এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে কৃষকরা একদিকে যেমন পারিবারিক চাহিদা পূরণ করছেন, অন্যদিকে বাজারে বিক্রি করে আয়ও করছেন তারা। বর্তমানে এ উপজেলায় জলাশয়ে ভাসমান খেতে সবজি চাষ করছেন প্রায় ১৫০ জন ভূমিহীন কৃষক।
আরও পড়ুন: পুনরায় ৪ দেশে বাজার ফিরে পেয়েছে খুলনার কাঁকড়া
সরেজমিনে ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়নের মধুগ্রাম খালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে খালের পানিতে ভাসছে সারি সারি সবজির বেড (শয্যা)। বিলের পানি ছাড়াও এ পদ্ধতিতে বাড়ির পাশে জলাশয়েও সবজি চাষ করা হচ্ছে। ভাসমান ওই শয্যায় শসা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, বেগুন, লালশাক, পুঁইশাক ও পালংশাকসহ নানা প্রকার সবজির সমারোহ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ওই খালে সর্বপ্রথম ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু হয়। এখন অনেকেই এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। লাভজনক হওয়ায় ভূমিহীন কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে। এছাড়া পুরোটাই জৈব পদ্ধতিতে হওয়ায় বাজারে এসব সবজির চাহিদাও বেশি।
আরও পড়ুন: ইউরোপে কমলেও, খুলনাঞ্চলের চিংড়ির রপ্তানি বেড়েছে জাপানে
হাফিজুর রহমান নামে মধুগ্রামের একজন ভূমিহীন কৃষক জানান, চাষাবাদ করার জন্য নিজের কোনো জমি না থাকায় অন্যের জমিতে দিনমজুর খেটেই তার সংসার চলে। সম্প্রতি কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সরকারি খালে ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি চাষ শুরু করেছেন যেখানে ওই বেডে লাগিয়েছেন লালশাক ও লাউ। ইতোমধ্যে লালশাক তুলে বাজারে বিক্রি করেছেন আর লাউও বড় হতে শুরু করেছে।
হড়হড়িয়া খালে একই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন সলিম মোড়ল (৪৫) নামের আরেক কৃষক। তিনি জানান, এলাকার অধিকাংশ জমিতে এক ফসল হয় এবং বছরের বেশির ভাগ সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। আগে অভাব-অনাটন লেগে থাকলেও, ভাসমান সবজি চাষ শুরু করার পর অভাব অনেকটাই দূর হয়েছে।
সলিম আরও জানান, সপ্তাহে দু’দিন স্থানীয় হাটে সবজি নিয়ে বিক্রি করন তিনি। কখনো কখনো ব্যবসায়ীরা বাড়ি এসেই সবজি কিনে নিয়ে যান। কারণ বিষমুক্ত হওয়ায় এসব সবজির চাহিদা বেশি।
আরও পড়ুন: ৪০০ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে খুলনা
ডুমুরিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র মতে, উপজেলার মধুগ্রাম, মিকশিমিল ও রংপুর ইউনিয়নের কৃষকেরা ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। যেসব খাল ও বিল বছরের বেশির ভাগ সময় পানিতে পূর্ণ থাকে এবং যেখানে কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয় না, এমন জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে সবজির বেড। এ কাজের জন্য ওই এলাকার কৃষকেরা স্থানীয় খাল-বিলকে বেছে নিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, খালের পানিতে বেড তৈরি করতে কৃষকরা বাঁশের চালি ব্যবহার করে থাকেন। তার ওপরে দেয়া হয় প্রায় এক ফুট কচুরিপানা, যা ওই বিল থেকেই সংগ্রহ করা হয়। আর কচুরিপানার ওপর বিছিয়ে দেয়া হয় মাটি এবং সামান্য কিছু জৈব সার। এভাবেই সেখানে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। প্রতিটি বেডের আয়তন লম্বায় ১৪ ফুট ও চওড়ায় সাত ফুট।
আরও পড়ুন: খুলনায় অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সের ছড়াছড়ি, চালকের আসনে সহকারী
মিকশিমিল গ্রামের চাষি শেখ মাহাতাব হোসেন বলেন, ‘এলাকার অনেককে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে দেখে আমিও শুরু করি। এতে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হয়। বর্ষার মওসুমে মানুষের কষ্ট হয়। তবে হড়হড়িয়া খাল পাশের মানুষের জন্য তা আশীর্বাদ।’
মধুগ্রাম খালের পাশেই সুরমান গাজীর পাঁচটি বেড। ওই বেডে তিনি লাগান লালশাক, ঢেঁড়স, ধুন্দুল ও পটল। এরই মধ্যে কয়েক হাজার টাকার লালশাক ও ঢেঁড়স বাজারে বিক্রি করেছেন তিনি। ভালো হয়েছে পটোলের ফলনও। কয়েক দিনের মধ্যে পটল বাজারজাত করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
সুরমান জানান, তার নিজের কোনো জমি নেই। তাই নিজের মতো করে কোনো ফসল ফলাতে পারতেন না। কিন্তু প্রায় এক বছর আগে ভাসমান বেডে সবজি চাষ শুরু করার পর ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার টাকার সবজি বিক্রি করার কথা জানান তিনি ।
আরও পড়ুন: খুলনার বাজারে নতুন পেঁয়াজ, মজুদ নিয়ে চিন্তিত টিসিবি
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘ভাসমান বেডে সবজি চাষ ভূমিহীন কৃষকদের নতুন আলো দেখাচ্ছে। ডুমুরিয়ায় যারা ওই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন, তাদের সবাই ভূমিহীন। নিজের জন্য সবজি উৎপাদন করতে পেরে তারা খুবই খুশি।’
তিনি জানান, ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে একদিকে যেমন কৃষকরা তাদের পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ করতে পারছেন, অন্যদিকে উৎপাদন খরচও তুলনামূলক কম হওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করে লাভবানও হচ্ছেন তারা।