চীনের চলমান কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসের এবাবের মূল বিষয় হলো নেতৃত্বের পরিবর্তন না করে পূর্ব নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
ররিবার (১৬ অক্টোবর) শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী কংগ্রেসটি শি জিনপিংকে নেতা হিসাবে পুনরায় নিযুক্ত করবে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য তার নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করবে। আশা করা হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে সম্ভবত চীনের আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী নেতা হিসাবে তার মর্যাদা আরও উন্নত করবে।
এখন পর্যন্ত কী হয়েছে এবং কী হতে চলেছে তার এক নজর যা জানা যায়:
নেতৃত্বের স্থিতিবস্থা
এবারের কংগ্রেসে দলটির মধ্যে কোন রকম পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। আর শি জিং পিকে এই নেতৃত্বর আসনে বসানো হয়েছিল গত ১০ বছর আগে। যদিও তখন পর্যন্ত এটি স্পষ্ট ছিল না।
তখন থেকে চীনকে আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে নতুন করে সাজিয়েছেন শি। সামরিক বাহিনী বিতর্কিত অঞ্চলের দাবি করেছে। চীনা কূটনীতিকরা আরও দৃঢ় হয়ে বলেছে যে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের দ্বারা নিগৃহীত হবে না।
ক্ষমতারোহনের পর শি অর্থনীতি ও সমাজের ওপর শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে এনেছেন। অপরদিকে ভিন্নমতকে দমনে সেন্সরশিপ ও গ্রেপ্তারের হার বাড়ান। একইসঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ক্র্যাকডাউনে কিছু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীসহ শত শত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছে।
আরও পড়ুন: চীন তিস্তা খনন করতে পারলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন বদলে যাবে: রাষ্ট্রদূত
রবিবার উদ্বোধনী অধিবেশনে শি এক ঘণ্টা এবং ৪৫ মিনিটের দলীয় প্রতিবেদনের বক্তব্যে সবার জন্য বার্তা দেন। যেখানে তিনি জাতির ‘পুনরুজ্জীবন’ বলে অভিহিত করার দিকে দলের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
একাদশকে উন্নীত
শি ইতোমধ্যে প্রতিযোগীদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন এবং ক্ষমতা দৃঢ় করেছে। প্রশ্ন হলো তিনি আরও বেশি ক্ষমতা লাভ করবেন কিনা-এবং সেটি কীভাবে?
কার্যত, তিনি সামরিক, বৈদেশিক নীতি, অর্থনীতি এবং অন্যান্য বেশিরভাগ বিষয়ে একই সঙ্গে দলীয় কার্যনির্বাহীতে নিজেকে প্রধানের দায়িত্বে রেখেছেন।
প্রতীকীভাবে, ‘শি জিনপিং চিন্তাধারা’ নামে পরিচিত তার মতাদর্শ ২০১৭ সালের পূর্ববর্তী কংগ্রেসে পার্টি কংগ্রেসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
সংবিধানের আরেকটি সংশোধনী এই সপ্তাহের কংগ্রেসের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। সেবিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা না হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন এটি দলে তার মর্যাদা আরও বাড়াতে পারে।
নতুন নেতৃত্ব
কংগ্রেসের সমাপনীর পরের দিন পার্টির পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য তার শীর্ষ নেতৃত্বের উন্মোচন করার রেওয়াজ রয়েছে। পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির নামযুক্ত ছোট দলটি প্রথমবারের মতো যখন তারা মঞ্চে হেঁটে আসে তখন তা চিহ্নিত হয়।
তৃতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের মেয়াদ পেয়ে শি শীর্ষে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এটি দলের নেতাদের দুই মেয়াদের পরে পদত্যাগ করার জন্য একটি অলিখিত চুক্তির সাথে বিলীন হবে।
স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে আরো সাতজন সদস্য রয়েছেন। তারা শির ভবিষ্যত এবং নীতির দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
তিনি অনুগতদের দিয়ে কমিটি স্তূপাকার করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে চীনের অর্থনৈতিক মন্দা তাকে রাষ্ট্র-চালিত অর্থনীতির প্রতি তার উৎসাহ কমাতে এবং আরও বাজার-ভিত্তিক পদ্ধতির সমর্থকদের অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য করবে কিনা।
২০১৭ সালে বর্তমান স্থায়ী কমিটির জন্য কোনও সুস্পষ্ট উত্তরসূরি বাছাই করা হয়নি। যা ইঙ্গিত দেয় যে শি তৃতীয় মেয়াদের জন্য ইঙ্গিত দেয়। আবার এটি করা তার আরও দীর্ঘ থাকার পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেবে।
সপ্তাহ শেষের জন্য অপেক্ষা করুন
এই সপ্তাহের বেশিরভাগ অধিবেশন রুদ্ধদ্বার হওয়ায় সপ্তাহ না গড়ানো পর্যন্ত এর কিছুই জানার সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের যেকোনো সংশোধনী সাধারণত শনিবারের সমাপনী অধিবেশনে ঘোষণা করা হবে এবং রবিবার নতুন নেতৃত্ব বাছাই হবে।
কোভিড শূন্য নীতি
আরও পড়ুন: ‘কিছু ভুল বোঝাবুঝি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে’
মহামারির বিধিনিষেধ অনেক চীনাদের ক্লান্তির কারণ যা জীবন এবং অর্থনীতিকে ব্যাহত করেছে। আরও তাৎক্ষণিক প্রশ্ন হলো পার্টি কংগ্রেসের পরে কোনও শিথিলতা আছে কি না। উত্তর সম্ভবত অবিলম্বে নয় এবং পরিবর্তনগুলো যখন আসে তখন সম্ভবত ধীরে ধীরে হবে।
কমিউনিস্ট পার্টি সর্বদা কংগ্রেসের চারপাশে একটি ইতিবাচক আলোতে দেশকে চিত্রিত করতে এবং কোনও সামাজিক বিঘ্ন এড়াতে আগ্রহী। এর মধ্যে বড় একটি হলো কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব।
তবে কংগ্রেসের পরেও ভ্রমণ এবং অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা হলে কোভিড-১৯ কতটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে তা অনিশ্চিত থাকবে। তাই দলীয় কর্মকর্তারা এটিকে স্বাভাবিক করার বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
এছাড়াও সবসময় চিন্তা করার জন্য আরেকটি বড় ঘটনা আছে। পার্টি কংগ্রেসের ফলোআপ হিসেবে চীনের আইনসভা সম্ভাব্য আগামী বছরের মার্চে মাসে মিলিত হবে। অনেক চাইনিজ অন্তত সেটি পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন শুরু: শি জিনপিং ৩য় মেয়াদেও দায়িত্ব পাচ্ছেন