সারাদেশে ভোটারদের কম উপস্থিতি ও বিক্ষিপ্ত সহিংসতার মধ্যেই রবিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে চলছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
ইউএনবির ঢাকা, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, ভোলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনাসহ সারা দেশের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, প্রত্যাশার চেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রগুলোতে।
রাজধানীর গুলশান-২ এর গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করে ইউএনবির প্রতিবদেক জানান, বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রথম তিন ঘণ্টায় ১৩ হাজার নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে মাত্র ৩৫ জন ভোট দিয়েছেন।
তবে সকাল ১০টার পর হঠাৎ ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য ভোটারের লাইন দেখা যায়।
ঢাকা-৮ (রমনা-মতিঝিল) আসনের উদয়ন স্কুল কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের প্রথম দুই ঘণ্টায় মাত্র ৫০টি ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিসাইডিং অফিসার লিটন দাস।
তিনি বলেন, 'সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ চলছে।’
ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-৮ আসনের তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের প্রথম চার ঘণ্টায় মাত্র ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
এদিকে ঢাকা-১২ আসনের তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুটি বুথে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে ৮৯৮ জন ভোটারের মধ্যে ৫০ জন ভোট দিয়েছেন।
ঢাকা-১৮ আসনের উত্তরা হাই স্কুল ও কলেজ এলাকায়ও একই অবস্থা।
ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তোফাজ্জল হোসেন জানান, পুরুষ ভোটারদের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্র-৩-এ মোট নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ১৫৮ জন হলেও দুপুর ১২টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাত্র ১২০টি ভোট পড়েছে।
তবে ঢাকা-১৬ আসনের কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে।
ভোটের প্রথম চার ঘণ্টায় রাজধানীর বাইরেও কম ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সকাল ১০টা পর্যন্ত দিনাজপুরের ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা আশ করছেন কুয়াশা ও ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রভাব কমে গেলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।
এদিকে প্রার্থীদের সমর্থকরা কেন্দ্রের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।
নির্বাচনের প্রথমার্ধে কুমিল্লা, বাগেরহাট, বরিশাল ও হবিগঞ্জে প্রত্যাশার চেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সারা দেশে বিক্ষিপ্ত সহিংসতায় একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মীরকাদিমের টেঙ্গরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এক সমর্থককে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া চট্টগ্রামের একাধিক স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: ‘ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ভাবছি না, আমার কাজ ভোট আয়োজন করা’
চট্টগ্রাম-১০ আসনের কালশী-পাহাড়তলী এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
যশোরে ভোট গ্রহণ শুরুর এক ঘণ্টা আগে একটি ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণে বাংলাদেশ আনসারের এক সদস্য আহত হয়েছেন।
বরিশাল-৫ আসনেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপন অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা তার সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে এবং ভোট গ্রহণে বাধা দিচ্ছে।
অনিয়মের অভিযোগ
অনিয়মের অভিযোগে নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাবো) আসনের একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. বদিউল আলম জানান, ব্যালট জালিয়াতির অভিযোগে ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে ব্যালট বইয়ের অসংখ্য পাতায় নৌকা প্রতীক দেখানো হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ অন্য কর্মকর্তারা জানান, কিছু লোক এসে জোরপূর্বক নৌকা প্রতীকে সিল দিয়ে চলে যায়।
এদিকে ময়মনসিংহের গফরগাঁও আসনে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং নরসিংদী-২ আসনে জাতীয় পার্টির এক প্রার্থী অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছেন।
আরও পড়ুন: ভোট দিলেন স্পিকার ড. শিরীন