ব্যবসায়ীরা বলছেন, যশোর অঞ্চলের কৃষি অর্থকরী ফসলের অন্যতম জাতীয় ফল কাঁঠাল। কিন্তু কাঁঠাল মৌসুম শুরুর আগেই এবার ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে। এতে অন্যান্য ফসলের মতো কাঁঠালেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। এজন্য এবার কাঁঠালের সংকট রয়েছে। অন্যদিকে, করোনার কারণে পরিবহনের সংকটে ক্রেতার অভাবে হাট প্রায় কাঁঠালশূন্য হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান খান বলেন, আমরা বাবা-দাদাদের কাছে শুনেছি হাটটির বয়স কয়েকশ বছর। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। একসময় বরিশাল, পটুয়াখালী, মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ট্রলার বোঝাই করে এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে যেতেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাঁঠাল পাঠানো হতো। যশোর ছাড়াও নড়াইল, খুলনা, ঝিনাইদহ, মাগুরা থেকে এই হাটে চাষিরা কাঁঠাল নিয়ে আসতেন। তবে এখন আগের সেই পরিস্থিতি নেই। কাঁঠালের জোগান কমে যাওয়ায় হাট আর আগের মতো জমজমাট হয় না। তবে গতবছর যতটা হয়েছে, তার চেয়ে এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ।
এছাড়া স্থানীয় এক চাঁদাবাজ চক্রের হাতে হয়রানি হতে হয় বলে অনেক ব্যবসায়ী হাটে এখন আর আসতে চান না, বলেন এ ব্যবসায়ী।
আরেক ব্যবসায়ী কবির খান বলেন, এবার হাট তেমন জমেনি। আগে যেখানে প্রতিহাটে ৫০ থেকে ৮০ ট্রাক কাঁঠাল গেছে, সেখানে এবার ভরা মৌসুমে মাত্র ৮ থেকে ১০ ট্রাক মাল উঠেছে। করোনার কারণে পরিবহনের সমস্যাও ছাড়াও আছে প্রশাসনের বাঁধা। হাটে বেশি মানুষ জড়ো হলেই প্রশাসন থেকে বাধা দেয়া হচ্ছে। অনেক সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলপ্রয়োগও করছেন। একারণেও অনেকে হাটে আসতে চান না।
শুধু বসুন্দিয়া নয়, যশোর অঞ্চলে কাঁঠালের হাট বসে চৌগাছা ও সদর উপজেলার সাতমাইল বাজারেও। এসব বাজারে পর্যাপ্ত কাঁঠাল আসলেও দাম এবার বেশ কম বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
যশোর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়। বিশেষ করে যশোর সদর উপজেলা, চৌগাছা, ঝিকরগাছা এলাকায় বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল হয়েছে এবার। তবে করোনার কারণে বাইরের জেলায় যেতে না পারার কারণে এবার দাম পাননি চাষিরা।
চৌগাছার পেটভরা গ্রামের আজিজুর রহমান জানান, চলতি বছর করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতবছর বাজারে ১০০ কাঁঠালের দাম ছিল ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর এবার সেই ১০০ কাঁঠাল বিক্রি করতে হয়েছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। এছাড়া ঢাকায় কাঁঠাল নিয়ে যেতে ট্রাকের বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ব্যবসায়ীরা এবার বাগান থেকে কাঁঠাল ক্রয় করেননি। আবার তারা বাজারে নিয়ে গেলে দাম পাননি। এজন্য তাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। অনেক সময় নসিমন-করিমনে করে কাঁঠাল হাটে নিয়ে গেলে খরচ উঠানোই দায় হয়ে পড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, যশোরে এক হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে কাঁঠাল গাছ আছে। আম্পান আর করোনার কারণে এ অঞ্চলে কৃষি সেক্টরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই হিসেবে কাঁঠাল চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।