চলতি মৌসুমে মাগুরায় গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে এ অঞ্চলের কৃষকরা বেশ খুশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে গমের আবাদ হলেও চাষিরা ন্যায্য দাম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে।
জেলার কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মাগুরা জেলায় মোট আবাদী জমির পরিমাণ ছিল ৪৬৯০ হেক্টর এবং উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, তার থেকে বেশি ফলন হয়েছিল। গড় ফলন হয় হেক্টর প্রতি ৩.৩২ মেট্রিকটন এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন। এ বছর গত বারের তুলনায় বেশি জমিতে গমের আবাদ হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কারণ হিসেবে কৃষি বিভাগ বলছে, অনেক কৃষক এখন ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছে। বিঘা প্রতি ভুট্টার ফলন ৪০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যায়। দাম মণ প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। ফলন বেশি তাই বেশির ভাগ কৃষক ভুট্টার আবাদ শুরু করছে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে গমের আবাদ হলেও চাষিরা ন্যায্য দাম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে।
মাগুরা সদরের চাঁদপুর গ্রামের কৃষক ইকলাস আলী বলেন, ‘গম চাষে এক থেকে দুইটা সেচ দিলেই হয়। সারের পরিমাণও খুব কম লাগে, ফলনও ভালো পাওয়া যায়।’
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মোতাহার মোল্যা বলেন, ‘এ চাষে লাভ বেশি খরচ কম।’
গম চাষি বাবলু বিশ্বাস বলেন, মাঠেই অটো মেশিন দিয়ে মাড়াই করে গম বাড়ি নিয়ে যেতে পারি। গম কাটতেই খরচ; বাড়তি আর খরচ লাগে না। মেশিনে গম মাড়াই শতক প্রতি ২৭ টাকা করে দেয়া লাগে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মাগুরার চার উপজেলায় ৪৬৯৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে মাগুরা সদর ১৫২০ হেক্টর, শ্রীপুর উপজেলায় ১৬৯০ হেক্টর, শালিখা উপজেলায় ১২০০ হেক্টর এবং মহম্মদপুর উপজেলায় ২৮৫ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে।
কৃষিবিদ সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে বারি গম-৩৩ এবার বিঘাতে প্রায় ১৬ মণ পর্যন্ত হয়েছে। চাষিদের নানাভাবে প্রশিক্ষণ ও কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। চাষিরা এখন একটু দাম কম পাচ্ছে। মণ প্রতি তারা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে গম বিক্রি করতে পারছে। ফলন ভালো হয়েছে,কৃষকরা খুশি।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, এ বছর জেলায় মোট ৪৬৯৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে মাগুরায় গমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩.৫৬ মেট্রিকটন এবং আবাদী জমি ৪৭৫০ হেক্টর। গড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৬ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, ‘কিছু এলাকায় গম কাটতে এখনো বাকি আছে। আশা করা যায়, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’