উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) তাকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভোটের লড়াইয়ে তার ফিরে আসায় চিন্তা বেড়ে গেছে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী শিবিরে।
আরও পড়ুন: একতরফা নির্বাচন বর্জনের আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের
এলাকার ভোটাররা বলছেন, গত বছর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দারা।
এছাড়া বাছাইতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির প্রার্থিতা বাতিল হলে নির্ভার ছিলেন সালাম মুর্শেদী। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ে দারা ভোটের মাঠে ফেরায় জয় পেতে নতুন ছক কষতে হচ্ছে মুর্শেদী সমর্থকদের।
রূপসা, তেরখাদা ও দীঘলিয়া উপজেলা নিয়ে খুলনা-৪ আসন। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: হয়তো এটা আমার শেষ নির্বাচন: শামীম ওসমান
২০১৮ সালে তিনি মারা গেলে আসনটিতে মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘নবাগত’ ব্যবসাযী ও বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি এবারও নৌকার টিকিট পেয়েছেন।
এছাড়া নির্বাচনী এলাকাসহ খুলনার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল সুজার।
জানা গেছে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সুজার কিছু অনুসারী সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে যোগ দেন। তিনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকায় দলের মধ্যে কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি হয়।
তাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে আওয়ামী লীগের অন্য অংশের নেতা-কর্মীর। এখন তারা নানা ভাগে বিভক্ত। এরই জেরে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ১৮ নেতা আবেদন করেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করুন: প্রার্থীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
সালাম মুর্শেদীকে আওয়ামী লীগ বেছে নিলেও ১৪ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাই ও আপিল শেষে ১০ জন প্রতীক পেয়েছেন।
দারা ফিরে আসায় লড়াই হবে ১১ জনের মধ্যে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী জানান, গত পাঁচ বছরে নানা কারণে সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীর। এতদিন তারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর সন্ধানে ছিলেন। দারা নিশ্চিতভাবে এসব নেতার সমর্থন পাবেন। প্রয়াত ভাই সুজার অনুসারীদের জনপ্রিয়তাও তার পক্ষে থাকবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন সাবেক নেতা জানান, ভোটের মাঠে দারা দারুণ কৌশলী। ২০২২ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: যুক্তফ্রন্ট গঠন করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা সৈয়দ ইব্রাহিমের
ওই নির্বাচনে শেখ হারুন ৫০৬ ও দারা পান ৪০৩ ভোট। নির্বাচনে শেখ হারুনের পক্ষে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতারা মাঠে সক্রিয় ছিলেন; বিপরীতে দারার জন্য তেমন কাউকে দেখা যায়নি। সংসদ নির্বাচনে এবার দারা বড় চমক দেখাতে পারেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
জানতে চাইলে মোর্ত্তজা রশিদী দারা বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ের কপি নিয়ে বুধবার খুলনায় ফিরব। আশা করছি, প্রতীক নিয়ে ওই দিনই প্রচারে বের হতে পারব। আমি সব সময় খুলনার সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকি। তারা যখন খুশি ডাকলেই আমাকে কাছে পায়। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।’
এ ব্যাপারে সালাম মুর্শেদীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি।
আরও পড়ুন: যাত্রাবাড়ীতে জামায়াতের মানববন্ধন ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ
তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীকে আমি ছোট করে দেখছি না। আমার বিশ্বাস, রূপসা, তেরখাদা ও দীঘলিয়ার মানুষ নৌকার বিপক্ষে যাবে না। গত পাঁচ বছরে এলাকায় যত উন্নয়ন হয়েছে, স্বাধীনতার পর এত উন্নয়ন হয়নি।’
প্রসঙ্গত, খুলনা-৪ আসনে এবার মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৩ জন। তিনটি উপজেলার ১৩৩টি কেন্দ্রের ৮০৫টি বুথে ভোটাররা ভোট দেবেন।
আসনটির অন্যান্য প্রার্থী হলেন-
জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ (লাঙ্গল), বিএনএমের এসএম আজমল হোসেন (নোঙর), এনপিপির মো. মোস্তাফিজুর রহমান (আম), স্বতন্ত্র এমডি এহসানুল হক (সোফা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা (ডাব), স্বতন্ত্র জুয়েল রানা (ট্রাক), রেজভি আলম (ঈগল), ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দিন খান (মিনার) এবং তৃণমূল বিএনপির মো. হাবিবুর রহমান (সোনালি আঁশ)।
আরও পড়ুন: মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা প্রতিরোধে রাষ্ট্রসমূহ বাধ্য: জাতিসংঘ কমিটি