মাঠের চারদিকে পানিতে থৈথৈ। বৃষ্টি আর ডিএনডির কৃত্রিম পানিতে নষ্ট হচ্ছে মাঠটি। এতে করে হুমকির মুখে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক এই ক্রিকেট ভেন্যুর ভবিষ্যৎ।
সরেজমিনে স্টেডিয়ামটির ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। স্টেডিয়ামের লিংক রোড সংলগ্ন গেইট দিয়ে প্রবেশের শুরুতেই দেখা যায় ময়লার স্তুপ। লিংক রোড ও স্টেডিয়ামের মাঝে থাকা পানি নিষ্কাশনের ক্যানেলটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্টেডিয়ামের কমেন্ট্রি বক্স ও অন্যান্য স্থাপনার গ্লাসগুলো ভাঙাচোরা। গ্যালারিতে দর্শকদের রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর ছাউনি কবে ভেঙে গেছে তা হয়তো ভুলে গেছে কর্তৃপক্ষ।
পরিবেশ এমন যে বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ করার সময় যে কারও কাছে মনে হবে এটি একটি পরিত্যাক্ত জায়গা। বাইরের অনুশীলন করার জায়গার অবস্থা আরও খারাপ। বৃষ্টির পানি ও ডিএনডি খালের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্প কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত পানিতে এই জায়গা এখন ডোবা-নালায় পরিণত হয়েছে।
গেইট পার হয়ে স্টেডিয়ামে যেতে পায়ে হাঁটার ৩ মিনিটের পথ পুরোটাই পানির নিচে। রাস্তার পাশে থাকা ড্রেন থেকে মানুষের মল এই রাস্তার ওপর ভেসে বেড়াচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবেই আটকে আছে পানি। এতে করে চরম দুর্গন্ধ তৈরি হয়েছে। আর জমে থাকা পানি এখন নানা পোকামাকড় আর মশার আতুর ঘরে পরিণত হয়েছে। ফলে নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বপ্নের স্টেডিয়ামটির আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা থাকবে কি না, তাই প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
২৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ বনাম কেনিয়ার এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। একই বছরের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ বনার ভারতের একটি এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে শেষ হয় এর এক দিনের ম্যাচের ইতিহাস।
২০০৬ সালের ৯-১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় স্টেডিয়ামটির টেস্টের ইতিহাস। ২০১৫ সালের ১০-১৪ জুন বাংলাদেশ বনাম ভারতের টেস্ট ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে শেষ হয় এই স্টেডিয়ামের টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস। এখানে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মাঠে গড়ায়নি। বর্তমানে মাঠটিতে দুই একটি ক্লাবের খেলা ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের খেলা ছাড়া আর কোনো খেলা অনুষ্ঠিত হয় না। নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় মাঠটির নেই কোনো দেখভাল।
অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে এখন মাঠটি পুরোপুরি আন্তর্জাতিক ম্যাচের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো এক সময় মাঠটি একেবার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
স্থানীয়রা জানান, মাঠটি নির্মাণের সময় বড় ধরনের ভুল করা হয়। মাঠের জায়গাটি এক সময় জলাভূমি ছিল। ডিএনডির ভয়ংকর জলাবদ্ধতার মধ্যে এটি পড়েছে। নির্মাণের সময় আশপাশে বসতবাড়ি বেশি না থাকলেও এখন বসতবাড়ির পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। ফলে অন্যান্য জায়গা থেকে এটি নিচু হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় যে ক্যানেল দিয়ে এই মাঠের পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা এখন সেটা দিয়েই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে স্টেডিয়াম ও এর আশপাশের এলাকা।
এলাকাবাসীর দাবি যাতে দ্রুত স্টেডিয়ামের পাশে থাকা ময়লা অপসারণ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। এবং নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচের আয়োজন করা হয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভির আহমেদ টিটু ইউএনবিকে বলেন, ‘এই মাঠের দুরবস্থার কথা আমাদের জানা আছে। কিন্তু মাঠটি দেখভালের দায়িত্ব বিসিবির। তাই এ নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।’
যোগাযোগ করা হলে খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার মো. বাবুল মিয়া ইউএনবিকে বলেন, ‘স্টেডিয়ামের প্রকল্প উন্নয়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পুরো কাজ তদারকি করছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল প্রকৌশলী পুরো প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন। তারা পরিকল্পনা জমা দিলে বোর্ড এ বিষয়ে কাজ করবে। আশা করছি শিগগিরই হয়তো কাজ শুরু হবে।’
sবিসিবির গ্রাউন্ডস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটি বিভাগের ম্যানেজার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘আমরা ফতুল্লা স্টেডিয়ামের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। মূল স্টেডিয়ামের সুযোগ সুবিধা ও আউটার স্টেডিয়ামের অবস্থা উন্নয়নের জন্য বিসিবি কাজ করছে। এরই মধ্যে বুয়েটের একদল প্রকৌশলী নতুন করে প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরি করছেন। তাদের কাজ শেষ হলে, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা কাজ করব। ফতুল্লা স্টেডিয়াম যে উচ্চতায় আছে, তার আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনার উচ্চতা তার চেয়ে বেশি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ সব বিষয় আমাদের জানা আছে। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। পরিকল্পনা শেষ হলে আমরা কাজ শুরু করতে পারব।’