অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিশ্চিত করেছেন যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে ৪শ’ কোটি ডলার পাবে। এই ঋণের প্রথম কিস্তি সংস্থাটি আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দিবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।
আইএমএফ জানিয়েছে, তারা এই ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে। সফররত আইএমএফের একটি দল ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই সপ্তাহ ধরে আলোচনা বুধবার শেষ হওয়ার পর এই চুক্তি হয়।
ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৪শ’ কোটি ডলার নিশ্চিত করে কামাল বলেন, '২০২৬ সাল পর্যন্ত সাত কিস্তিতে এই ঋণ পাওয়া যাবে।’
‘আমি আশা করি, আইএমএফ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসডিআর ৩৫২.৩৫ মিলিয়নের প্রথম কিস্তির অর্থ দিতে সক্ষম হবে। অবশিষ্ট ঋণ স্পেশাল ড্রয়িং রাইটসের (এসডিআর) অধীনে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি ছয় মাসে এসডিআর ৫১৯ মিলিয়নের ছয়টি সমান কিস্তিতে পাওয়া যাবে,’ তিনি যোগ করেন।
আইএমএফের প্রতিটি সদস্য দেশের কোটার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এসডিআর বরাদ্দ করা হয়। কোটার পরিমাণ যত বেশি হবে, একটি দেশ তত বেশি এসডিআর বরাদ্দ পাবে। সাধারণভাবে, শক্তিশালী অর্থনীতিতে উচ্চতর কোটা রয়েছে।
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে বিশ্ব নেতাদের প্রতি অর্থমন্ত্রীর আহ্বান
অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ মিশন তাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এ তথ্য জানিয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সকল আনুষ্ঠানিকতা ও চূড়ান্ত বোর্ড অনুমোদন সম্পন্ন করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারি নথি অনুসারে, বর্ধিত ঋণ সুবিধার (ইসিএফ) আওতায় বাংলাদেশ সুদমুক্ত এসডিআর ৮২২ দশমিক ৮২ মিলিয়ন পাবে। বর্ধিত তহবিল সুবিধা (ইএফএফ) এর অধীনে একটি উন্মুক্ত (ফ্লোটিং) এসডিআর ১ শতাংশ সুদের হারে এসডিআর ১৬৪৫ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন পাবে। অন্যদিকে এসডিআর রেটের সঙ্গে শুন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে যা দাঁড়াবে তাই হবে রেজিলিয়েন্স ট্রাস্ট ফ্যাসিলিটি বা আরসিএফের ১০০ কোটি ডলার ঋণের সুদহার।
কামাল বলেন, সারা বিশ্বের অর্থনীতি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে অস্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। ডলারের তুলনায় প্রায় সব দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছে বলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে।
তিনি বলেন, 'আমরা আইএমএফকে এই অস্থিতিশীলতা যাতে সংকটে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি পূর্বনির্ধারিত পদক্ষেপ হিসেবে ঋণের জন্য অনুরোধ করেছি। এর আগেও বেশ কয়েকবার তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমরা চলমান ঋণ আলোচনা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।’
সফররত আইএমএফ টিম বাংলাদেশ সরকারের সকল স্টেকহোল্ডারদের, বিশেষ করে আর্থিক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
‘তারা (আইএমএফ) আমাদের বলেছে, আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো। আইএমএফ টিম আমাদের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা চার বছরের জন্য ঋণ কর্মসূচি নিতে যাচ্ছি,’ বলেন কামাল।
চলতি বছরের জুলাই মাসে ঢাকা ঋণ চাওয়ার পর ঋণের আবেদন নিয়ে আলোচনা করতে এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ওয়াশিংটনভিত্তিক বৈশ্বিক ঋণদাতার প্রতিনিধি দল গত ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশে আসে।
এটি আইএমএফের কাছ থেকে চাওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ। কারণ কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে।
সফরকালে আইএমএফের দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), ইআরডি, এনবিআর, বিডা এবং অন্যান্য আর্থিক সংস্থার সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করে।
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রার হার বাজারভিত্তিক করা হবে: অর্থমন্ত্রী
বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়াতে আইএমএফের কোনো প্রস্তাব পাইনি: অর্থমন্ত্রী