জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে যশোরে ১৩ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৫ হাজার হেক্টর জমি বেশি। গত মৌসুমে যশোরে সরিষা আবাদ হয় মাত্র ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এক বছরের ব্যবধানে কৃষক রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ করায় কৃষি বিভাগ এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ বছর বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯, বারি সরিষা-১৫, টরি সরিষা-৭ জাতসহ স্থানীয় বিভিন্ন জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। ধানের চেয়ে লাভ বেশি হওয়া কৃষক সরিষা আবাদকেই এখন বেছে নিচ্ছেন। জেলার ৮টি উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে এখন সরিষা কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
জানা যায়, গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে পাঁচ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এ জেলার কৃষকরা ধান আবাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে বোরো মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে সরিষা আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
জেলার ঝিকরগাছা এলাকার বাকড়া গ্রামের কৃষক বাবলুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার পরপরই তারা একই খেতে সরিষা আবাদ করেছেন। এ বছর আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। যে কারণে সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে খেত থেকে সরিষা তুলে সময় হয়েছে। আশা করছি এক বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ সরিষা আবাদ হবে।
প্রতি মণ সরিষা ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা বিক্রি হওয়ার ফলে সরিষা আবাদ ধান আবাদের চেয়ে দ্বিগুন লাভজনক বলে জানান তিনি।
কৃষক রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমরা ধান আবাদ করে লাভতো দূরের কথা উৎপাদন খরচ তুলতে পারিনি। অথচ সরিষা আবাদ করে দ্বিগুন লাভ করা সম্ভব। সরিষা আবাদে তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে, সময়ও কম লাগে। তেমন সেচ দিতে হয় না এবং খরচ হয় ১,৮০০ থেকে ২,০০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে ৭-৮ মণ সরিষা হয়।
তিনি আরও বলেন, সরিষা ঘরে তুলে একই জমিতে আমরা আবার পাট চাষ করবো। ফলে এক বছরে সহজে তিন আবাদ করে আমরা বেশি লাভ করতে সক্ষম হচ্ছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বিরেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, গত কয়েক মৌসুম থেকে কৃষকরা সরিষা আবাদের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। যে কারণে এক বছরের ব্যবধানে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শস্য নিবিড়তা ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য সরিষা আবাদ খুবই উপযোগী। ফলে সরিষা আবাদ করে কৃষক একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভজনক হচ্ছেন, তেমনি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও কৃষকদের বেশি বেশি করে সরিষা আবাদ করতে উৎসাহিত করছি।’