পাটের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের বিভিন্ন জনপদ ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে প্রতিবছরই পাট উৎপাদনে শীর্ষে থাকে ফরিদপুর জেলা। এ জন্য জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্যও পাট। উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এখানকার কৃষকরা বংশ পরম্পরায় পাটের আবাদ করে আসছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় পাট আবাদ হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার ৯৯৬ হেক্টর জমিতে। পেঁয়াজ তোলার পরপরই গত এপ্রিল মাসের মাঝামঝিতে পাট চাষিরা বীজ বপন সম্পন্ন করেছেন।
বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, এবার পাটের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বিশেষ করে বৈশাখের কোমল বৃষ্টিতে গাছগুলো লকলকিয়ে উঠেছে। জেলার বিস্তীর্ণ জমিতে এখন হাঁটু সমান পাট গাছ শোভা পাচ্ছে। তবে বিভিন্ন স্থানে গাছে পোকার আক্রমণও দেখা গেছে।
নগরকান্দার কাইচাইল ইউনিয়নের কৃষক নুরুন্নবী বলেন, ‘এইবার পাটের ভাব খুবই ভালো। এহন জমিতে নিড়ানি দিয়া দরকার। কিন্তু করোনার কারণে কিষাণ পাইতেছি না। গেছে বার ৩০০ টাকায় যাগের নিছিলাম তারা এইবার ৬০০ টাকা চায়। তাও আবার আগাম টাকা দিতে হবি।’
ওবায়দুর নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘জমিতে নিড়ানি দিতে দেরি হইয়্যা যাইতেছে। পোকা লাইগ্যা পাতা খাইয়্যা ফেলতেছে। সময় মতো জমিতে নিড়ানি না দিলি আলো বাতাস ঢুকে না। গাছ ঘন হইয়্যা যায়। বড়ও হয় না। পরে জমিতে ঢুকতে কষ্ট হয়।’
‘এইবার পাট চাষে খরচা বাইরয়া যাবেনে। বীজ-সার বাদেও অনেক খরচ। পাট নিড়ানোর পরে আবার বাছ দিতে হয়। তারপর পাট কাটা, জাগ দেয়া, বাছা এইভাবে নানা খরচ। আর সার দিতে হয় দুই-তিনবার। আবার পোকার বিষও দিতে হয়,’ বলেন ইছহাক খন্দকার নামে এক কৃষক।
এ বছর ভালো পাটের দাম কমপক্ষে আড়াই হাজার টাকা নির্ধারণ ও সারের দাম কমানোর দাবি জানান এসব কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘এক সাথে সবাই পাট চাষ করায় সবারই গাছের পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। কিন্তু করোনার কারণে এবার তাদের কৃষি শ্রমিক পেতে সমস্যা হচ্ছে। পাট গাছ ছোট থাকতেই তারা যেন জমিতে নিড়ানি দেন সেই পরামর্শ দিচ্ছি। তাতে পরবর্তীতে পাটের পরিচর্যার খরচ কমে যাবে।’
বিছা ও ছ্যাঙ্গা পোকার আক্রমণের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ উপদ্রব প্রতিবছরই কমবেশি লেগে থাকে। এটি পাট গাছের কমন পোকা। কীভাবে পোকা দমন করা যাবে সে বিষয়ে আমরা কৃষকদের নির্দেশনা দিয়েছি, লিফলেটও বিতরণ করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’