গত বছর ভালো ফলন হওয়ায় অনেকে এ বছর ঋণ করে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন। ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু বাজারজাত করতে না পারায় এখন লাভ তো দূরের কথা আসল টাকা ওঠানো দায় হয়ে পড়েছে চাষিদের। ট্রলার ও ট্রাক চলাচল না করায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য স্থানে তরমুজ পাঠানো যাচ্ছে না। আর মানুষ ঘরে থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোতেও তরমুজের কদর নেই।
তবে ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির বৈধ কাগজপত্র, আইডি কার্ড এবং স্বাস্থ্যসনদ প্রদর্শনের শর্তে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকার পরিবহন ও চালকদের দাকোপে আসার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। একই শর্তে এ অঞ্চলের ক্রেতা বা ব্যাপারীদের দাকোপে এসে তরমুজ কেনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটিকে ঝামেলাপূর্ণ মনে করছেন তারা।
তরমুজ চাষি দাকোপের বাজুয়া বড়ইতলার সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল গাইন বলেন, নিঃসন্দেহে এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন ফল কাটার সময়। কিন্তু বাজারজাত করতে না পারায় গরমে তরমুজগুলো পচে উঠেছে। আবার অনেক তরমুজ বেশি পেকে যাওয়ায় ফুটে যাচ্ছে। ব্যাপারী না আসায় খেতেই নষ্ট হচ্ছে তরমুজ।
‘সম্প্রতি যশোরের রূপদিয়ার এক ব্যাপারী ৫০ হাজার টাকায় আমার জমির তরমুজ কিনতে চেয়েছিলেন। এ জন্য মোবাইলে ১০ হাজার টাকার বায়নাও দেন তিনি। তরমুজ নিতে ওই ব্যাপারী ট্রলার নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ঘাটে প্রশাসন ও বাজার কমিটির লোকজন তাকে ট্রলার থেকে নামতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি ফিরে গেছেন। তার বায়নার টাকা আমাকে ফেরত দিতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, তরমুজ ব্যবসায়ীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গ্রামে আসতে হয়। এটা অনেকে ঝামেলা মনে করেন। তাই তারা আসছেন না। এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীরাও চাচ্ছে না গ্রামে কোনো ব্যবসায়ী না আসুক। এলেও যেন তাদের মাধ্যমে আসে।
দাকোপের ছিটাবুনিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি গৌতম বলেন, ‘আমার চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হয়েছে ৭২ হাজার টাকা। এখন তরমুজ বিক্রি করতে পারছি না। ব্যবসায়ীদের গ্রামে আসতে হলে ইউএনও’র কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে ও করোনা পরীক্ষা করে আসতে হচ্ছে। সবাইকে তো ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই তরমুজ ক্রেতারা আসতে পারছেন না। তরমুজ পেকে গেছে। প্রতিদিন কয়েকটা ফেটে নষ্ট হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, তার এলাকায় ২৫০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। অনেকের তরমুজ কয়েক দিন পর পাকা শুরু হবে।
বাজুয়ার তরমুজ চাষি মনোরঞ্জন বৈদ্য বলেন, ‘ভরা মৌসুমে আগে কখনও এমন করুণ দশায় পড়তে হয়নি আমাদের। এ বছর তরমুজ কিনতে ব্যাপারীরা আসছেন খুবই কম।’
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, দাকোপে এক হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। লক্ষ্য ছিল ৭০০ হেক্টর। ৩৩ শতকের এক বিঘা জমির তরমুজ গত বছর বিক্রি হয়ে ৮০ হাজার টাকা। এবার দাম কিছুটা কম। এবার বিক্রি হচ্ছে এক বিঘা ৫০-৬০ হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, বিক্রি হচ্ছে না বলে তরমুজ খেতে পচে নষ্ট হচ্ছে এটা সঠিক নয়, কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় কিছু তরমুজ নষ্ট হতে পারে বলে তিনি দাবি করেন।