তেমনই একজন জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার ক্রীড়া বিভাগের স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক অনিক চন্দ্র দাশ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তার দুই সহকর্মীর মৃত্যুর পর অফিস নির্দেশক্রমে সবাই বাসা থেকে কাজ শুরু করেন। এর মাঝেই অফিসের সকলে করোনা পরীক্ষা করেন। এ পরীক্ষায় অন্য বেশ কয়েকজনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় অনিকেরও।
তবে গত বৃহস্পতিবার পুনরায় তার করোনা পরীক্ষার পর ফলাফল নেগেটিভ আসে। নিজের করোনা জয়ের গল্প ইউএনবিকে জানিয়েছেন সাংবাদিক অনিক।
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ খবর এলো আমাদের এক সহকর্মী করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। দিনটা ২৮ এপ্রিল। তার মৃত্যুর খবর শুনেই সেলফ আইসোলেশনে চলে যাই আমি। পরদিন খবর পাই আমার সেই সহকর্মী করোনা আক্রান্ত ছিলেন। ঝুঁকি এড়াতে তাই অফিস কর্তৃপক্ষও জানিয়ে দিল, এখন থেকে কাজ হবে বাসা থেকেই।’
‘এর কয়েকদিন পর জানতে পারলাম আমার বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এবং তার স্ত্রীর কোভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ এসেছে। এরপর ৬ মে সকালে খবর পাই যে, করোনার উপসর্গ নিয়ে আমার আরও এক সহকর্মী মারা গেছেন। স্বাভাবিকভাবেই অফিসের অন্যান্যদের মতো আমিও ভীত হয়ে পড়ি,’ বলে যান অনিক।
তিনি বলেন, তবে দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসে অফিস কর্তৃপক্ষ, ব্যবস্থা করে সকল কর্মীদের করোনা পরীক্ষার। আমার টেস্ট করানো হয় ৭ মে।
‘যদিও আমার কোনো ধরনের লক্ষণ ছিল না, তবে বিভাগীয় প্রধান আক্রান্ত হওয়ায় ঝুঁকি ছিল। ওইদিন রাতেই করোনা পরীক্ষার ফল পাই এবং জানতে পারি আমি করোনায় আক্রান্ত,’ যোগ করেন এই সাংবাদিক।
কোভিড-১৯ টেস্টের রেজাল্ট আসে আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে। আতঙ্কে মনে হচ্ছিল এই বোধহয় শেষ! দু:শ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটতে থাকে। সকালে মাকে জানানোর পর তিনিও স্তব্ধ হয়ে গেলেন।
নিজের আত্মবিশ্বাসের বর্ণনা দিয়ে অনিক বলেন, ‘এরপরই পণ করলাম, ভয়কে জয় করতে হবে। মনকে শক্ত করলাম। যোগাযোগ করলাম অফিসের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেয়া চিকিৎসকের সাথে। যেহেতু আমার কোনো লক্ষণ ছিল না, তাই আমাকে তিনি কোনো ওষুধ দেননি। শুধুমাত্র ভিটামিন খাওয়ার পরামর্শ দেন এবং বলে দেন কীভাবে গরম পানি ব্যবহারে সুস্থ হয়ে উঠতে পারি আমি।’
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ‘বি’ ও ‘ডি’ ক্যাপসুল এবং সিভিডসহ ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার খেতে থাকি। তার নেয়া বিভিন্ন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে অনিক বলেন, ‘মাল্টা ও আপেল খাই প্রতিদিন দুই বেলা। বেশি করে আদা-লবঙ্গ দিয়ে চা বানিয়ে দিনে ৩-৪ বার খেয়েছি। আদা, দারচিনি, এলাচ, রসুন, লবঙ্গ দিয়ে পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে গরম ভাপ নিতাম দিনে দুবার (সর্বোচ্চ ১০ মিনিট করে) এবং চায়ের মতো খেতাম দুই বেলা। দিনে একবার কালোজিরা এবং মধু মিশিয়ে খেতাম। গলা ভেজা রাখতে খেতাম লবন মাখানো আদা। গোসলও করতাম হালকা গরম পানি দিয়ে।’
‘এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেইনি। প্রতিদিন ঘর জীবাণুমুক্ত করতাম স্প্রে দিয়ে। আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য আমি নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি বিভিন্নভাবে।’
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, সকাল থেকেই দিনভর গলা ভেজা রাখতাম। এক কথায় নিজের সাহস ধরে রাখতে ভুলে যেতাম যে আমি করোনায় আক্রান্ত একজন রোগী। এটা ঠিক যে কখনোই কোনো শারীরিক সমস্যা হয়নি আমার, তাই স্বাভাবিক থাকতে পেরেছি সহজে, বলেন তিনি।
অনিক দাশ বলেন, করোনা আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। কারণ ভীত হয়ে পড়লে ক্ষতি হবে আরও বেশি। তাই সতর্ক এবং সাহসী হতে হবে। তাহলেই মিলবে সুস্থতা। ‘যেমনটা এই মুহূর্তে আমি অনুভব করছি। আর ঠিক ১৪ দিন পর পরীক্ষা টেস্ট করিয়েই আমার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।’
সবশেষে, আতঙ্কিত না হয়ে সকল করোনা রোগীকে সাহসের সাথে ‘করোনা’ জয়ের আহ্বান জানান তিনি।