বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেছেন, ৩৫ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আটটি বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কাজ চলতি বছরের শেষ নাগাদ সমাপ্ত হবে।
কাজ শেষ হলে বিমানবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। প্রতিটি বিমানবন্দর হবে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরলস কাজ চলছে। করোনার মধ্যেও বেবিচকের প্রকৌশলীরা প্রকল্প বাস্তবায়নে দিনরাত কাজ করেছেন। প্রতিটি কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়েছে। ইকুইপমেন্ট ও নিরাপত্তা সামগ্রীর মান ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড মেনে করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম উদ্বোধন হবে এ বছরের অক্টোবর মাসে। এই প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টার্মিনালটি উদ্বোধন করবেন। বর্তমানে প্রকল্পের ৭০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা আর টার্মিনাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ নিয়োগের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এই প্রকল্পটির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু এখন সময়ের ব্যাপার।
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়প্রকল্প), এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দরে যাত্রী হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি ১০ লাখ থেকে ২২ লাখে দাঁড়াবে। কার্গো হ্যান্ডেলিং দুই লাখ ২০ হাজার টন থেকে সাত লাখ টনে উন্নীত হবে।
এছাড়া টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট ও সিকিউরিটি ইকুইপমেন্টসহ নতুন প্যাসেঞ্জার বিল্ডিং (তৃতীয় টার্মিনাল-দুই লাখ ৭২ হাজার বর্গমিটার) নতুন কার্গো কমপ্লেক্স ৬৩ হাজার বর্গমিটার, র্যাপিড এক্সিট টেক্সিওয়ে ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, অ্যাপ্রোন পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার ও কানেক্টিং টেক্সিওয়ে ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, টানেলসহ বহুতল কারপার্কি ৬২ হাজার বর্গমিটার, যন্ত্রপাতিসহ ফায়ার ফাইটিং স্টেশন চার হাজার বর্গমিটার, এন্ট্রি ও এক্সিট র্যাম্পসহ রোড নেটওয়ার্ক, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম, সোয়ারেজ ট্রিটমেন্ট, ইনটেক পাওয়ার প্ল্যান্ট, কার্গো ইকুইপমেন্ট ক্রয়, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সুবিধা তৈরি হবে। এ বছরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
শাহজালালের বর্তমান এক্সপোর্ট কার্গো অ্যাপ্রোন সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের আওতায় ৭৩ হাজার ৫৪৮ বর্গমিটার কার্গো অ্যাপ্রোন নির্মাণ কাজ এখন চলমান। প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ। এটি বাস্তবায়নের পর অ্যাপ্রোনে অতিরিক্ত চারটি সুপরিসর কার্গো এয়ারক্রাফট পার্ক করতে পারবে।
আরও পড়ুন: নাদিয়ার মৃত্যু: বিমানবন্দর সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ
শাহজালালে জেনারেল এভিয়েশন হ্যাঙ্গার নির্মাণ, হ্যাঙ্গার অ্যাপ্রোন ও ফায়ার স্টেশন সম্প্রসারণ প্রকল্পটি
৪৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই প্রকল্পে রয়েছে ২৩ হাজার ৫৮৯ বর্গমিটার জেনারেল এভিয়েশন হ্যাঙ্গার নির্মাণ, ৬৫ হাজার ৬৮ বর্গমিটারের হ্যাঙ্গার অ্যাপ্রোন, ২৯ হাজার ৯৮৮ বর্গমিটারের নতুন পার্কিং এরিয়া ও পাঁচ তলাবিশিষ্ট পাঁচ হাজার বর্গমিটারের ফ্লোরস্পেসের ভবন তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে।
ঢাকার কুড়িলে হ্যালিপোর্ট প্রকল্পটি ৫০৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হেলিকপ্টারের নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ সুবিধা নিশ্চিত করা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় ৪৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি ৪১ পিসিএন থেকে ৯০ পিসিএনে উন্নীত করা হচ্ছে। কাজের ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই বিমানবন্দরে পুরো দমে বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারবে।
ইতোমধ্যেই এই রুটে লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট চালু হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: সিলেট বিমানবন্দরে ই-গেট যাত্রীদের অভিজ্ঞতা বাড়াবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটি দুই হজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৩৪ হাজার ৯১৯ বর্গমিটার প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ছয় হাজার ৮৯২ বর্গমিটারের কার্গো ভবন, কন্ট্রোল টাওয়ারসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়,কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়-তৃতীয় সংশোধনী) প্রকল্প দুই হাজার ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে বিমানবন্দরের রানওয়ে ছয় হাজার ৭৭৫ ফুট দৈর্ঘ্যকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত, সোল্ডারসহ ১৫০ ফুট প্রস্থকে ২০০ ফুটে উন্নীত করা সহ রানওয়ে লাইটিং ব্যবস্থার উন্নতি করা হচ্ছে।
