছরে ১ দশমিক ৫০ গুণ বেশি এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ দশমিক ৬৬ গুণ বেশি হবে।
চলমান অর্থবছরের জন্য জিডিপির কর-বহির্ভূত রাজস্ব স্থিতিস্থাপকতা চলতি অর্থবছরে ০.৯২ গুণ বেশি, পরবর্তী অর্থবছরে ০.৪৭ গুণ বেশি এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১.৫৭ গুণ বেশি হবে।
অন্যদিকে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে করের রাজস্ব প্রকৃত জিডিপির প্রবৃদ্ধির চেয়ে ৯৮ শতাংশ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নীতি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজস্ব সংগ্রহ একটি দেশের উন্নয়ন করতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশ হতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১)’- অনুযায়ী রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ২০৩১ সালের মধ্যে ১৯.৫৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ২৪ শতাংশে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির ১১.২% কর আদায়ের লক্ষ্য সরকারের
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তবে বাংলাদেশ সমন্বিত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়নি। রাজস্বের একটি বড় অংশ আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংগৃহীত প্রত্যক্ষ (আয়কর) এবং পরোক্ষ কর (ভ্যাট এবং শুল্ক) থেকে। এছাড়াও এনবিআরবহির্ভূত কর এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) হিসেবেও সামান্য অংশ আসে।
এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য কম রাজস্ব সংগ্রহের কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। অর্থনৈতিক কাঠামো (বৃহৎ অনানুষ্ঠানিকতা এবং অব্যাহতি), কাঠামোগত দুর্বলতা (জটিল প্রক্রিয়া এবং তথ্যের অসামঞ্জস্য) এবং সাংস্কৃতিক কারণ (কর প্রদানের প্রতি উদাসীনতা) কম রাজস্ব সংগ্রহের উল্লেখযোগ্য কারণ।
নীতিগত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতে সহায়তা নিয়ে সরকার কর প্রদান পদ্ধতি সহজীকরণ, কর বিধি যেন সহজে বুঝা যায় এবং কর অব্যাহতি যেন যৌক্তিক হয় সে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
এতে আরও বলা হয়, কর প্রশাসনের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের সুযোগ, স্বচ্ছতা ও অনুমানযোগ্যতা আনতে ডিজিটালাইজেশন বাড়ানো এবং কর ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনার মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহে সাফল্য জোরদার করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: এডিবি'র সর্বশেষ প্রতিবেদন: ২০২৪ অর্থবছরকে বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো বছর হিসেবে পূর্বাভাস
৭ মাসে ২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় এনবিআরের, প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের বেশি
২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আদায় বেড়েছে ১৫.০৯ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫১ শতাংশ।
৭ মাসে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছে রাজস্ব বোর্ড। এতে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি পেলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ১৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।
বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা হিসাব করলে ঘাটতি আরও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তবে সম্প্রতি এই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ আত্মা’র
রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকপণ্যের দাম ও কর কার্যকরভাবে বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলনকক্ষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এই দাবি জানায় সংগঠনটি। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
এ সভায় আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জন সম্ভব হবে। এই বর্ধিত রাজস্ব চলমান আর্থিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় পাঁচ লাখ তরুণসহ মোট ১১ লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করেন, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একইসময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকের দাম কমবে: প্রজ্ঞা
সভায় আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব জানায় আত্মা। প্রতি ১০ শলাকা মধ্যম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা, উচ্চ স্তরের খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এই তিনটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।
এছাড়াও ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।
প্রাক-বাজেট সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অ্যাডভেলোরেম-এর পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি চালুর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
প্রাক-বাজেট সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তা, আত্মা’র প্রতিনিধি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুকান্ত গুপ্ত অলোক, আত্মা’র আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন ছিলেন।
আরও পড়ুন: তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে তামাক কোম্পানি!
নিবন্ধিত কোম্পানির ৯২ শতাংশই আয়কর রিটার্ন দাখিল করেনি: এনবিআর
দেশে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যা বাড়লেও আনুপাতিক হারে রিটার্ন দাখিল বাড়েনি বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা শেষে মাত্র ২৪ হাজার ৩৮১টি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান রিটার্ন জমা দিয়েছে। যা দেশে নিবন্ধিত মোট প্রতিষ্ঠানের মাত্র ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর অর্থ হলো- ৯২ শতাংশেরও বেশি কোম্পানি আয়কর রিটার্ন দাখিল করেনি।
রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের দাপ্তরিক নথিতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত পাবলিক ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার।
আরও পড়ুন: ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চেম্বার ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বাজেট প্রস্তাব আহ্বান করেছে এনবিআর
ওই তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে ২ দশমিক ৬৪ লাখ কোম্পানি কর পরিশোধ করেনি।
এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী, নিবন্ধনের পর লাভ-ক্ষতি যাই হোক না কেন আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ কোম্পানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করেনি।
এনবিআর কর্মকর্তা কর কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘অনেক কোম্পানি নিবন্ধন থাকা সত্ত্বেও ব্যবসা শুরু করেনি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান রিটার্ন জমা দিচ্ছে না এবং অনেকে আবার ভুয়া ঠিকানাও ব্যবহার করছে। ফলে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখতে নিউজপ্রিন্টে কর কমাতে এনবিআরের প্রতি নোয়াবের আহ্বান
সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখতে নিউজপ্রিন্টে কর কমাতে এনবিআরের প্রতি নোয়াবের আহ্বান
নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) বলছে, ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে নিউজপ্রিন্ট ও অন্যান্য মুদ্রণ সামগ্রীর বিপুল ব্যয়ে সংবাদপত্র টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।
সংবাদপত্র শিল্পের জন্য শুল্ক ও কর নীতির সংস্কার প্রয়োজন বলে রাজস্ব বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানান নোয়াব নেতারা।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলনকক্ষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: রপ্তানি বৃদ্ধিতে বন্দর ব্যবস্থাপনা সহজ করার তাগিদ
আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, বিশেষ করে মার্কিন ডলারের ক্রমবর্ধমান বিনিময় হারের কারণে এ শিল্প হুমকির মুখে। এক টন নিউজপ্রিন্টের দাম কয়েক বছর আগে ৬০০ মার্কিন ডলারেরও কম ছিল, এখন তা ৭০০ ডলারেরও বেশি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এর অন্যতম প্রধান কারণ মার্কিন ডলারের বিরূপ বিনিময় হার। সংবাদপত্রের আমদানি শুল্ক পাঁচ শতাংশ থাকলেও ১৫ শতাংশ ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর, পরিবহন বিমা ইত্যাদি নিয়ে ল্যান্ডেড কস্ট আসে প্রায় ৩০ শতাংশ।’
সংবাদপত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স, ভ্যাট ও কাস্টমস কমানোর আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্র শিল্পের উন্নয়নে সরকার গত কয়েক বছরে আমাদের কোনো পরামর্শ গ্রহণ করেনি। এ বছরের বাজেটে আমাদের প্রস্তাবগুলো যেন বিবেচনায় নেওয়া হয়।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘কর প্রদান একটি সর্বজনীন বৈশ্বিক অনুশীলন। আপনি অন্যান্য দেশের দিকে তাকান- দেখতে পাবেন কীভাবে সংবাদপত্রের ব্র্যান্ডিং হয়, কীভাবে এখান থেকে রাজস্ব নেওয়া হয়।’
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি নিহত
তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর জানি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় সংবাদপত্রের কাছ থেকে ভিন্নভাবে ট্যাক্স নেওয়া হয়। তাদের ট্যাক্স আরও কম।’
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম নোয়াবের প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, কোনো সুবিধা পেলে আরেক গোষ্ঠী তার অপব্যবহার করতে প্রস্তুত রয়েছে। নিউজপ্রিন্টের জন্য কাগজের দাম বা আমদানি শুল্ক কমানো হলে সব কাগজ নিউজপ্রিন্টের আওতায় চলে আসবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। নিউজপ্রিন্টের জন্য কত কাগজ আসছে তা বের করা সম্ভব হচ্ছে না। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করতে চাই।’
রাজস্ব বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর-জিডিপি ও করের হার বাড়াতে গণমাধ্যম সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘শরিফার গল্প’ থেকে দুই লাইন বাদ দেওয়ার দাবি জাতীয় পার্টির চুন্নুর
তৈরি পোশাকের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে এনবিআরকে অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ
পোশাক শিল্পের জন্য শুল্ক প্রক্রিয়া সহজ ও ঝামেলামুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) এনবিআর কার্যালয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাডমিন) ফারজানা আফরোজের সঙ্গে বৈঠক তিনি এই আহ্বান জানান।
কাস্টমস, ভ্যাট ও বন্ড সম্পর্কিত সেবাসহ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা কীভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (আরএমজি) কাছ থেকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা পেতে পারে- বৈঠকে সেই বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
বৈঠকে এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো.মুনির হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান কাস্টমস, বন্ড ও ভ্যাট সম্পর্কিত তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের বর্তমান সমস্যা, বিশেষ করে চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও উত্তেজনাপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: তৈরি পোশাক শিল্পে মূল্য সংযোজনের ওপর জোর দিতে হবে: বিজিএমইএ সভাপতি
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পোশাক রপ্তানিকারকরা কীভাবে লড়াই করছে তা তিনি উল্লেখ করেন।
হোসাইন বলেন, এনবিআরের কাছ থেকে সেবাসংক্রান্ত যে কোনো জটিলতা তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের অসুবিধাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
জবাবে ফারজানা আফরোজ পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এনবিআরের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন: ১৯ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ‘খাদি উৎসব-২০২৪’
সেরা ৫২৫ করদাতা নির্বাচন করেছে এনবিআর
কর প্রদানে উৎসাহিত করতে জাতীয় পর্যায়ে র্যাঙ্কিয়ের পর সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ে মোট ৫২৫ জন সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ১১টি সিটি করপোরেশনে ৭৭ জন এবং ৬৪টি জেলায় সর্বোচ্চ আয়করদাতা ও দীর্ঘমেয়াদী আয়করদাতা ক্যাটাগরিতে ৪৪৮ জনকে নির্বাচিত করেছে।
আরও পড়ুন: ব্যক্তিগত আয় বিবেচনায় করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে পৌঁছাতে হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
এর মধ্যে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে প্রতিটি সিটি করপোরেশন ও জেলা থেকে দু'জন করে এবং নারী ও যুব ক্যাটাগরিতে একজন সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন।
করদাতা নীতিমালা-২০০৮ এর আওতায় জেলাভিত্তিক সর্বোচ্চ ও দীর্ঘতম 'আয়কর পরিশোধের' বিধান অনুযায়ী সেরা করদাতাদের নাম প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সেরা করদাতা হিসেবে নির্বাচিত হন ১৪১ জন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৬ জন, কোম্পানি পর্যায়ে ৫৩ জন এবং অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১২ জন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২২-২৩ কর বর্ষে সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ে সেরা ৫২৫ জন করদাতার নাম চূড়ান্ত করা হয়।
এর মধ্যে প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকায় সাতজন হারে ৭৭ জন করদাতাকে সেরা করদাতা হিসেবে ট্যাক্স কার্ড ও পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া প্রতিটি জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে সাতজন করে এই কার্ড পাবেন।
আরও পড়ুন: জুলাই-অক্টোবরে রাজস্ব আদায় ১৪.৩৬% বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে: এনবিআর