বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ির কাছেই সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়িটির কাঠামো। এর নিচের তলায় রয়েছে রেস্টুরেন্ট। আছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের তৈরি নানা রকম জিনিসপত্র। মেঝে ও দেয়ালে রয়েছে নানা রঙয়ের আল্পনা। বাহারি পোস্টার আর ফেস্টুন দিয়ে ছবির মতো করে সাজানো হয়েছে বাড়িটি।
আব্দুর রশিদ জোয়ার্দার নামে স্থানীয় একজনের নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি হওয়া এ বাড়ি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করছেন। ১২ শতক জায়গার ওপর নির্মিত ৩৫ ফুট উচ্চতার পরিবেশবান্ধব কাঠের তৈরি বাড়িটি প্রথম দর্শনে অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও তা সাড়া ফেলে দিয়েছে। আর বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই বাড়িটির ভেতরের অসাধারণ কারুকার্য। এতে রয়েছে বাংলার ইতিহাস ও ঐহিত্য বহনকারী নানা নিদর্শন। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলার লোক সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনী।
মেহগনি, কেরোসিন, শাল ও তালগাছের কাঠ দিয়ে ২০১৮ সালে বাড়িটি তৈরি করা হয়। ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়িটির ৮০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হলেও মালিক রশিদ জোয়ার্দার বলছেন, বাড়িটি মনের মতো করে ফুটিয়ে তুলতে আরও ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন।
দর্শনার্থীরা ২০ টাকার বিনিময়ে পুরো পাঁচতলা বাড়িটি ঘুরে দেখার সুযোগ পান। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে বেড়াতে আসা আবুল কালাম আজাদ ও রেহেনা খানম দম্পতি বলেন, ‘শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে ঘুরতে এসে জানলাম এখানে পাশেই একটি কাঠের তৈরি পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে। তাই দেখতে এলাম। বাড়িটি সম্পূর্ণ ঘুরে দেখলাম। নির্মাণ শৈলী এবং কারুকার্য সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে।’
ফরিদপুর থেকে বেড়াতে আসা ইলিয়াস হোসেন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আগে শিলাইদহ এসে রবী ঠাকুরের কুঠিবাড়ি আর পদ্মা নদী দেখে চলে যেতাম। এখন এ কাঠের তৈরি বাড়িটি দেখে মনে হচ্ছে শিলাইদহের সৌন্দর্যের পলকে নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে।’
বাড়ির মালিক রশিদ জোয়ার্দার জানান, এখনও তার অনেক জায়গা পড়ে রয়েছে। ইচ্ছে আছে সেখানে শিশু-কিশোদের বিনোদনের জন্য পার্ক তৈরি করা। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তিনি এ কাজে হাত দিতে পারছেন না।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ির কাছে এ রকম কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাড়ি দর্শনার্থীদের কাছে এক অন্য রকম আবহ তৈরি করেছে। আব্দুর রশিদ ব্যক্তি উদ্যোগে বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির আরও কাজ বাকি রয়েছে। সরকারের উচিত এ বাড়িটি সম্পূর্ণ মেলে ধরার জন্য সহযোগিতা করা।’