উগান্ডায় ইবোলা ভাইরাস শনাক্তের পরে রোগীদের পরীক্ষামূলক টিকা দিতে শুরু করেছে দেশটি। উগান্ডায় ভাইরাসটির সুদান প্রজাতির বিস্তারে ১ জনের মৃত্যু ও দুইজন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে এক প্রতিবেদনে বলেছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
প্রথম পর্যায়ে দেশটির স্বাস্থ্যকর্মী ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী কাম্পালাতে একজন নার্সের মৃত্যু ও পরিবারের আরও দুজন সদস্য আক্রান্ত হওয়ায় দেশটিতে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা হয়।
ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের উৎস জানতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, ইবোলা সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরের যেকোনো তরল কিংবা মলমূত্রের সংস্পর্শে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারেন। ভাইরাসটির উপসর্গ হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দেখা দিতে পারে জ্বর। হতে পারে বমি, ডায়রিয়া, শরীর ব্যথা। এছাড়াও কিছুক্ষেত্রে শরীরের অভ্যন্তরে ও বাইরে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
কাম্পালার বিশাল ও ভ্রাম্যমাণ ৪০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে সংক্রমণ মোকাবিলা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
উগান্ডার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, ভাইরাসে প্রাণ হারানো সেই নার্স একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি আক্রান্ত হওয়ার আগে দেশের পূর্বঞ্চলের এমবেলাতে গিয়েছিলেন। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আগে তিনি কবিরাজের চিকিৎসাও নিয়েছিলেন।
তিনি আনুমানিক ২৩৫ জন মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন বলে ধারণা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। উগান্ডা একটি ঘনবসতিপূর্ন দেশ হওয়ায় ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে হিমশিম খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আন্তজার্তিক এইডস ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভের দেওয়া ২০০০ টিকা পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক মাতশিদিসো মোয়েতি ইবোলা ভাইরাসের প্রতিরোধমূলক টিকা পরীক্ষাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার গুরুত্বকেও তুলে ধরেন তিনি।
আরও পড়ুন:দেশে প্রথমবারের মতো ৫ জনের শরীরে রিওভাইরাস শনাক্ত
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সরে আসার পর এবং বিদেশি সহায়তা বন্ধের পর ইবোলায় এটিই প্রথম আক্রান্তের ঘটনা। উগান্ডায় ইতোপূর্বে ইবোলার বেশ কয়েকটি ধরণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০০০ সালে দেশটিতে ইবোলায় শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ভাইরাসটির বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাসটি একটি ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর হিসেবে মানব শরীরে দেখা দেয়।
২০১৮ থেকে ২০২০ সালে পূর্ব কঙ্গোর জায়ার প্রজাতির ভাইরাসটি প্রতিরোধে কার্যকর হয়েছিল আরভিএসএফ-জেইবিওভি ভ্যাকসিন। এর মাধ্যমে দেশটির প্রায় ৩ হাজার ব্যক্তির প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল। উগান্ডায় ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে পূর্ব আফ্রিকায় ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বরের প্রাদুর্ভাবের ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি করেছে। গত মাসে তানজানিয়ায় মারবার্গ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘোষণা করে। এর আগে দেশে মারবার্গ প্রাদুর্ভাব শেষ হওয়ার ঘোষণা দেয় রুয়ান্ডা।
ছড়িয়ে পড়া ইবোলা ভাইরাসটি ঠিক কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তা নিশ্চিত করতে না পারলেও বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন সংক্রমিত কোনো পশুর কাঁচা মাংস খাওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন প্রথম সংক্রমিত ব্যক্তি।
ইবোলা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ইবোলা নদীর তীরে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল ভাইরাসটি। ইবোলা নদীর নামানুসারে ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:কোভিড ল্যাবসৃষ্ট ভাইরাস: আস্থা কম সিআইএ’র সিদ্ধান্তে