বাংলা একাডেমির সরবরাকৃত তথ্যে দেখা গেছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বইয়ের প্রকাশনা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এবং বিক্রয় বেড়েছে প্রায় আটগুণ।
২০২০ সালে বইমেলায় মোট ৪ হাজার ৯৯৫টি বই প্রকাশিত হয়েছিল। তার মধ্যে বিক্রি হয়েছিল ৮২ কোটি টাকা (আনুমানিক), অন্যদিকে ২০১৩ সালে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৩টি এবং বিক্রি হয়েছিল ১১ কোটি টাকা (আনুমানিক)।
২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা যথাক্রমে ২ হাজার ৯৯৫, ৩ হাজার ৭০০, ৩ হাজার ৪৪৪, ৩ হাজার ৬৪৬, ৪ হাজার ৫৯১ এবং ৪ হাজার ৬৮৫ টি। সে সময়ে আনুমানিক মোট বিক্রয় হয়েছে ১৭ কোটি, ২২ কোটি, টাকা ৪০ কোটি, ৬৬ কোটি, ৭১ কোটি এবং ৭৭ কোটি টাকা।
বাংলা একাডেমি এ বছর ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। এছাড়া ২০১৩ সালে একাডেমির মোট বিক্রয় ছিল ৬৮ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ১ কোটি ১ লাখ, ২০১৫ সালে ১ কোটি ৬১ লাখ, ২০১৬ সালে ১ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৭ সালে ১ কোটি ৫৫ লাখ, ২০১৮ সালে ১ কোটি ৫১ লাখ এবং ২০১৯ সালে ২ কোটি ১৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে।
পাশাপাশি ই-বইয়ের প্রচারের জন্য এ বছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মুঠোবই, বইতোই, সেইবই, এবং ছুরুই.কম নামে চারটি স্টোর স্থাপন করা হয়েছিল।
তবে এখনও কাগজের বইয়ের চাহিদা বেশি রয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জামিয়া বইমেলাকে লেখক ও পাঠকদের মধ্যে মিলনের জায়গা বলে অভিহিত করেন।
তিনি আরও বলেন ‘আমরা যখন বইমেলায় কোনও বই কেনার জন্য যাই, আমরা মাঝে মধ্যে লেখকদের সাথে সেলফি এবং অটোগ্রাফ নিতে পারি, ডিজিটাল ফর্মেটে (ই-বই) এটা সম্ভব নয়। কাগজের বইয়ে একটি অনন্য আবেদন রয়েছে বলে আমি মনে করি।’
নতুন লেখক ও সাংবাদিক দীপন নন্দী জানান, তিনি কাগজের বই পড়ে চূড়ান্ত আনন্দ পান।
‘যদিও আমি সময় এবং অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ই-বই পড়ি, তবে আমি কাগজের বইগুলোতে আসল আনন্দ পাই,’ তিনি বলেন।
তরুণ লেখক আবদুল্লাহ আল ইমরান এখন পর্যন্ত - এইসব ভালোবাসা মিছে নয়, কালচক্র, দিবানিশি, হৃদয় দখিনা দুয়ার, চন্দ্রলেখা এই পাঁচটি উপন্যাস প্রকাশ করেছেন। তিনি পাঠক এবং শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পেয়েছে বলে জানান।
তিনি ইউএনবির সাথে কাগজের বই পড়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
‘কাগজের বই পড়ার ফলে আমার কাছে আনন্দের এক বিশাল উৎস পাওয়া যায়, যা ই-বইগুলোতে অনুপস্থিত। আমি ডিজিটাল যুগের দাবির সাথে ই-বইয়ের গুরুত্বকে অস্বীকার করি না, কিন্তু তার মধ্যে সত্যিকারের সুখ এবং নিখুঁত আনন্দ খুঁজে পাই না,’ তিনি বলেন।
নলেজ এবং ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, স্বল্প ব্যয়ে বেশি বই প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের জন্য বই প্রকাশের প্রক্রিয়া আরও সহজ করা উচিত।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এই ডিজিটাল যুগে বইয়ের বিশাল বিক্রয় ইঙ্গিত দেয় যে মানুষ এখনও কাগজের বইয়ের আবেদন ধরে রেখেছে।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, অমর একুশে বইমেলা সময়কাল এবং দর্শকদের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা। মাসব্যাপী বইমেলাটিতে প্রায় এক মিলিয়ন দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে।
‘একুশে বইমেলা ২০২১ সাল থেকে দর্শনার্থীদের সঠিক সংখ্যা গণনা করে বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা হিসাবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্তির পদক্ষেপ নেয়া হবে,’ যোগ করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেবল বইমেলাকে কেন্দ্র করে বইয়ের প্রকাশনাই চাই না, আমরা চাই বছরব্যাপী লেখা অনুশীলন এবং মানসম্পন্ন বই প্রকাশিত হোক।