রাশিয়ার অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যেই ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কিয়েভ সফরে যাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত তিনটি দেশের নেতা।
এদিনও ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে একটি আবাসিক এলাকায় সিরিজ আঘাত হেনেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানায় রুশ আর্টিলারি হামলায় কিয়েভজুড়ে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। হামলায় একটি ১৫ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে আগুন ধরে যায়। এসময় অন্তত একজন নিহত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন ভকনটির ভেতরে আটকা পড়েছে।
এছাড়াও বিস্ফোরণে একটি আন্তঃনগর পাতাল রেল স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরটির কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণের একটি ছবি টুইট করে বলেছে, এই স্টেশনগুলোতে আর ট্রেন থামবে না।
রাশিয়া কিয়েভের ওপর আক্রমণ ক্রমান্বয়ে বাড়াচ্ছে। পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভেনিয়ার নেতারা এর মধ্যেই ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিশনে কিয়েভ পরিদর্শনে যাবে।
চেক প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘এই সফরের উদ্দেশ্য ইউক্রেন ও এর স্বাধীনতার প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন প্রকাশ করা।’
তার সঙ্গে যোগ দেবেন স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানসা, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি এবং জারোস্লো কাকজিনস্কি, যিনি পোল্যান্ডের নিরাপত্তার জন্য উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং রক্ষণশীল শাসক দলের নেতা।
আরও পড়ুন: আলোচনা চলমান সত্ত্বেও ইউক্রেনে রুশ হামলা অব্যাহত
সম্প্রতি কিয়েভের উপকণ্ঠে লড়াই তীব্র হয়েছে এবং রাজধানীর চারপাশে বিক্ষিপ্তভাবে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার ভোরে আর্টিলারি হামলায় পশ্চিম কিয়েভের স্ব্যাতোশিনস্কি জেলা ও ইরপিনের শহরতলির সংলগ্ন এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছে। কিয়েভের উত্তরের পডিলস্কি জেলার একটি ১০ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং গোলাবারুদের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ওলেক্সি কুলেবা বলেছেন, রুশ বাহিনী ইরপিন, উত্তর-পশ্চিম কিয়েভ শহরতলির হোস্টমেল এবং বুচাতেও রাতে হামলা চালিয়েছে।
একটি ইউক্রেনীয় টেলিভিশনে কুলেবা বলেন, অনেক রাস্তা (ওই এলাকার) ইট ও ইস্পাতের টুকরোর স্তূপে পরিণত হয়েছে। নাগরিকেরা কয়েক সপ্তাহ ধরে বেসমেন্টে লুকিয়ে আছে এবং এমনকি হামলার ভয়ে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে।
গত ১০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে প্রাণঘাতী হামলায় মারিউপোল শহরের নাগরিকদের বাড়িঘর এবং অন্যান্য ভবনকে চূর্ণ করে দিয়েছে। এবং মানুষ খাবার,পানীয়,বিদ্যুৎ ও ওষুধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে৷
সোমবার শহরটির কাউন্সিলর জানিয়েছে, ১৬০টি বেসামরিক গাড়ির একটি কনভয় একটি মানবিক পথ দিয়ে নাগরিকদের বন্দর নগরী মারিউপোল থেকে অন্যত্র নিয়ে গেছে।
বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেয়ার এবং চার লাখ ৩০ হাজার নাগরিকের এই শহরটিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা যুদ্ধের কারণে ব্যর্থ হয়েছিল।
চেচনিয়ার রাশিয়ান অঞ্চলের ক্রেমলিন-সমর্থিত নেতা একটি মেসেজিং অ্যাপে বলেছেন যে চেচেন যোদ্ধারা মারিউপোল আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতির ইঙ্গিত ইউক্রেনের
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক অবস্থা বাড়াতে এবং যুদ্ধের জন্য ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দেশে রাখতে চাইছেন।
অন্যদিকে,রাশিয়ান সামরিক বাহিনী বলেছে যে পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত শহর ডোনেৎস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ২০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তবে এ তথ্যটি যাচাই করা যায়নি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ২১তম দিনে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নীতিনির্ধারকেরা দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনার পরিকল্পনা করছে। সোমবার ব্যর্থ হওয়ার পরে মঙ্গলবার পুনরায় রুশ ও ইউক্রেনীয় আলোচকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। উভয় পক্ষ আলোচনার বিষয়ে কিছু আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সহযোগী মাইখাইলো পোদোলিয়াক বলেছেন,‘শান্তি, যুদ্ধবিরতি, অবিলম্বে সেনা প্রত্যাহার এবং নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ নিয়ে আলোচনা হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে জাতিসংঘ কমপক্ষে ৫৯৬ জন বেসামরিক নাগরিক মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। যদিও তাদের ধারণা প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
ইউক্রেন দাবি করেছে, মারিউপোলের যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনী ১৫০ জন রুশ সেনাকে হত্যা করেছে এবং দুটি রাশিয়ান ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে।
ইতোমধ্যে ২৮ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় পোল্যান্ড এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের বৃহত্তম শরণার্থী সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি জেলেনস্কির