অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের শেষ মেয়র খোকার কফিন দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপির নয়াপণ্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এনে অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হয়। তাকে একনজর দেখতে জড়ো হন হাজারো অশ্রুসিক্ত নেতা-কর্মী।
সেখানে জানাজার আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য বেদনার দিন। সাদেক হোসেন খোকার প্রিয় দলীয় কার্যালয়ের সামনে আমরা তার জানাজায় শরিক হয়েছি। সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিনি পাঁচ বছর দেশের বাইরে ছিলেন। সরকার তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সাজা দিয়েছিল।’
বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে খোকা অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন জানিয়ে তিনি দুঃখ করে বলেন, এ বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজ দেশে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারলেন না।
‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াও কারাগারে থাকার কারণে তাকে শেষ দেখা দেখতে পেলেন না,’ আক্ষেপ করেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খোকার মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হবে না। ‘যখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে সাদেক হোসেন খোকার ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল তখন তিনি আমাদের খারাপ সময়ে ফেলে চলে গেছেন। তার জান্নাত কামনা করে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি।’
এ সময় খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন বলেন, তার বাবা মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত তার দল ও চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি অনুগত ছিলেন। ‘আমাকে তার শেষ কথা ছিল তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে যেন কোনো আপস না করি। তিনি আমাকে বলেছিলেন খালেদা জিয়া ও বিএনপির সম্মতি ছাড়া যাতে কিছু না করি।’
তবে ইশরাক জানান, তার বাবা তার মরদেহ দেশে নিয়ে কবর দেয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। তার বাবাকে সম্মান ও ভালোবাসা দেখানোর জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ দেন তিনি।
পরে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণে খোকার তৃতীয় (দেশে দ্বিতীয়) জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখকে সাথে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে খোকার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং তা দলীয় পতাকায় মুড়ে দেন।
বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালে খোকার মরদেহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরে। মরদেহ বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমান সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
সাবেক মন্ত্রী খোকা নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
তার প্রথম জানাজা সোমবার রাতে নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন।
বিমানবন্দর থেকে খোকার মরদেহ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে বেলা সোয়া ১১টায় দ্বিতীয় জানাজার (দেশে প্রথম) আয়োজন করা হয়। জানাজায় বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
সংসদ প্রাঙ্গণ থেকে মুক্তিযোদ্ধা খোকার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয়। সেখানে বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ এ গেরিলাযোদ্ধার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
বিকাল ৩টায় নগর ভবনে তার চতুর্থ জানাজা হয়।
বিএনপির এ নেতার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সন্ধ্যায় রাজধানীর ধূপখোলা মাঠে তার শেষ জানাজা শেষে তাকে জুরাইন কবরস্থানে তার মায়ের পাশে দাফন করা হবে।