ইউএনবির সাথে একান্ত সাক্ষাত্কারে কবির বলেন, সব স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা হয়ত ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য বিনিয়োগকারী বা ঋণের সন্ধান করেন না। কিন্তু যারা করেন তারা জানেন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা থেকে তহবিলের সহযোগিতা পাওয়া কতটা কঠিন।
তিনি বলেন, ‘আমার কথাই ধরুন, আমি লাইবা রুটি মেকার আবিষ্কার করার পর ঋণ পাওয়ার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সোনালী ব্যাংক হয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিএসসিআইসি) পর্যন্ত ঘুরেছি, কিন্তু কেউই আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেননি।’
লাইবা রুটি মেকার ফেক্টরির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদ বা সিনিয়র আমলা পেছনে না থাকলে ছোট-ছোট উদ্যোক্তাদের সহায়তা করেন না। অন্যদিকে, এনজিওগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে স্টার্টআপগুলোকে সহযোগিতা করতে অনীহা দেখায়।’
তিনি প্রথম দিকের দিনগুলোতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ স্মরণ করে বলেন, সিনিয়র কর্মকর্তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতেই তার কয়েকবার ঘুরতে হয়েছে…‘প্রাথমিক সৌজন্যতার কথা ভুলে যান, তাদের কেউ কেউ কখনও দেখাই দেননি।’
তিনি বলেন, সরকারি অর্থপ্রাপ্তির সামান্য সুযোগ যেখানেই আছে সেখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ‘আমি বিসিকের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেছি। তিনি আমাকে দুই লাখ টাকা ঋণ দিতে রাজি হন, কিন্তু জটিল প্রক্রিয়া আমাকে ঋণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য করেছিল।’
কবির বলেন, ‘হাজার হাজার যুবক স্টার্টআপ চালু করতে আর্থিক সহায়তার সন্ধান করছেন। আমি সরকারকে এসএমইগুলোতে অর্থায়নের জন্য এবং উদ্ভাবকদের যথাযথ সম্মান দেয়ার জন্য একটি বিশেষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান করার জন্য অনুরোধ করছি।’
কাঠের তৈরি প্রথম রুটি মেকার
কবির দাবি করেন যে তার রুটি তৈরির কাঠের পণ্যটি এ দেশে এই জাতীয় প্রথম আবিষ্কার।
তিনি বলেন, ‘যদিও পৃথিবীতে অনেক বৈদ্যুতিক, রোবোটিক এবং শিল্পজাত রুটি প্রস্তুতকারক রয়েছে, তবে আমার উদ্ভাবন প্রথমবারের মতো সিদ্ধ রুটি তৈরির জন্য হয়েছিল।’
তিনি দাবি করেন যে ব্যবসায় তার প্রায় ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
‘আমি মাগুরা জেলার বুনাগাটি গ্রামে ৪ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। আমি বহু বছর আগে যন্ত্রটির উদ্ভাবনের কথা ভেবেছিলাম, তবে ২০১১ সালে উৎপাদন শুরু করি।’
স্থানীয় থেকে বিশ্ব বাজারে
কবির প্রথমে তার পণ্যটি ঢাকার ফুটপাথে বিক্রি শুরু করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘পরে, মুনাফা-ভাগাভাগির ভিত্তিতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা পাওয়ার পর ভাড়ায় রায়েরবাজারে অফিস নিয়েছিলাম।’
কবির বলেন, ‘এখন আমার কারখানায় অনেক লোক কাজ করেন। পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি প্রায় ২৫ জন নারীও সেখানে রয়েছেন। আমরা নারী কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। শিগগিরই তাদের সংখ্যা বাড়ানো হবে।’
তার প্রতিষ্ঠান www.rutimaker.com সাইটে বিদেশ থেকে অর্ডারও পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পণ্যগুলো দারাজ এবং ইভ্যালির মতো অনলাইন ফ্লাটফর্মগুলোতেও পাওয়া যায়, এখন লাইবা রুটি মেকার যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ প্রায় ২৮ দেশে বিক্রি হয়।’
তিনি পণ্যটির তিনটি মডেল বিক্রি করেন, যার দাম মানের ওপর ভিত্তি করে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তায় জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরও আন্তরিক হতে বলেছেন।
কবির বলেন, ‘গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।’
‘আসলে ব্যবসায়ের সাফল্য উদ্যোক্তার উদ্যোগের ওপর নির্ভর করে, তাই যুবকদের উচিত সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং সাফল্যের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।’
কবির বলেন, ‘রুটি মেকার প্রতিটি ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পণ্য। গ্রামীণ বাংলাদেশেও এর একটি সম্ভাব্য বাজার রয়েছে। আমরা এ স্থানীয় বাজারটি ধরতে চাই। তবে এ জন্য কিছু সরকারি সহায়তা দরকার।’