রেনু বলন, গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাত পাওয়ায় এখনও মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। শরীরে অসহ্য যন্ত্রনার পাশাপাশি ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিয়ে কোনোমতে দিন পার করছেন।
মৃত্যুর সাথে লড়াই করে বেঁচে যাওয়া আওয়ামী লীগের সংগ্রামী এ নেত্রী ইউএনবিকে বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হয়েছে। অপেক্ষায় আছি সেই রায় কার্যকরের। মারা যাওয়ার আগে বিচারের রায় কার্যকর দেখে যেতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই হামলা ছিল জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের পরিকল্পিত হামলা। ২১ আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলার শিকার হই, তখন আমি ছিলাম ঢাকা মহনগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আইভী আপা আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তার সাথে সাথেই থাকতাম। হামলায় আইভী আপা শহীদ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আল্লাহর অশেষ রহমতে সেদিন হামলা থেকে বেঁচে যান। আমি ওই হামলায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছি।’
আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় নিহত আইভী রহমানসহ অন্যদের পাশেই গুরুতর আহত, রক্তাক্ত, অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলেন রেনু। সে সময়কার পত্র-পত্রিকায় মৃতদের সাথে তারও নিথর দেহের ছবি ছাপা হয়। পরে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের স্প্রিন্টার নিয়ে এখনও নরক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা এফডিআর হিসেবে অনুদান দেয়া হয় রেনুকে। সেই টাকার লভ্যাংশের পুরোটা এবার তিনি জেলা প্রশাসকের করোনা প্রতিরোধ সহায়তা তহবিলে দান করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
নকলা উপজেলা পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান রেনু বর্তমানে নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
হামলার ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রেনু বলেন, ‘ভয়ঙ্কর ছিল সেই হামলা। আমি মঞ্চের কাছেই বসে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ, চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। চিৎকার, চেঁচামেচি। আমার দুই চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। তারপরই চোখেমুখে অন্ধকার। এরপর আর আমার কিছু মনে নেই। তখন আমি কোমায় ছিলাম। ১৪ দিন পর ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে আমার জ্ঞান ফিরে আসে। কিন্তু আমার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছিল। কিছুই মনে করতে পারিনি। মাথায়-পায়ে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার ঢুকে গিয়েছিল। অপারেশনের পর সাভারের সিআরপিতে আট মাস ছিলাম। তারপর কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি।’
রেনু বলেন, ‘আমার পায়ে এখনও সাতটি স্প্লিন্টার রয়েছে। অসহ্য সে যন্ত্রণা। যত দিন বাঁচব, এ নরক যন্ত্রণা নিয়েই বাঁচতে হবে। ওই হামলার যেদিন রায় হয়েছে, সেদিন অঝোরে কেঁদেছি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এখন বিচারের রায় কার্যকর দেখে মরতে চাই।’
রেনু জানান, প্রতিবছর ২১ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ঢাকায় তাদের সাক্ষাৎ হত, আলোচনা হত। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে অনলাইন প্ল্যাটফরমে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছেন এবং তার কারণেই আমরা এখনও বেঁচে আছি,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রেনু। এছাড়া ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শহীদ আইভী রহমানসহ নিহত সকলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি।
এদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মরণে শুক্রবার দুপুরে শেরপুর শহর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পৌর টাউন হল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।