রাজধানীর সবজি বিক্রেতারা বলেছেন, সরবরাহের ঘাটতির কারণে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৬০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২২০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। সম্প্রতি বাজারে থাকা অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে বলে জানানা তারা।
যদিও, বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি বর্তমানে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বন্যায় এ পর্যন্ত ৮ হাজার হেক্টরেরও বেশি মরিচের খেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাংলাদেশ বছরে এক লাখ ৪০ হাজার টন কাঁচা মরিচ উৎপাদন করে।
রাজধানী পুরান ঢাকা বংশালের বাসিন্দা শাহরিয়ার আলম জানান, গত সপ্তাহে তিনি এক কেজি কাঁচা মরিচ ২২০ টাকায় কিনেছিলেন। যা দুই সপ্তাহ আগেও তিনি ৬০-৭০ টাকা কিনেছেন।
তিনি বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ আগেও যে টমেটো ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে তা বাজারে এখন ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচাবাজরে বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়ে গেছে।’
পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক জানান, সোমবার তিনি প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০০-২২০ টাকা দরে, টমেটো ১২০-১২০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, লেবু (এক হালি) ২০-৩২ টাকা, বেগুন ও পটল ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
গত কয়েকদিনে কাঁচাবাজারের বেশ কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে জানিয়ে বিক্রেতা সিদ্দিক বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমাদের কিছু করার থাকে না। আমাদের পাইকারি দাম থেকে কিছুটা লাভে বিক্রি করতে হয়।’
বেঁচে থাকাই কঠিন
ওই এলাকার দোকানি জিল্লুর রহমান জানান, তারা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ টাকা, রসুন ৮০-১০০ টাকা এবং আদা ১৪০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
‘তবে আমরা প্রতি কেজি এলাচ ৩২০০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকা এবং লবঙ্গ ১২০০ টাকায় বিক্রি করছি,’ বলেন তিনি।
জিল্লুর আরও বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যেগুলোর দাম কিছুটা বেড়েছে। আগের বছরের মতো হলে ঈদুল আজহার আগে এগুলোর দাম আরও বাড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ঈদের সময় মশালার ভালো চাহিদা থাকে। তাই মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে সামনের দিনে এগুলোর দাম বাড়তে পারে।
কাওরান বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা আবদুস সোবহান তালুকদার জানান, বন্যার কারণে সবজি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ‘করোনার মধ্যে যোগ হয়েছে বন্যার অভিশাপ। আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বেঁচে থাকাটাই খুব কঠিন হয়ে উঠেছে।’
এদিকে, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, বন্যার কারণে সারাদেশে ৩৪৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব কমাতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এবং ক্ষুদ্র কৃষকরাও ধান ট্রান্স-প্ল্যান্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে আমনের চারা রোপণ করতে পারবেন। বন্যাকবলিত অঞ্চলে আমন উৎপাদন করতে না পারলে প্রায় ৫০ হাজার কৃষককের মাঝে ৩.২২ কোটি টাকার মাসকোলাইয়ের বীজ ও সার সরবরাহ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রথম পর্যায়ে ২৫ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত বন্যা ১৪টি জেলায় ৭৬,৩১০ হেক্টর ধানখেত এবং ৩ লাখ ৪৪ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে, ১১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত আগের ১৪ জেলাসহ মোট ২৬ জেলার প্রায় ৮৩ হাজার হেক্টর জমির ধানখেত নষ্ট হয়েছে।