ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরে তিন দশক পরে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) প্রথমবারের মতো মহররম উপলক্ষে শিয়া মুসলমানদের একটি ধর্মীয় মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তিন দশকেরও বেশি সময় আগে বিতর্কিত এই অঞ্চলে ভারতবিরোধী বিদ্রোহ শুরু হয়।
মিছিলটি শ্রীনগরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র প্রদক্ষিণ করে। এসময় অংশগ্রহণকারীরা বেশিরভাগই কালো পোশাক পরেছিলেন, তারা নিজেদের বুকে আঘাত করছিলেন এবং মাতম (শোকগীতি আবৃত্তি) করছিলেন।
সম্প্রতি সুইডেন ও ডেনমার্কে প্রকাশ্যে পবিত্র কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে কেউ কেউ কুরআন নিয়ে এসেছিলেন।
মহররম হলো শিয়া মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র মাস। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে বর্তমান ইরাকের কারবালার প্রান্তরে এক যুদ্ধে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নাতি ইমাম হুসাইন এবং তার ৭২ জন সঙ্গী শহীদ হন এই মাসে। এই উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায় মাসজুড়ে শোক পালন করে। তবে আশুরা অর্থাৎ মহররমের দশম দিন তারা অধিক শোকাতুর হয়ে উঠেন।
১৯৮৯ সালে ভারত থেকে এই অঞ্চলের স্বাধীনতা বা প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হওয়ার এক বছর পরে শ্রীনগরে মহররমের অষ্টম ও দশম দিনে করা মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশের অন্যত্র সমাবেশের অনুমতি ছিল।
ভারত থেকে স্বাধীন হওয়ার এ বিদ্রোহে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের সাথে যুদ্ধের বিষয়ে সতর্ক করলেন ইমরান
বিগত বছরগুলোতে বহু মানুষ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহররমে শোক মিছিলের চেষ্টা করেছে। তবে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে শক্ত হাতে তাদের দমন করেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অঞ্চলের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।
শ্রীনগরের বেসামরিক প্রশাসক মহম্মদ আইজাজ বলেছেন, মিছিলটি ছিল ‘শান্তি লাভের উদ্দেশ্যে।’
শিয়া নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনার পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে-অংশগ্রহণকারীরা ‘দেশবিরোধী স্লোগান দেবে না বা গুজব রটাবে না। অথবা কোনো জাতীয় প্রতীককে অসম্মান করবে না।’
শাবিব উল হাসান নামে একজন তরুণ অংশগ্রহণকারী বলেন, ‘প্রায় ৩৪ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আবার এই ঐতিহাসিক মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার শ্রীনগরে মহররমের অষ্টম দিনের শোকযাত্রা করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ দশম দিনের মিছিলেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন: কাশ্মিরে ৮ বিদ্রোহী ও ২ ভারতীয় সেনা নিহত
কাশ্মিরি মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, ভারত সরকার কাশ্মিরের হিমালয়ের অমরনাথ তীর্থস্থানে একটি পবিত্র গুহায় বার্ষিক হিন্দু তীর্থযাত্রা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার যুক্তি দিয়ে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে।
বর্তমানে দুই মাসের হিন্দু তীর্থযাত্রা চলছে। ভারত জুড়ে কয়েক হাজার হিন্দু তীর্থযাত্রী সেখানে উপস্থিত হয়েছে। গুহা মন্দিরের দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলো হাজার হাজার সৈন্য পাহারা দেয়।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার এই অঞ্চলের আধা-স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর থেকে মুসলমানদের উপর নিষেধাজ্ঞা অনেক বেড়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, ভারত সরকার তারপর থেকে ভিন্নমত, নাগরিক স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে রোধ করে ‘নয়া কাশ্মির’ বা ‘নতুন কাশ্মির’ তৈরি করার চেষ্টা করেছে।
কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলের প্রধান ধর্মগুরু এবং শীর্ষ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুককে তার বাড়িতে বন্দি করেছে। এমনকি এই অঞ্চলের প্রধান মসজিদে বৃহৎ জামাতের নামাজও সীমাবদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন: কাশ্মিরে পাকিস্তানের সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, দুই পাইলট নিহত