দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একাত্তরের ৭ মার্চ ও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন তা সঠিক নয়।’
এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘আজকে একটি পত্রিকায় ছাপিয়েছে ১৯৭১ সালের ৯ মার্চে মাওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানে ইয়াহিয়াকে আর কাল বিলম্ব না করে স্বাধীনতা দিয়ে দিতে বলেছেন। একদিনে, একজনের ভাষণে স্বাধীনতা আসেনি-এই কথাটাই আমরা বার বার বলতে চেয়েছি। আমাদের সেই বক্তব্যের পরে সরকার প্রধান ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক কথা বলেছেন যেটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।’
ফখরুল বলেন, ‘কেনো এই মিথ্যাচার? এর কারণটা কি? একটাই কারণ এখানে শুধুমাত্র তাদের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্যকে চরিতার্থ করতে চায়, তাদের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে, একজন মাত্র ব্যক্তি তার একক ঘোষণায়, তার একক কথায় দেশ মুহূর্তের মধ্যে স্বাধীন হয়ে গেছে।’
এর আগে সোমবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ৫০ বছর পূর্তিতে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতারা ঐতিহাসিক ভাষণের সারমর্ম বুঝতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারণ তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে বহু বাঙালিকে হত্যা করেছিল।
‘তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা শুরু করেছিলেন, (পাকিস্তানি) সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র মুক্ত করতে গিয়েছিলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করেছিলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। সুতরাং, এটি খুব স্বাভাবিক যে সেই দলের নেতারা এই ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা পাবেন না এবং সারমর্ম বুঝতে পারবেন না। অবাক হওয়ার বা আলোচনা করার মতো কিছুই নেই,’ তিনি বলেন।
আরও পড়ুন: ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য: বিএনপি নেতাদের কড়া ভাষায় জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৯ মাস কি কষ্ট করে, লড়াই করে যুদ্ধ করেছে, এক কোটির উপরে মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে চলে গেছে বাড়ি-ঘর সব কিছু ছেড়ে। এখানে যারা ছিলেন প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর কথা চিন্তা করেছেন, তুলে নিয়ে গেছে পাকিস্তানি বাহিনীরা, ফিরে আসেনি। এখানে কত মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন-সেসব কথা উচ্চারণ কিন্তু হয় না। তাদের কথা কেউ বলে না।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনি যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন তাহলে কি যুদ্ধ শুরু হত? হত না। উনার স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবং যুদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘উই রিভোল্ট’ এই কথার মধ্য দিয়ে এবং প্রবাসী সরকার গঠন হওয়ার অনেক আগেই হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়াতে জিয়াউর রহমান সাহেব, আমাদের এমএজি ওসমানীসহ সেক্টর কমান্ডাররা সবাই বসে বৈঠক করে ন্যাশনাল কমান্ড ফর লিবারেশন ওয়ার তারা তৈরি করে ফেলেছেন। সেটা ৪ঠা এপ্রিল।’
‘ওখানে (তেলিয়াপাড়া) গেলে আপনারা দেখতে পারবেন। আপনাদের প্রত্যেকের উচিত সেটা দেখা। আমাদের সেনা নায়করা যারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন তারা কিভাবে একত্রিত হয়ে বসে তাদের কর্মসূচি প্রস্তুত করেছেন এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই ঘোষণা করেছেন,’ বলেন তিনি।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ৯ মার্চ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা সেদিন (২৫ ও ২৬ মার্চ) চট্টগ্রামে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছিল তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী। যারা গুলি চালিয়েছিল তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমানও ছিলেন। পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান সেদিন যারা ব্যারিকেড দিয়েছিল তাদের অনেককে গুলি করে হত্যা করেন,’ বলেন তিনি।
চট্টগ্রামের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ঘটনা জানেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমান ২৫ ও ২৬ মার্চ দুদিন ধরে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে কোনো একজন বললেন যে, ২৫/২৬ মার্চ …। এটা হাস্যকর, এটা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়। এটা কেউ বিশ্বাস করবেন না এজন্য যে, দেখা যায় যে, উনি এমন সমস্ত কথা বলেন, যার ঐতিহাসিক প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেন না।’
‘স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা কোনো নেতাকে ছোট করার জন্য নয় বা কাউকে বড় করার জন্য নয়, আমরা আমাদের স্বাধীনতাতে যার যার যে অবদান আছে, সেই অবদানকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। আজকে সেজন্য আপনাদের (ক্ষমতাসীন সরকার) শরীরে গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। আপনারা বিভিন্ন রকমের অসংলগ্ন কথা-বার্তা বলছেন, অপ্রকৃতিস্থ কথা-বার্তা বলছেন যেগুলোর সাথে সত্যের কোনো চিহ্নমাত্র নেই। সত্য একটাই এদেশের সাধারণ মানুষ, কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষ তারা পূর্ব পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন, যুদ্ধ করেছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবের যুদ্ধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে,’ বলেন বিএনপির এই নেতা।
আওয়ামী লীগের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আপনাদের অবদান আছে। অবশ্যই বিরাট বিরাট অবদান আছে। ১৯৭১ সালে আপনাদের যে অবদান সেই অবদান কেউ কোনোদিন আমরা অস্বীকার করি না।’
‘একই সাথে আপনারা যখন মূল নায়কের অবদানটাকে অস্বীকার করেন সেটাকেও আমরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারি না। আমি আগেও বলেছি, শহীদ জিয়ার খেতাব তুলে নেবেন। নিক। কে খেতাব পেল কি পেলে না তাতে কিছু আসে যায় না শহীদ জিয়ার। তিনি এদেশের মানুষের অন্তরে রয়েছেন।’
স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সেদিন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের একটি সরকারি প্রোগ্রামে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘৭ মার্চের ঘোষণাই স্বাধীনতার ঘোষণা। আর গতকাল (সোমবার) তিনি আরেকটি তথ্য দিয়েছেন যে, জিয়াউর রহমান ২৫ ও ২৬ মার্চ মানুষ হত্যা করেছে। ইতিহাস যে কি পরিমানে বিকৃত বা নিজের খেয়াল মতো বলা যায়, সরকারে আছে যা ইচ্ছা বলা যায়।’
তিনি বলেন, ‘২৬ মার্চ সকালে তিনি (জিয়াউর রহমান) ছিলেন পটিয়ার একটি পাহাড়ে, ক্যাম্প করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করার জন্য। তারপরে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে প্রথমে তিনি নিজের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন এবং ২৭ মার্চ সকালে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এটা তো ইতিহাস। জিয়াউর রহমান যদি জনগণের কাছে বন্দি থাকেন তাহলে এসব কাজ করলেন কি করে? আজকে দুঃখজনক, ৫০ বছর পরে আমাদেরকে এই ধরনের (বিকৃত) ইতিহাস শুনতে হচ্ছে।’