গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়তে শক্ত ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক এক বাজেট নথিতে এই তথ্য উল্লেখ করে দেশের সামাজিক, আর্থিক ও ভৌত অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মানবসম্পদ, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, ‘অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।’
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন
গত দেড় দশকে বাংলাদেশ একটি গতিশীল ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মোট জাতীয় আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে এবং ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকায় পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় ৩৩তম অবস্থানে আছে।
এসময়কালে দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে, চরম দারিদ্র্যের হার কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা পাচ্ছে এবং ৯৭ দশমিক ৩২ শতাংশ স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করছে।
দেশের গড় আয়ু এখন ৭২.৮ বছর। এছাড়া শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২১ জন এবং মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬১ জনে নেমে এসেছে।
বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো সম্প্রসারণ
গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছয়গুণ বেড়ে ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে, যার ফলে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে শতভাগ জনসংখ্যা। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের গ্রাহকও বেড়েছে চারগুণ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পরিবহন অবকাঠামোতেও উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ দেখা গেছে। জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় তিনগুণ বেড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার থেকে ৩২ হাজার ৬৭৮ কিলোমিটার হয়েছে। গ্রামের সড়কগুলো ৭৬ গুণ বেড়ে ৩ হাজার ১৩৩ কিলোমিটার থেকে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৬ কিলোমিটারে প্রসারিত হয়েছে।
পাশাপাশি রেলপথ ৫০ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৩৫৬ কিলোমিটার থেকে ৩ হাজার ৪৮৬ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় অগ্রগতি
গত দেড় দশকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি দেখা গেছে স্বাস্থ্য খাতে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ৭১ হাজার। সরকারি ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে যথাক্রমে ৩০ হাজার ১৭৩ জন এবং ৪৪ হাজার ৩৫৭ জন।
অন্যদিকে নার্সিং কলেজের সংখ্যা ৩১টি থেকে বেড়ে ৯৯টি হয়েছে আর ১৪ হাজার ৩১১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে এখন ২৭ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
বাজেট নথিতে শিক্ষায়ও আকর্ষণীয় অর্জনের হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। সাক্ষরতার হার ২০০৬ সালে ছিল ৪৫ শতাংশ যা বেড়ে ২০২৩ সালে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৮ দশমিক ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
কৃষি ও ডিজিটাল খাতে রূপান্তর
গত দেড় দশকে কৃষিখাতে উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। শস্য উৎপাদন ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৪ কোটি ৯২ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে মাছচাষ ২১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন থেকে ৫৩ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি উৎপাদনও যথাক্রমে প্রায় দ্বিগুণ ও তিনগুণ হয়েছে।
এছাড়াও এসময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ঘটেছে ডিজিটাল বিপ্লব। ২০০৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সক্রিয় মোবাইল ফোনের সিম প্রায় দশগুণ বেড়ে ১ কোটি ৯০ লাখ থেকে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ হয়েছে। সরকারি ডিজিটাল সেবার সংখ্যা ৮ থেকে ৩ হাজার ২০০টিতে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ওয়েবসাইট ৯৮টি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৫২ হাজার ২০০টি।
আইসিটি পণ্য ও সেবার রপ্তানি মূল্য ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে আইটি ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ২০০ থেকে বেড়ে ৬ লাখ ৮০ হাজারে দাঁড়িয়েছে, যার সুবাদে বিশ্বে ফ্রিল্যান্সারদের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসস্থল বাংলাদেশ।