একমাত্র পাকা সড়ক পথের ২০০ মিটার ভাঙনে বিলীন হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকাটি। দুই জেলার সীমানা হওয়ায় রশি টানাটানি, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাবে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ।
এনিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করলেও বরাদ্দ না পাওয়ার অজুহাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভাঙনকবলিত এলাকার গফুর মিয়া বলেন, ‘তিনবার ভাড়ি (বাড়ি) ভাঙছি। এরপর শ্বশুরের ভিটায় আশ্রয় নিছি। সেটাও ভাঙি গেইছে। হামরা এ্যালা (এবার) কোটে (কোথায়) যামো (যাবো)।’
জরিমন নামে এক বিধবা নারী বলেন, ‘প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়া অনেক কষ্ট করি বাঁচি আছি। এপাকে বাড়ি ভাঙবের নাগছে (লাগছে)। কাঁইয়ো (কেউ) জাগা (জায়গা) দিবার নাগছে (দিচ্ছে) না। খাবারও নাই। গাছের ডাল কাটি (কেটে) বিক্রি করি কোনোমতে বাঁচি আছি। তোমরা নদীটা বান্ধি (বেঁধে) দেও।’
কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বাহে ১২ একর জমি আছিল। ৭ বার বাড়ি ভাঙছি। সম্পদ সউগ (সব) নদী খায়া গেইছে (গেছে) । এ্যালা (এখন) বাড়ি ভিটাসহ ৩০ শতক জমি আছে। সেটাও যাবার নাগছে। এটা গেইলে নিঃস্ব হয়া যামো।’
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চর বজরা এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের নদী বিচ্ছিন্ন ও কুড়িগ্রামের সাথে লাগোয়া লখিয়ার পাড়া, পাড়া সাদুয়া, মাদারীপাড়া ও ঐতিহ্যবাহী কাশিমবাজার হাট, কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার সিনিয়র মাদরাসা এবং দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এছাড়াও এই এলাকায় একমাত্র চলাচলের পথ চিলমারী, কাশিমমবাজার টু উলিপুর সড়কের প্রায় ২০ মিটার সড়কপথ পানি গর্ভে চলে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষজন। যেভাবে ভাঙছে তাতে কয়েকদিনে উলিপুরের বজরা ও হরিপুরের কাশিমবাজার এলাকার দুই হাজার পরিবারের ভিটেমাটি তিস্তার পেটে চলে যাবে।
কাশিমবাজার এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আলী সরকার, শিমুল, আতিয়ার মাস্টার, আবু তালেব, আশরাফ মাস্টারসহ স্থানীয়রা জানান, নদী বিচ্ছিন্ন গাইবান্ধা জেলার এই অংশটুকু কুড়িগ্রামের মাটিতে পড়ায় এলাকার মানুষ সব সময় বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, এই করোনায় তারা কোনো বরাদ্দ পাননি। এলাকার তিনভাগের দুইভাগ অঞ্চল নদী গর্ভে চলে গেলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে এলাকার সুধীজন মোস্তাফিজার রহমান বাবুল, আব্দুস সবুর ও মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ভাঙন ঠেকাতে তারা দুই জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ছোটাছুটি করেছেন। গাইবন্ধা বলে কুড়িগ্রামের সাথে যোগাযোগ করতে। এখান থেকে নদী পেরিয়ে কাজ করতে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
এদিকে কুড়িগ্রাম থেকে তীব্র নদী ভাঙনে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও তা কাজে লাগছে না। শুকনো মৌসুমে কাজের কথা বললেও তারা শোনেন না। এখন শুধু ঠিকাদার দিয়ে অর্থের অপচয় হচ্ছে। তারা দ্রুত তিস্তা নদীর ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষার দাবি জানান।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বরাদ্দ ও বাজেট না পাওয়ায় কাজে বিঘ্ন ঘটছে।’
বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
বর্তমানে জেলার ৯টি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা, ধরলা নদীর ৬৭টি পয়েন্টে প্রায় ৮ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি পয়েন্টে ৬ কিলোমিটার জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে।