রাশিয়ার কাছে হারানো সব ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে শান্তি চুক্তি করতে ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এ সময় ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদের দাবিও বাস্তসসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো ন্যাটো সফরে হেগসেথ এসব কথা বলেন। এর আগে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া বাস্তবসম্মত হবে। ইউক্রেনের হারানো সব ভূখণ্ড ফিরে পাওয়াটাও অসম্ভব।’
ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।’ ক্রেমলিন ও কিয়েভ থেকেও ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইউক্রেনের উদ্দেশ্যে হেগসেথ বলেন, ‘যুদ্ধ করতে হলে কিয়েভকে অবশ্যই মস্কোর পরিকল্পনা নিয়েও ভাবতে হবে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একমত ট্রাম্প-পুতিন, বসবেন সৌদিতে
তিনি জানান, ‘মস্কো দাবি করেছে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদান থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়াও ২০২২ সালে ইউক্রেনের যে ৪টি অঞ্চল নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেছে, রাশিয়াকে সেখান থেকে তাদের সেনাপ্রত্যাহার করে নিতে হবে। ইউক্রেন এই শর্ত মানলে তারা ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করবে।’
হেগসেথ আরও জানিয়েছেন, ‘ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও সামরিক সাহায্য নিশ্চিত করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এছাড়াও সেখানে একটি শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়ন করার কথাও বলেছে ট্রাম্প।’
তবে ইউক্রেনে নিযুক্ত ওই বাহিনীতে থাকবে না যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা। এছাড়াও রাশিয়া আক্রমণের শিকার হলে ন্যাটোর আর্টিকেল ৫ এর আওতায় ওই শান্তিরক্ষী বাহিনী কোনো সাহায্য পাবে না বলে জানিয়েছেন এই রিপাবলিকান নেতা। উল্লেখ্য, ন্যাটোর আর্টিকেল-৫ অনুসারে, কোনো সদস্যরাষ্ট্র আক্রান্ত হলে সম্মিলিতভাবে অন্যরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এর আগে, ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রে ইয়ারমার্ক জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও পুনরায় রাশিয়ার আগ্রাসনের স্বীকার হওয়ার আশঙ্কা করছে কিয়েভ।
এ কারণে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী সামরিক সহায়তা আশা করছে তারা। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে ন্যাটোর সদস্যপদ কিংবা দেশটিতে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়ন।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার হয়ে যেতে পারে ইউক্রেন: ট্রাম্প
রাশিয়া ও ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে আলোচনা করতে ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ট্রাম্প ও হেগসেথের বক্তব্যের পর ইউক্রেনের দাবি কতটুকু গুরুত্ব পাবে, মার্কিন প্রশাসনের কাছে তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। মস্কোর ভাষায় যা ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’। এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূমি দখল করে নিয়েছে রাশিয়া।