করোনার সময়ে আর্থিক লেনদেনের অংশীদারিত্বে এমএফএস সেক্টর দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে। এমএফএস প্রদানকারী সংস্থা নগদ করোনায় আর্থিক সহায়তা, উপবৃত্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা নেট প্রোগ্রাম সহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি ভাতা বিতরণে নেতৃত্ব দিয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক ইউএনবির বিশেষ প্রতিনিধি মাসউদুল হককে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন,এই ভাতাগুলোর স্বচ্ছ বন্টন সময় বাঁচিয়েছে এবং সিস্টেম লস কমিয়েছে।
মিশুক দেশের অর্থনীতি এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) নিয়ে বাজেট-পরবর্তী সময়ের পরে তার চিন্তাভাবনাও জানিয়েছেন।
এমএফএস শিল্পের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে, এমএফএস শিল্প বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নগদ এমডি বলেন, এমএফএস সেক্টর করোনার সময় দেশের আর্থিক লেনদেনের নেতৃত্ব দিয়েছে। নগদ করোনায় আর্থিক সহায়তা, উপবৃত্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি ভাতা বিতরণে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ভাতার স্বচ্ছ বন্টন সময় বাঁচিয়েছে ও সিস্টেম লস কমিয়েছে। সমষ্টিগতভাবে, সমস্ত অপারেটর বর্তমানে দৈনিক ভিত্তিতে গড়ে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন করে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে যখন নগদ বাজারে প্রবেশ করে, তখন সমস্ত অপারেটরের দৈনিক লেনদেন ছিল প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। বলা বাহুল্য, নগদ বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। নগদের সমস্ত অনন্য উদ্ভাবন, বিশেষ করে, ব্যবহারকারীদের মোবাইল আর্থিক পরিষেবা গ্রহণে আগ্রহী করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তানভীর মিশুক বলেন, আমার মতে আমরা বর্তমানে বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা অবস্থানে আছি। আমরা যেভাবে করোনা সংকট মোকাবিলা করেছি তা অনুকরণীয়। এমনকি অনেক উন্নত দেশও এই দুর্দশা মোকাবিলায় লড়াই করেছে।
তিনি বলেন, আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। এই সেতু শুধু বাংলাদেশের ওপর নয়, প্রতিবেশি কয়েকটি দেশের ওপরও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে। ধারণা করা হচ্ছে শুধুমাত্র একটি সেতু আমাদের রাজস্ব এক দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে। সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর টানেল, মেট্রো রেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও যোগ হবে। গোটা বিশ্ব এখন এশিয়ান টাইগারদের এগিয়ে চলা দেখবে।
আরও পড়ুন: সিটিজেন্স ব্যাংক পিএলসি’র বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি যথেষ্ট সন্তোষজনক কিনা জানতে চাইলে মিশুক জানান, অবশ্যই এইখানে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমাদের কল্যাণে এখন কিছুটা হলেও পরিশিলিত চেহারা হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ এ বিষয়ক প্রতিবেদন ‘দ্য গ্লোবাল ফিন্ডেক্স’ বলছে বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওয়তায় এসেছে। অথচ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট আর কার্ড সংখ্যা দিয়ে এটি ২০ শতাংশের মতো। বাকি পুরোটাই এসেছে এমএফএস-এর মাধ্যমে। এখানে ‘নগদ’-এর ভূমিকাই বড়।
উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে, আমাদের অবশ্যই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে এবং দ্রুত নেপাল, ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে ছাড়িয়ে যেতে হবে। প্রথাগত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার পরিবর্তে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস হবে সরকারের এই উদ্দেশ্য অর্জনের প্রথম হাতিয়ার।
নগদ এমডি বলেন,এক্ষেত্রে আশাবাদী হওয়ার মতো উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে ‘নগদ’। মাত্র শোয়া-তিন বছরে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা এখন সাড়ে ছয় কোটির কাছাকাছি। আর্থিক খাত তো নয়ই, বাংলাদেশের আর কোনো কোম্পানি এত দ্রুত এত বেশি গ্রাহক পায়নি। ইতোমধ্যে ‘নগদ’-এর প্রতিদিনের লেনদেন হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে।
এখানে কাজের সুযোগ কতোটা জানতে চাইলে মিশুক বলেন, দ্য গ্লোবাল ফাইন্ডেক্সের মতে, ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্ট ছাড়াই বেশিরভাগ ব্যক্তির কাছে মোবাইল ফোন রয়েছে। অতএব, আমাদের এই ব্যাঙ্ক একাউন্টবিহীন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সমীক্ষা অনুসারে, আমরা এখনও ৩০ মিলিয়ন ব্যক্তিকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনতে পারিনি। সুতরাং, এটি আমাদের জন্য বাজার সম্প্রসারণের একটি সুযোগ।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে শ্রীলংকা, ভারত বা নেপাল আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও অনেকগুলো ক্ষেত্রে কিন্তু আমরাই নেতৃত্ব দিচ্ছি। যেমন–এমএফএস-এর মাধ্যমে ইউটিলিটির বিল পরিশোধ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এখানে বাংলাদেশই সবার চেয়ে এগিয়ে।
আরও পড়ুন: দেশে ইইউ চেম্বার অব কমার্স প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত
২৯ জুন বাজারে নতুন নোট ছাড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক
সেবা সম্প্রসারণে এই শিল্প কতটা উদ্ভাবনী হয়েছে জানাতে চাইলে তানভীর মিশুক বলেন,সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করা হয়েছে। আর এই কাজটি অনেকাংশে সম্পন্ন হয়েছে নগদের দ্বারা। পূর্বে, এটি ছিল স্থানীয় হুন্ডি যা একটি আনুষ্ঠানিক লেনদেনে রূপান্তরিতকরা হয়েছে। আমরা একটি উদ্ভাবন প্রবর্তন করেছি যা অ্যাকাউন্ট খোলার জটিল পদ্ধতিকে সুগম করেছে, যা ডি-কে ওআইসি, *১৬৭# নামে পরিচিত।
এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে, তারা সহজভাবে *১৬৭# ডায়াল করে একটি আর্থিক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।
এমএফএস অপারেটররা জিডিপিতে কতটা অবদান রাখতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে নগদ এমডি বলেন,
জিডিপিতে এমএফএস খাতের অবদান নিয়ে কোনো কাজ এখনো হয়নি। তবে এটি তো অর্থনীতির স্বতসিদ্ধ কথা যে, স্বচ্ছতা বজায় রেখে টাকা লেনদেনে গতি দিতে পারলে অর্থনীতিও অনেক দ্রুত এগিয়ে যায়। আমরা সেই কাজটাই করছি।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের হিসাবে তারা জিডিপিতে সাড়ে ৭ শতাংশ অবদান রাখছে। এমএফএস খাতেও দশ লাখের বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিমাসে এখন এক লাখ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। আমার বিবেচনায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের চেয়ে এমএফএস খাতের অবদান জিডিপিতে আরো অনেক বেশি।