৫ ফেব্রুয়ারি, (ইউএনবি)— বিরল খনিজ বিষয়ে চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ওই খনিজ চুক্তি ছাড়াই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জামার্নিতে অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন জেলেনস্কি ও ভ্যান্স।
এই বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন আদায়ের জন্য ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন জেলেনস্কি।
এর আগে, গত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের সামনে একটি সংশোধিত খসড়া চুক্তি উপস্থাপন করে কিয়েভ। চুক্তিটি কার্যকর হলে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের বিশাল ভান্ডার মার্কিন বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে বলে জানানো হয়।
তবে মিউনিখে চুক্তিটি কার্যকর না হলে ইউক্রেন এ বিষয়ে কাজ চালিয়ে যাবে বলে বৈঠকের পর এক এক্স পোস্টে বলেছেন জেলেনস্কি।
তিনি বলেন, ‘ভ্যান্সের সঙ্গে বৈঠকটি ভালোভাবেই শেষ হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি বাস্তব এবং নিশ্চিত শান্তির দিকে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত কিয়েভ।’
এ ছাড়াও চুক্তিটি সম্পন্ন করতে আরও কিছু ক্ষেত্রে বিস্তৃতভাবে কাজ করতে হবে বলে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ইউক্রেনের দুই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: শান্তির পথে ফিরতে চায় ইউক্রেন: জেলেনস্কি
তবে চুক্তি না হওয়ার ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট করে কোনো বক্তব্য দেয়নি ওয়াশিংটন কিংবা কিয়েভ।
সম্প্রতি রুশ সেনাবাহিনীর হামলায় পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। ইউরোপের পাশাপাশি মার্কিন সামরিক সহযোগিতা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশটি।
গত সপ্তাহে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি এই চুক্তির একটি রূপরেখা তুলে ধরেন। ইউক্রেনে বিদ্যমান বিপুল খনিজ সম্পদের মানচিত্র প্রদর্শন করে তিনি বলেন, দেশের খনিজ সম্পদ দিয়ে দেওয়া নয়, এসব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে অংশীদারত্বের প্রস্তাব দিতে চান তিনি।
কিয়েভ যে খনিজগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে চায়, তার মধ্যে রয়েছে টাইটেনিয়াম, ইউরেনিয়াম, লিথিয়ামের মতো বিরল ও মূল্যবান কিছু খনিজ পদার্থ।
ট্রাম্প যদিও ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেননি, তবে তিনি বলেছেন, কিয়েভের কাছ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিরল খনিজ পদার্থ চায় যুক্তরাষ্ট্র এবং এরপরই ওয়াশিংটনের সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
শুক্রবার বৈঠকের আগে খনিজ নিয়ে চুক্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভ্যান্স সাংবাদিকদের স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
গত বুধবার কিয়েভ সফরকালে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি খসড়া চুক্তি উপস্থাপন করেন দেশটির ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট।
সে সময় জেলেনস্কি বলেন, ‘মিউনিখে যাতে এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়, সে উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া চুক্তিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখবে ইউক্রেন।’
এরপর শুক্রবার মিউনিখে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্র তার উদ্বেগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, ‘তিনি (জেলেনস্কি) মনে করেন, তাকে এমন কিছুতে স্বাক্ষর করতে বলা হচ্ছে, যেটি পড়ার সুযোগও তার নেই।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়তে হবে: হেগসেথ
অন্য দুটি সূত্র বেসেন্টের প্রস্তাবটিকে ‘একপাক্ষিক’ বলে চিহ্নিত করেছে, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হয়নি তারা।
বৈঠক শেষে জেলেনস্কি নিজে মার্কিন প্রস্তাবকে ‘একপাক্ষিক’ মনে করেন কি না—জানতে চাইলে, ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ব্রায়ান শ্যাটজ বলেন, ‘আমি মনে করি, তার (জেলেনস্কি) দৃষ্টিকোণ থেকে প্রস্তাবটি একতরফা মনে হওয়াই যুক্তিসংগত।’
ট্রাম্পের প্রস্তাবটিতে কিছু সংশোধন দরকার বলে মন্তব্য করলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।