এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের খেত থেকে সরাসরি বাঁধাকপি কিনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সিঙ্গাপুরের বাজারে রপ্তানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের মাঠ থেকে প্রথম চালানে ২০ হাজার কেজি বাঁধাকপি রপ্তানি হয়েছে। এতে কৃষকের চোখে-মুখে এখন হাসির ঝিলিক।
সূত্র জানায়, সিটি ইমপেক্স নামে ঢাকার এক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের কাছ থেকে বাঁধাকপি কিনে প্রক্রিয়াজাত করে জাহাজে সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করছে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপির বাম্পার ফলন
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া টেকসই কৃষির উন্নয়নে ‘সফল’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে যশোর থেকে ৭৪ হাজার ৩১৪ কেজি নিরাপদ সবজি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পটল, পেঁপে, চিচিংগা, ঝিঙ্গে, বরবটি, লাউ, কলা, দেশি শিম ও বেগুন।
শাহবাজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব নদের তীরে তাবু টাঙিয়ে অস্থায়ী সবজি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় যানবাহনে করে গ্রামের মাঠ থেকে বাঁধাকপি কেটে ওই কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। শ্রমিকরা তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিউজপ্রিন্টের সাদা কাগজে মুড়িয়ে নাইলনের জালের ব্যাগে ভরে কাভার্ড ভ্যানের ভেতর সাজিয়ে রাখছেন।
চলতি মৌসুমে বিদেশে বাঁধাকপি রপ্তানি কার্যক্রম গত মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হয়।
রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের উপপরিচালক (রপ্তানি) সামছুল আলম। এছাড়া কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাসহ নানা পর্যায়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইউরিয়া সার রপ্তানি: বিসিআইসি ও নেপালের কেএসসিএলের মধ্যে চুক্তি
রপ্তানিকারক শরিফুর রহমান জানান, যশোর থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে বাঁধাকপি চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়া হবে। পরে বিশেষায়িত কন্টেইনারে ভরে জাহাজে করে তা সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। জাহাজের চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে শুকনো খাদ্য ও আলুসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছি। কিন্তু বাঁধাকপি এ প্রথমবারের মতো রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথম চালানে ২০ হাজার কেজি বাঁধাকপি পাঠানো হচ্ছে। পণ্যের গুণগতমান ঠিক থাকলে ও ক্রেতাদের মন রক্ষা করতে পারলে সপ্তাহে অন্তত দুটি চালান রপ্তানি করা যাবে। এতে কৃষকরাও লাভবান হবেন।’
আরও পড়ুন: ইউরোপে কমলেও, খুলনাঞ্চলের চিংড়ির রপ্তানি বেড়েছে জাপানে
শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক মবিন বলেন, ‘সাত বিঘা জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছি। প্রথম দিনে রপ্তানির জন্য তিন হাজার বাঁধাকপি বিক্রি করেছি। আট থেকে নয় টাকা করে প্রতিটা কপির দাম পাওয়া গেছে। স্থানীয় সবজির বাজারে এখন মানভেদে পাঁচ থেকে সাত টাকা দরে প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি রপ্তানি হওয়াতে আমরা লাভবান হচ্ছি। এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে।’
কৃষক রেজাউল বলেন, ‘এ বাঁধকপির চাষ পদ্ধতি একটু ভিন্ন। খেতে কীটনাশক প্রয়োগ করা যায় না। কেঁচো সার ও জৈব বালাইনাশক দিয়ে চাষ করতে হয়। এ জন্য এ সবজি নিরাপদ। আমরা আগে থেকে কৃষি বিভাগের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে কৃষি বিভাগ আমাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে। এবার ৪৮ হাজার বাঁধাকপি রোপণ করেছি। প্রথম দিনে পাঁচ হাজার বিক্রি করেছি। দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ রপ্তানির পরিকল্পনা নেই: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
সফল প্রকল্পের পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষকের মাঠের সাথে রপ্তানিকারকের সরাসরি সংযোগ স্থাপন হওয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমেছে। বাজারে পণ্য তোলার পরে হাটমালিককে যে খাজনা দিতে হয় তা এখন দেয়া লাগে না। এতে সরাসরি কৃষক ও রপ্তানিকারক লাভবান হচ্ছেন। টেকসই এ কার্যক্রমে কৃষি বিভাগ সরাসরি তত্ত্বাবধান করছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যশোর জেলায় মোট ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ রয়েছে। এর মধ্যে বাঁধাকপি রয়েছে ৭৫ হেক্টর। জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বছরে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর সবজি এখানে উদ্বৃত্ত থাকে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। এমনকি বিদেশেও এখন রপ্তানি হচ্ছে।