ঠাকুরগাঁওয়ের এক মানুষ গড়ার কারিগর ও এক সময়ের জনপ্রিয় শিক্ষক এখন প্রায় পাগল। থাকার জন্য তার জায়গা নেই, পরনের কাপড় নেই, নেই খাবারের ব্যবস্থাও।
বলা হচ্ছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খরিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের জয়নাল মাস্টারের কথা। বয়স কম করে হলেও ৭৫ হবে। এলাকার সবাই তাকে স্যার বলেই ডাকেন। জয়নাল মাস্টারের অনেক শিক্ষার্থী জীবনের সব ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। ওই বিদ্যালয়ের এক সময়ের প্রধান শিক্ষককে পরিচালনা কমিটি ‘উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়াই’ চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: খুলনায় বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের নারী শ্রমিকদের মানবেতর জীবন
করোনা: ঝিনাইদহে বন্ধ পার্ক কর্মীদের মানবেতর জীবন
এ ঘটনার পর মামলার আশ্রয় নেন তিনি। দিনে দিনে তার চাকরির বয়স শেষ হলেও মামলা এখনও শেষ হয়নি।
বিত্তবান কারো সাথে এমনটা ঘটলে মামলা দায়েরের প্রথমদিন গণমাধ্যমে ফলাও করে চলে আসত, এক্ষেত্রে জয়নাল মাস্টারের এই আইনি লড়াই দুর্ভোগের এক নিদর্শন হিসেবে বিচারের শুরুর পর্যায়েই রয়ে গেছে। সহায় সম্বলহীন এই শিক্ষা গুরু এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একাধিক রোগে তার জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন। পরনে কাপড়, থাকার ঘর, চিকিৎসা করার অর্থ, শরীরের শক্তি কোনোটাই তার নেই। কেউ দয়া করে কিছু টাকা দিলে সেটা দিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কেটে যায় তার।
এই বেঁচে থাকা মরে থাকার মতোই বলে ইউএনবি’র এ প্রতিবেদককে জানান এক সময়ের জনপ্রিয় এ শিক্ষক। যাকে এলাকার বুড়িবাঁধের পাশে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরি পরিত্যাক্ত একটি ইটের ভাঙা ঘরে খুঁজে পান তিনি। সেখানে ময়লা আবর্জনায় শুয়ে বসে দিন কাটান তিনি। আশপাশে কোনো বাড়ি ঘর নেই। দূরে রয়েছে বাড়ি ঘর। তবে স্যারের খোঁজে অনেকে আসেন। কেউ কেউ রাতে কিছু খাবার দিয়ে যান। এভাবেই কেটে যাচ্ছে তার জীবন।
আরও পড়ুন: নদীভাঙন: সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর তীরে সহস্রাধিক পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন
এলাকার স্থানীয়রা জানান, জয়নাল মাস্টার আগে পুরাতন ঠাকুরগাঁও স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। পরে খরিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু কিছুদিন পর কমিটিরি লোকজনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সে প্রায় ৫০ বছর আগের কথা। এ নিয়ে মামলা করলেও মামলা আর শেষ হয় না। প্রথমে নিজের টাকায় পরে মানুষের কাছে ধার দেনা করেও মামলা চালাচ্ছিলেন তিনি।
বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে এবং মামলা দায়েরের সময় যেসব বিচারকরা তাদের নবীন বয়সে ছিলেন তাদের অনেকেই এখন নেই। অনেকেই এসেছিলেন আবার বদলি হয়ে অন্যত্র চলেও গিয়েছেন। তবে এখনো মামলা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন: নড়াইলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে নন এমপিও, এবতেদায়ি, বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা