এর মধ্যে কোনোটা একেবারেই অনুমোদন নেই, কোনো কোনোটা অনুমোদনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির সাথে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি করা এক জরিপ তুলে ধরে মন্ত্রী আরও বলেন, যে ভবনগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং একেবারে পরিকল্পনাহীন, আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
মন্ত্রী জানান, কোনো কোনো ভবন ভেঙে দেয়া হয়েছে, কোনো কোনো ভবনের আদালতে মামলা রয়েছে এবং কোনোটার আবার ভবন সংশোধন করবেন বলে লিখিত দিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে বাড়ি নির্মাণে ফুটপাতের অংশ ব্যবহার করেছে এ বিষয়টা আমি জানি না। মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর এরকম আর হবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘অতিতে কেউ অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করলে ভেঙে দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হতো বা ব্যবস্থা নেয়া হতো। এখন আমি আইন জারি করেছি যে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করলে তার সাথে যে পরিদর্শক বা কর্মকর্তা ছিলেন, তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। এমনটা হলে আশা করি এ জাতীয় প্রবণতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবো।’
রাজউক থেকে পরিকল্পনা অনুমোদন করতে ১৬টি সংস্থা থেকে অনুমোদন নেয়া লাগতো জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখন মাত্র চারটি সংস্থা থেকে অনুমোদন করতে পারবেন। আগামী মে থেকে যা শতভাগ কার্যকর করা হবে।
আগে ফাইল অনুমোদনের জন্য টেবিলে টেবিলে ধরনা দিতে হতো জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা অনলাইনে করে দিয়েছি। টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে অনলাইনে শুধু রিসিট কপি সাবমিট করতে হবে। সেখানে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে অনুমোদন হয়েছে কী না। আর কারো কাছে ধরনা দিতে হবে না।’
রাজউকের লোকবল কম থাকায় পরিকল্পনা অনুমোদনের পর তদারকি না থাকায় অনুমোদন অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এখন আর এটা হবে না। ১ মে থেকে ডিজিটাল সিস্টেম অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হবে।
রাজউকের গতি বৃদ্ধির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জনবল চাওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাজউক ঢাকা -সাভার -মানিকগঞ্জ -নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রাখা সম্ভব না। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের মতো বিভাজন প্রয়োজন।
‘প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে রাজউককে প্রশাসনিক ভাবে দুইটা ভাগ করে দেবো যাতে প্রত্যেকের দায়িত্ব পরিসর তার নিজের নিকটবর্তী জায়গায় থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।
জাতীয় গৃহ নীতিমালা কঠোরভাবে কার্যকর করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ধরুন একটি বাড়ির মালিক তার বাবার মৃত্যুর পর তার নামটা কর্তন করে সন্তানের নামে যাবে, সেখানে ৫৩ দিন সময় লাগতো। এখন মাত্র একদিন লাগবে।’
‘গৃহায়ন নীতিমালায় আগে একটি ফাইলে পর্যায়ক্রমে কেরানি-সহকারী পরিচালক-উপ পরিচালক-পরিচালক এভাবে স্বাক্ষন করে অনুমোদন হতো। এখন একজন অফিসার ফাইলে স্বাক্ষর করে অনুমোদন দিতে পারবে।’
নিজ মন্ত্রণালয়ের চ্যাল্যেঞ্জ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তি কম, জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা ও কোনোরকম হয়রানি না করা- এই তিনটি আমার প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। এগুলো বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ।’
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাব) কমিটি নিয়ে গৃহায়ণ মন্ত্রী বলেন, পূর্বে অনেক মন্ত্রী ছিল, যারা বর্তমান সরকারের মন্ত্রীসভায় নেই। নতুন কমিটি অনুমোদন হলে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
ভবন নির্মাণের সময় ধুলাবালির সৃষ্টি হয়ে পরিবেশ নষ্ট না হয় এ জন্য রাজউকের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবন নির্মাণের সময় দুর্ঘটনা রোধ এবং পরিবেশ বান্ধব করার জন্য কাভার ব্যবহার করা হয় সেই বিষয়ে আমরা খুব শিগগিরই নির্দেশ দেবো।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার আশপাশে আটটি উপশহর হওয়ার কথা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ঝিলমিল, পূর্বাচল ও উত্তরায় তৃতীয় পর্যায়ের কাজ চলমান। পাশাপাশি কেরানীগঞ্জের এপারে, আশুলিয়ার বেড়িবাঁধে এবং ওপারে আমরা একটি তিলোত্তমা গড়ে তুলবো।
তিনি আরও বলেন, পূর্বাচল হবে ঢাকার সবচেয়ে আধুনিক শহর। সব ধরনের নাগরিক সেবা থাকবে সেখানে। যত্রতত্র দোকান, বাণিজ্যক স্থান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল করতে দেয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, পূর্বাচলে কেউ চাইলেই সুউচ্চ ভবন করতে পারবে না। একটা মাপকাঠি থাকবে। পাশাপাশি ভবনগুলোও ইচ্ছামতো বানাতে পারবে না, অনুমোদনের সময় থেকেই কঠোরভাবে তদারকি করা হবে।
‘পূর্বাচল হবে ঢাকার সবচেয়ে বড় ডিজিটাল পরিবেশ বান্ধব আধুনিক শহর, যেটা গুলশান-বনানীতে নেই,’ যোগ করেন তিনি।