কেবল নিরাপদ সঞ্চয় পরিকল্পনাই নয়, অনেকের জন্য আয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার বাহক সঞ্চয়পত্র। সরকার কর্তৃক জারি করা এই বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো পরিচালনা করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সাপেক্ষে। তাই এই বিনিয়োগ থেকে নির্ধারিত মুনাফা প্রাপ্তির সম্ভাবনা ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মূলত সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সময়েই ব্যাংকের সার্বিক দিক যাচাই করে নেওয়া জরুরি। এসব সত্ত্বেও পরে যেকোনো ব্যাংক নানা কারণে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংকটি পরিবর্তন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। চলুন, সঞ্চয়পত্রের ব্যাংক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা এবং অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের পদ্ধতিটি জেনে নেওয়া যাক।
কোন অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের ব্যাংক পরিবর্তন জরুরি
সঞ্চয়পত্র বিক্রয়কারী ব্যাংক যখন সার্বিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তখন এই প্রভাব সঞ্চয়পত্রের উপরও পড়ে। এ সময় বিনিয়োগ প্রকল্পটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ফলে এর গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হন। মেয়াদ শেষের পরেও নগদ মুনাফার জন্য অপেক্ষার সময় ক্রমাগত দীর্ঘায়িত হতে থাকে। তখন প্রয়োজনের সময়ে অর্থপ্রাপ্তির ঝুঁকিতে পড়ে যান সঞ্চয়পত্র ধারকরা। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্যই দুর্বল ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্রটি অন্য কোনো সবল ব্যাংকে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
এক ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করার পদ্ধতি
• প্রয়োজনীয় নথিপত্র
• জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি
• সঞ্চয়পত্রের প্রত্যয়নপত্র, যেটি ক্রয়ের সময় ব্যাংক থেকে দেওয়া হয়েছিল
• বর্তমান এবং নতুন যে ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র স্থানান্তর করা হবে; উভয় ব্যাংকের চেক
• টিন সার্টিফিকেট
• ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য পরিবর্তন ফর্ম পূরণ
প্রথমেই নিম্নোক্ত লিংক থেকে আবেদন ফর্মটি ডাউনলোড; অতঃপর প্রিন্ট করে নিতে হবে: https://file-dhaka.portal.gov.bd/uploads/570e08be-5c15-4b2a-ae5d-2279c68459c4//624/035/312/624035312e5a4337251782.pdf
ফর্মের শুরুতেই প্রদর্শিত অনুচ্ছেদের শূন্যস্থানগুলো সঞ্চয়পত্র সার্টিফিকেট অনুসারে নির্ভূলভাবে পূরণ করতে হবে। এ সময় সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের তারিখ, টাকার পরিমাণ, ধরন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং ব্যাংক পরিবর্তনের কারণ উল্লেখ করতে হবে।
এরপর টেবিল অংশে ‘বিদ্যমান তথ্য’-এর কলামে দিতে হবে বর্তমান ব্যাংক সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলি। অপরদিকে ‘সংশোধিত তথ্য’ থাকবে নতুন যে ব্যাংকের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রটি যুক্ত হবে তার সব তথ্য।
এ সময় উভয় ব্যাংকের চেক অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নাম, শাখা, রাউটিং নম্বর, অ্যাকাউন্টের ধরন, অ্যাকাউন্ট নম্বর, এবং অ্যাকাউন্টের শিরোনাম বা অ্যাকাউন্টের মালিকের নাম লিপিবদ্ধ করতে হবে।
রাউটিং নম্বর মূলত ৯ অংকের একটি সংখ্যা, যেটি চেক বইয়ের ব্যাংকের শাখার নামের আশেপাশে থাকে। এছাড়া গুগলে ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখার নাম লিখে সার্চ করেও পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দুটির সঙ্গে যে মোবাইল নম্বরগুলো নিবন্ধিত রয়েছে, শুধুমাত্র সেগুলো উল্লেখ করা আবশ্যক। এগুলোর স সর্বশেষে তালিকাভুক্ত হবে এনআইডি ও টিন নম্বর।
উপরন্তু, সঞ্চয়পত্রের মালিক/ধারকের সইয়ের স্থানে আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা অবশ্যই এনআইডির অনুরূপ হতে হবে। অতঃপর একটি সক্রিয় মোবাইল নম্বর প্রদানের মাধ্যমে ফর্ম পূরণ সম্পন্ন হবে।
আরো পড়ুন: পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
আবেদন জমা এবং প্রক্রিয়াকরণের সময়
সঞ্চয়পত্র যার নামে তাকে সশরীরে পূরণ করা ফর্ম জমা দিতে হবে। এ জন্য যে ব্যাংকের যে শাখা থেকে সঞ্চয়পত্র নেওয়া হয়েছিল সেই শাখায় উপস্থিত হতে হবে। জমা দেওয়ার পর আবেদন প্রক্রিয়াকরণে ২ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
বিকল্প উপায় হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেকোনো শাখায়ও আবেদন জমা দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রের জন্য একটি পৃথক সেকশনই থাকে। আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য সরাসরি সেই সেকশনে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের স্থানান্তর সম্পন্ন হতে সময় লাগতে পারে ১৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ১ মাস।
আরো পড়ুন: ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
পরিশিষ্ট
এভাবে সঞ্চয়পত্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তনের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে নিরাপদ মুনাফাপ্রাপ্তির পথ সুগমের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সঞ্চয়পত্র সনদ, বর্তমান এবং উদ্দিষ্ট ব্যাংকের চেক, এনআইডি ও টিন সনদ সঙ্গে রাখা জরুরি। এই স্থানান্তরকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ এক মাস সময় নেয়, যা অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় যথেষ্ট দ্রুত প্রক্রিয়া। সর্বপরি, ভবিষ্যতে একই সংকটময় পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তিতে এই প্রচেষ্টাটি গ্রাহকদের সতর্কতামূলক প্রস্তুতির নিশ্চায়ক।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি