বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আরও দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্পকে জাতির সঙ্গে প্রহসন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে জাতির সঙ্গে (ইভিএম সংগ্রহের নামে) কী ধরনের উপহাস হচ্ছে যখন মানুষ চায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক এবং আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনকে বলেছে যে আমরা ইভিএম চাই না’।
বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএম কেনার জন্য ইসি ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা চেয়েছে। ‘এটি একটি দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের মতো, কারণ এই দেশে কোন জবাবদিহিতা নেই।’
এর আগে সোমবার দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কেনার প্রকল্প ও সেগুলোর ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত করে ইসি। প্রকল্পটি এখন সরকারের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেট লুটেরা বান্ধব: মির্জা ফখরুল
ফখরুল বলেন, কয়েকদিন আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে স্পষ্ট করে বলেছেন, অধিকাংশ প্রকল্পই জনগণের টাকা চুরির জন্য করা হয়। ‘এমনকি এখানে প্রকল্পের মূল্যায়ন করা হয় না,মাঝরাতে ঋণ চুক্তি সাক্ষরিত হয় । এই হলো দেশের সার্বিক অবস্থা।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ভয়ঙ্কর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বলে দেশে কোনো সরকার বা শাসন ব্যবস্থা নেই। ‘আমরা কল্পনাও করিনি একদিন এমন বাংলাদেশ দেখতে পাব।’
তথ্য সংগ্রহের নামে হয়রানি
ফখরুল অভিযোগ করেন, পুলিশ গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের নামে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন ‘বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ এক রাজনৈতিক কর্মীর কাছ থেকে অন্য রাজনৈতিক কর্মীর তথ্য সংগ্রহ করছে। তারা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির তালিকাও সংগ্রহ করছেন। পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং পুলিশ আইন বা পুলিশ বিধি বা অন্য কোনো আইন দ্বারা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়’।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারও লঙ্ঘন করছে এবং এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে নাগরিকের আইনি অধিকার ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ভোগে হস্তক্ষেপ করছে। এটি সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৪৩ অনুচ্ছেদের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
তিনি বলেন, দৃশ্যত দমন ও ভীতি ছড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতা-কর্মী, তাদের সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন ও সম্পত্তির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে।
ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি এ অবস্থার অবসান চায়। সাধারণ নাগরিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে আমরা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাই’।
তিনি বলেন, যখনই বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন শুরু করে, তখনই পুলিশ তাদের বাড়ি বাড়ি অভিযান শুরু করে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। ‘তাদের এটা করার কোনো সাংবিধানিক কর্তৃত্ব নেই। সেখানে তারা জনগণকে হয়রানি ও আন্দোলন দমনের কৌশল হিসেবে এটা করছে। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং তাদের এ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু ও তার স্ত্রীসহ দলের সিনিয়র নেতারা কীভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন তাও বর্ণনা করেন মির্জা ফখরুল।
‘যেভাবে সিনিয়র নেতাদের ওপর হামলা করা হয়েছে এবং বুলু ও তার স্ত্রীকে যেভাবে মারধর করা হয়েছে তা কল্পনাতীত। তবে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে
গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকি একটি মামলাও হয়নি। এটা রাষ্ট্রের জন্য অসম্মানজনক।’
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য হাস্যকর: মির্জা ফখরুল
অচিরেই দেশব্যাপী সরকার পতন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে: মির্জা ফখরুল