এছাড়া ৩৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ে ছয় হাজার থেকে সাত হাজার ৫০০ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। রানওয়ের চওড়া ১০০ থেকে ১৫০ ফুট করা হচ্ছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন প্রকল্পটি ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পটির ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর আওতায় ১০ হাজার ৯১৩ বর্গমিটার টার্মিনাল ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। ঝিনুক আকৃতির এই ভবনটি খুবই দৃষ্টিনন্দন। এতে থাকছে আন্তর্জাতিক মানের সব সুযোগ-সুবিধা।
তিন হাজার ৭০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সাল থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আওতায় রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ফুট থেকে ১০ হাজার ৫০০ ফুটে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই বিমানবন্দরে পূর্ণ লোডে সুপরিসর বিমান চলাচল করতে পারবে।
এতে স্থানীয় যাত্রীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্ট মুভমেন্ট বাড়বে। এতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। এছাড়া ১৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কানেকটিং টেক্সিওয়ে ও প্যারালাল টেক্সিওয়ে নির্মাণ বর্তমানে চলমান রয়েছে।
শাহ আমানতের বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ ও বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরামর্শক সেবা প্রকল্পটি ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ফুল লোডেড বোয়িং ৭৭৭ বিমান রানওয়েতে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের শক্তি (পিসিএন) ৬৬ থেকে ৯১-তে উন্নীত হবে।
এছাড়া ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দরের বিস্তারিত ড্রয়িং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, ড্রয়িং-ডিজাইন, ব্যয় প্রাক্কলন ও মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুতের কাজ চলছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পে ১৩৬ কোটি টাকার কাজ চলমান। এজন্য মাদারীপুর ও শরীয়তপুর এ দু’টি স্থানকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনটি ৩১ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় একটি অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। এটি বাস্তবায়ন হলে বিল্ডিংয়ের ক্যাপাসিটি ৩১০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭০ জনে উন্নীত হবে। এছাড়া এই বিমানবন্দরের জন্য একটি নতুন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন, অটোমেশনসহ কার্গো ভবন, অ্যাপ্রোন, টেক্সিওয়ে, কন্ট্রোল টাওয়ারসহ অপারেশনাল ভবন নির্মাণ করা হবে। এই বিমানবন্দরকে রিজিওনাল বিমানবন্দর বানানোর জন্য ৮৫১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
রাজশাহীর টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পে টার্মিনাল ভবন, ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল ও কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণসহ যোগাযোগ ও নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে বর্তমান টার্মিনালের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ২৬০ থেকে ৮৫০-এ উন্নীত হবে। এছাড়া বর্তমান রানওয়ে বাড়িয়ে ১০ হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে।
যশোর টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরনো টার্মিনাল ভবনে যাত্রী ক্যাপাসিটি ৩০০ জন থেকে বাড়িয়ে ৬০০ জনে উন্নীত করা হচ্ছে। প্রকল্পটির ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ৫৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সারফেসে অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলেকরণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ৩ বিমানবন্দরের উড্ডয়ন-অবতরণ সহজ হবে। এই প্রকল্পে রানওয়ের পিসিএন ১৭ থেকে ৫০-এ উন্নীত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঘন কুয়াশা: ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ৮টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ঘুরে গেছে, ৭টি বিলম্বিত