সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১ জুলাই জকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাসকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধনের জন্য সুপারিশ প্রদান ও ‘জকসু’ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আজ (১২ সেপ্টেম্বর) কমিটির ৪৫ কার্যদিবস শেষ হতে চললেও আশানুরূপ কোন অগ্রগতি নেই গঠনতন্ত্র প্রণয়নের।
২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় আইনে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বিষয়ে কোনো ধারা বা উপধারা না থাকায় জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়নে আইন সংশোধনের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটির সময়কাল প্রায় শেষ হয়ে গেলেও কমিটির কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীরা সংশয় প্রকাশ করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জবি শাখার আহ্বায়ক রাইসুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘আমাদেরকে প্রশাসন সবসময়ই আশা দিয়েছে। এতে আমরা কোন ফল পাইনি। তবে এবার আমাদেরকে উপাচার্য বলেছেন জকসু হবে। আমরা উনাকে সম্মান করি।’
‘আমরা আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই জকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়ন হবে। যদি এতে কোন বিলম্ব হয়, তাহলে আমরা পরবর্তীতে অন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবো,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক এম এন জুনায়েদ বলেন, ‘কমিটির তৈরি করা গঠনতন্ত্র দেখার অপেক্ষায় আছি যে, তারা জকসুকে কিভাবে দাঁড় করায়। আমরা নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কমিটির সময়কাল শেষ হলেই আমরা কার্যক্রম হাতে নিব।’
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আলী আক্কাস গত সোমবার ইউএনবিকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র তৈরি হচ্ছে, এটা অনেক বড় একটা ডকুমেন্টস হবে। বর্তমানে টাইপিংয়ের কাজ চলছে। এ সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। শেষ হলেই আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিব।’
নির্দিষ্ট কার্যদিবসের মধ্যে কমিটির কাজ শেষ হবে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য আমাদেরকে ৪৫ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছিল। এখনো কিছু সময় আছে, আশাকরি এর মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৪ সালে প্রথম জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ভিপি (ভাইস-প্রেসিডেন্ট) এআর ইউসুফ আর জিএস (জেনারেল সেক্রেটারি) সালাউদ্দিন আহমেদ নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজ ছাত্রসংসদের ১০টি কমিটি হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৭ সালে আরও চারটি ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে আলমগীর শিকদার লোটন ও জাহাঙ্গীর শিকদার জোটন নামে দুই ভাই ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন।
এরপরে ২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৮ বছর ধরে কোনো ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। আর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার সময়ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এ ছাত্রসংসদের অধ্যাদেশযুক্ত হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পরে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্রসংসদ অধ্যাদেশ যুক্ত ও নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।